আবেগের বশে কোনও কাজ না করাই ভালো। দাম্পত্য জীবনে বনিবনার অভাবে সংসারে অশান্তি বাড়বে। কর্মে ... বিশদ
প্রতিদিন পরিবেশ দিবস হওয়া উচিত
পরিবেশ আর মানুষ একে অপরের পরিপূরক। আমরা এই সুন্দর জীবনযাপন করছি শুধুমাত্র প্রকৃতির জন্য। কিন্তু মানবসভ্যতা বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রতি মুহূর্তে এই প্রকৃতিকে কলুষিত করে চলেছি। তাই পরিবেশের উন্নয়ন না ঘটালে প্রকৃতির সঙ্গে বিলুপ্ত হবে মানবসভ্যতা।
আমরাই নির্বিচারে ধ্বংস করে চলেছি গাছপালা, পশুপাখি। এতে বায়ুতে কমছে অক্সিজেনের পরিমাণ। দিন দিন বেড়ে চলেছে কার্বন-ডাই-অক্সাইড। যার ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য। দেখা দিচ্ছে বিশ্ব উষ্ণায়ন। আর বিজ্ঞানীরা মনে করছেন এই ধরনের ঘটনা বেশি দিন চলতে থাকলে দেখা দেবে ভয়াবহ বিপদ। কয়েক দশকের মধ্যে সমুদ্র-উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলি মিলিয়ে যাবে জলের তলায়। কোথাও হবে প্রবল বৃষ্টি, খরা বা ঘূর্ণিঝড়। তাই পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। শুধুমাত্র ৫ জুন নয়। প্রতিদিন হওয়া উচিত পরিবেশ দিবস। এই পরিবেশ নিয়ে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান, পোস্টার প্রদর্শনী ও লেখালেখি বেশি করে করা দরকার। আমি নিজে পরিবেশ নিয়ে এইরকম কাজ করি যাদবপুর রেলওয়ে স্টেশনে। প্রচুর মানুষ আমাদের দেওয়াল পত্রিকা নিয়মিত পড়েন। আগামী দিনেও পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে চাই।
রঞ্জন বেরা
নবম শ্রেণী, হিন্দু স্কুল
সবাইকে এগিয়ে অাসতে হবে
আমরা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি গরমে ক্লান্ত। হাঁসফাঁস করছি গরমে। তখন কিন্তু অপেক্ষা করছি একটু গাছের হাওয়া বা বৃষ্টির। আর সেই সময় প্রকৃতির নিষ্ঠুর আচরণে মনে পড়ছে রবিঠাকুরের বিখ্যাত উক্তিটি। ‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর/ লও যত লৌহ কাষ্ঠ ও প্রস্তর।’
দূষণের নাগপাশে মানুষ আজ জর্জরিত। বিজ্ঞানের অভাবনীয় বিকাশে তৈরি হয়েছে বহু কল-কারখানা। তার বর্জ্য পদার্থ, বিষাক্ত ধোঁয়া, মানুষের অসংযমী জীবনযাপনের ফলে জল, বায়ু, মাটি আজ দূষিত। সেই বিষাক্ত খাবার, জল ইত্যাদি খেয়ে মানুষের হচ্ছে কত রকমের রোগ। এ সব কিছু থেকে রক্ষা পাবার উপায় পরিবেশকে রক্ষা করা। শুধু বইয়ের পাতায় নয়। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ছাত্র ও যুব সম্প্রদায়ের এগিয়ে আসা দরকার। নিয়মিত পরিবেশ রক্ষার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা।
ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, হাসপাতালে, বৃক্ষ রোপণ করা। সেই গাছগুলির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা। রাস্তার পাশে আরও গাছ লাগানো। তাদের নিয়ে টিম ওয়ার্ক করে কাজ করা। পরিবেশ রক্ষার্থে দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। অবশ্যই ছাত্রাবস্থাতেই।
উন্মেষ প্রামাণিক, দশম শ্রেণী,
উত্তরপাড়া রাষ্ট্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়
বিপন্ন জীব বৈচিত্র্য
বিশ্ব পরিবেশ দিবস। সারা বছর পালিত হয় পৃথিবী জুড়ে। ১৯১৪ সাল থেকে ইউনাইটেড নেশনস (United Nations)-এর উদ্যোগে। এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য হল পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সার্বিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। ২০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের ১৪৩টি দেশে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে এই দিনটি পালন করা হয়। তবে এই দিনটির গুরুত্ব আরও বেশি করে অনুভব করা দরকার প্রতিদিন। বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ওজন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত, মরুদেশের বরফ গলছে। বিভিন্ন অঞ্চলে জলবায়ুর বিপজ্জনক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। বিপন্ন জীব বৈচিত্র্য। এই সমস্ত কারণে মানুষের মারণরোগ হচ্ছে।
