সন্তানের কর্ম সাফল্যে মানসিক প্রফুল্লতা ও সাংসারিক সুখ বৃদ্ধি। আয়ের ক্ষেত্রটি শুভ। সামাজিক কর্মে সাফল্য ... বিশদ
ইট, কাঠ, পাথরের এই ঐতিহাসিক স্থাপত্যের কীর্তি অতুলনীয়। অতীতে ব্রিটিশ আক্রমণ এবং আরও নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে আজও এই দুর্গ দাঁড়িয়ে আছে সময়ের সঙ্গে লড়াই করে।
ইতিহাস বলে, বাজিরাওয়ের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে বালাজি বাজিরাও ওরফে নানাসাহেব মারাঠা সাম্রাজ্যের দায়িত্ব নেন। নানাসাহেবের ছিল তিন পুত্রসন্তান। তাঁরা হলেন— মাধব রাও, বিশ্বাস রাও ও নারায়ণ রাও। ১৭৬১ সালে তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধে পেশোয়া বাজিরাও পরাস্ত হন। এই যুদ্ধে নিহত হন তাঁর ছেলে বিশ্বাস রাও ও ভাইপো সদাশিব রাও ভাউ। গোটা ঘটনার অভিঘাতে ভেঙে পড়েন এই মারাঠা পেশোয়া। যুদ্ধে পরাজয়ের মাস পাঁচেকের মধ্যেই হতদ্যোম নানাসাহেব মারা যান। এরপর তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র মাধব রাও সিংহাসন লাভ করেন।
ভাইয়ের অকালমৃত্যুতে ভেঙে পড়েন মাধব রাও-ও। মারাঠা সাম্রাজ্যের তখন করুণ অবস্থা। ১৭৭২ সালে মারা যান মাধব রাও। এরপর পেশোয়া হন নারায়ণ রাও। তাঁর বয়স তখন মাত্র ১৬। কিশোর নারায়ণকেই মারাঠা সাম্রাজ্যের গুরু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি নিতান্ত অল্পবয়সি হওয়ায় তাঁর সঙ্গে রাজ্যচালনার সাহায্যে অভিভাবক হিসেবে ছিলেন ধুরন্ধর রঘুনাথ রাও।
সালটা ১৭৭৩। তখন পঞ্চম পেশোয়া নারায়ণ রাও তাঁর বিরুদ্ধে সংগঠিত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। তিনি মারাঠা সাম্রাজ্যের উপর রঘুনাথ রাওয়ের অন্যায় নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করে তাঁকে গৃহবন্দি করেন। কিন্তু নারায়ণ রাও এর প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর মধ্যে ছিল গার্ডি নামক শিকারি উপজাতি। সেই বৈরিতার সুযোগ নেন রঘুনাথ রাওয়ের পত্নী আনন্দী বাঈ। তিনি স্বামী রঘুনাথকে রাওকে দিয়ে গার্ডি প্রধানের কাছে চিঠি লেখেন। উদ্দেশ্য পেশোয়া নারায়ণ রাওকে বন্দি করা। কিন্তু চিঠি পাঠানোর আগে আনন্দী বাঈ চিঠিতে একটি শব্দ বদলে দেন। তাতে চিঠির অর্থ পরিবর্তন হয়ে সেটি নারায়ণ রাওকে হত্যার বার্তা হয়ে ওঠে।
চিঠি পেয়ে উপজাতি প্রধান সেই মতোই কাজ করেন। প্রধানের নির্দেশে হত্যাকারীরা হতচকিত নারায়ণ রাওকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তাঁর কক্ষে হত্যা করে। নারায়ণ রাও বাঁচার চেষ্টা করলেও তা বৃথা যায়। তাঁর মৃতদেহ খণ্ড খণ্ড করে কেটে কাছের নদীতে ফেলে দেয় তারা।
পুনের স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস, আজও পূর্ণিমার রাতে, তরুণ পেশোয়া নারায়ণ রাওয়ের হৃদয় বিদারক কান্না শোনা যায় এই কেল্লায়। তাছাড়া বহু আগে দুর্গে ঘটা অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারানোদের আত্মাও এই স্থানে
বিচরণ করে।
স্পষ্টতই, সেই সমস্ত কারণেই সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার পর এই দুর্গে প্রবেশ নিষেধ। তবে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ঊর্ধ্বে নিঃসন্দেহে এই দুর্গ আর দুর্গকেন্দ্রিক কাহিনি চিত্তাকর্ষক। তাই শনিওয়ার ওয়াড়া দুর্গ আজও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।