পৃথিবীর ভারসাম্যগত পরিবেশ রক্ষা করতে হলে আমাদের কিছু ছোট্ট স্বার্থ ত্যাগ করতে হবে। বদলাতে হবে নিজের অভ্যেস। এ বিষয়ে নতুন প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীরা হয়ে উঠতে পারে মূল প্রভাবক বা Change Agent। তাই আমি সক্রিয় ভূমিকা নিতে চাই দুটি ক্ষেত্রে। ১. বিদ্যালয় পরিসরে। ২. নিজের বাড়ি ও তার আশপাশে।
বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কাজ করতে চাই সম্মিলিতভাবে। শ্রেণীকক্ষ ও তার আশপাশ পরিষ্কার রাখা।
২০১৯ সালে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের মূল ভাবনা ‘বায়ুদূষণ ও তার বিপদ’। তাই ব্যানার, প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা। বিদ্যালয়ের প্রাচীরে পরিবেশভাবনা কেন্দ্র করে কিছু প্রাচীর চিত্র অঙ্কন করা। নিয়মিত টিভি ও সংবাদপত্রের প্রচার করা এবং আইন করে মানুষকে বাধ্য করা বাঁচাও অভিযানে।
কিঞ্জল চৌধুরী, নবম শ্রেণী,
উত্তরপাড়া রাষ্ট্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়
আশ্রয় নিই প্রকৃতির কোলে
বিশ্ব উষ্ণায়ন আজ সারা পৃথিবীর সমস্যা। আর এই সমস্যার হাত ধরেই প্রয়োজন সমাধান খোঁজা। অন্যের পাশাপাশি নিজেও এর সম্পর্কে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া। নিজে এমন কোনও কাজ করব না যাতে অপ্রয়োজনে এই প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট হয়। এই সম্পদ অমূল্য। হাতে একটু পয়সা হলেও আমরা ঘুরতে যাই। সে পুজোর ছুটিতে হোক বা গ্রীষ্মের গরমে। আশ্রয় নিই প্রকৃতির কোলে। নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হই। অথচ তলিয়ে চিন্তা করি না কীভাবে রক্ষা করব পরিবেশকে? হোটেল, রেস্তোরাঁয়, পথে-ঘাটে কল খুলে রাখি। বন্ধ করি না ক্লাস রুমের ফ্যান, লাইট। যত্রতত্র নোংরা ফেলি যাতে নিকাশি ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। গঙ্গার ঘাটে গিয়ে ফেলি ব্যাগ ভর্তি প্ল্যাস্টিকসহ পুজোর ফুল। ছোট থেকেই আমাদের পরিবেশ বাঁচানোর শিক্ষা দেওয়া হয় না। যেটা থাকে পুঁথিগত বিদ্যায়। দশম শ্রেণীর ছাত্রী হিসেবে আমার আবেদন, এই কর্মযজ্ঞে আমাদের শামিল করা হোক। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলি— ‘প্রাণপণে সরাবো জঞ্জাল। এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’
মৌবনী দাস, দশম শ্রেণী,
হোলি চাইল্ড ইনস্টিটিউট
পরিবেশ দিবসে স্কুল
খোলা থাকুক
জন্ম মুহূর্ত থেকে পরিবেশের কাছে আমাদের অনেক ঋণ। গাছপালা ছাড়া মানুষের জীবনে বাঁচা অসম্ভব। এখন আমরা দেখি, সব সময়ই গরম। প্রতিটা ঋতুকে আলাদা করে অনুভব করা বেশ কঠিন। শীত বা বৃষ্টি খুব অল্প ক’দিনের। প্রকৃতির এই খামখেয়ালীপনার কারণ হল পরিবেশ। প্রতি মুহূর্তে তার কাছ থেকে শুধু নিচ্ছি। তার ভারসাম্য রক্ষার্থে শুধুমাত্র ইট, কাঠ পাথরের দেওয়াল তুলছি। তাই পরিবেশ নিয়ে ছাত্রসমাজও নির্বিকার। যত্রতত্র প্ল্যাস্টিক, ক্যারিব্যাগ ফেলছি। তাতে নদীনালার জল আটকে যাচ্ছে। মশার উপদ্রবে নানান রোগ হচ্ছে। সমুদ্র, পাহাড়, বরফাচ্ছাদিত পর্বতমালাও রেহাই পাচ্ছে না প্ল্যাস্টিক থেকে। অথচ আইন করে বন্ধ করা হচ্ছে না। পরিবেশ দিবস আটকে আছে সেই ৫ জুনে। তাই আমি চাই পরিবেশ দিবসে আমাদের স্কুল খোলা হোক। সেখানে আয়োজিত হোক সেমিনার, ক্যুইজ, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা। প্রোজেক্টারের মাধ্যমে বিশ্ব উষ্ণায়নের মতো স্লাইড শো’র আয়োজন করা হোক। প্রয়োজনে আইন করে প্রতিটি বাড়ির টবে পাঁচটি গাছ লাগানোর শিক্ষা দেওয়া হোক। প্রমাণ হিসেবে চাওয়া হোক সেই বাড়ির গাছের ছবি। তবে এক্ষেত্রে আমি নিজে বাগান করি। আমাদের সল্টলেকের বাড়িতে নিজেদের বাগান আছে। আমি নিয়মিত গাছের পরিচর্যা করি। তাই একজন ছাত্র হিসেবে এই সমাজের কাছে আবেদন— গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান।
অর্ঘ্যদীপ দত্ত, অষ্টম শ্রেণী, হিন্দু স্কুল
বারো মাসই গাছ লাগাই
পরিবেশ সুন্দর রাখবে। মা ছোট থেকে এই কথাটা সব সময় বলতেন। আমাদের বাড়িতে সুন্দর একটি বাগান আছে। ওই বাগানে কত রঙের ফুল ফোটে। বেশ কিছু বড় গাছ আছে। মা, বাবা সবাই বাগানের যত্ন করে। এখন ওদের দেখাদেখি আমিও বাগানের পাতা পরিষ্কার করি। বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখি। কোনও খোলা পাত্রে জল জমতে দিই না। বারো মাসই গাছ লাগাই। একটু জল, সার দিয়ে গাছের পরিচর্যা করি। গাছ ছাড়া প্রাণের অস্তিত্ব অসম্ভব। তাই শুধু একদিন নয়। প্রতিদিনই গাছ লাগান। সবাই ভাবুন পরবর্তী প্রজন্মের কথা। আমি প্রতিদিনই পরিবেশ দিবস পালন করি।
শুভস্মিতা কর, ষষ্ঠ শ্রেণী
বেথুন কলেজিয়েট স্কুল
গঙ্গাদূষণ বন্ধ করতে হবে
মা যেমন শিশুকে আঁকড়ে ধরে, তেমনই পরিবেশের কোলেই মানুষ বড় হয়। জন্মের পর থেকেই এই শস্য-শ্যামলা প্রকৃতির কোলেই আসি। অথচ একটু বড় হতে না হতেই সেই প্রকৃতির ধ্বংসলীলায় মত্ত হই। গাছ কাটি, যত্রতত্র নোংরা ফেলি। পুকুর বা জলাশয়গুলি নিজের বাড়ির নোংরা, আবর্জনায় ভরিয়ে তুলি। অথচ এই পুকুর ও জলাশয়ের জীববৈচিত্র্যর জন্যই আমরা বুক ভরে নিশ্বাস নিই। অক্সিজেন ছাড়া আমরা এক মুহূর্ত বাঁচতে পারি না। অতএব সেই পরিবেশ সুন্দর রাখার কাজটা করতে হবে। বাড়ির টবে গাছ লাগাই। অন্যদের উৎসাহ দিই অন্তত একটা তুলসী গাছ লাগানোর। কারণ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে জলের অপচয় বন্ধ করতে হবে। প্ল্যাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। নদীনালা পরিষ্কার ও গঙ্গা দূষণ বন্ধ করতে হবে। আর এ জন্য আমরা স্কুলের তরফ থেকে নানারকম প্রচার করে থাকি। পুজোর আগে ও বর্ষাকালে সব বন্ধু মিলে নিজেদের পাড়া পরিষ্কার করি।
অনন্যা হালদার, নবম শ্রেণী
বেথুন কলেজিয়েট স্কুল
আমাদের যত বেশি সম্ভব
বৃক্ষরোপণ করতে হবে
হুমকির মুখে উদ্ভিদকুল
উজাড় বনভূমি
উষ্ণ হচ্ছে পরিবেশ
নষ্ট হচ্ছে জমি।
সত্যিই পরিবেশ আজ অগ্নিগর্ভ। বায়ুদূষণ, জলদূষণ, শব্দদূষণে আজ আমরা দিশেহারা। সমস্ত রকমের দূষণের হাত থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে উদ্ভিদ। সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার সময় কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে। এবং অক্সিজেন বর্জন করে। তাই আমাদের বেশি করে গাছ লাগানো দরকার।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে গাছটা লাগাব কোথায়? অনেকেই ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকেন। তাঁদের সবাইকে বলি— অন্ততপক্ষে ঘরের জানালার পাশে টবে ৫টা তুলসী গাছ লাগান। ফলমূল, শাক-সব্জির বীজ কাটার সময় যত্ন করে রেখে দিন। যখন আপনি বেড়াতে যাবেন বা ফাঁকা জায়গা দেখলে ছড়িয়ে দিন। প্রকৃতির খেয়ালে আপন মনেই ওখানে গাছ হবে। বনসৃজনে বেশি করে জোর দেওয়া দরকার। পরিবেশ বাঁচাতে প্রতিদিন বৃক্ষরোপণ করা দরকার। আমি নিজে প্রকৃতি প্রেমিক। এভাবেই গাছ লাগাই। এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার। গাছ লাগাব, প্রাণ বাঁচাব।
সৃজিতা শেঠ, দশম শ্রেণী
হোলি চাইল্ড ইনস্টিটিউট
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে