সন্তানের কর্ম সাফল্যে মানসিক প্রফুল্লতা ও সাংসারিক সুখ বৃদ্ধি। আয়ের ক্ষেত্রটি শুভ। সামাজিক কর্মে সাফল্য ... বিশদ
শোনা যায়, বহু বছর আগে একদিন মধ্যরাতে এখানে খুন হন স্টেশন মাস্টার ও তাঁর স্ত্রী। পরে স্টেশনের কাছে এক কুয়োর মধ্যে থেকে উদ্ধার করা হয় তাঁদের মৃতদেহ। সেই থেকেই নাকি অশরীরী উৎপাতের শুরু। ওই ঘটনার পরই রাতারাতি পালিয়ে যান সব রেলকর্মী। বন্ধ হয়ে যায় এই স্টেশনে ট্রেন থামা। হানাবাড়ির মতো পড়ে থাকে শুধু পাকা স্টেশন বিল্ডিংটা। যদিও অনেকের দাবি, গোটা ঘটনাটি নিছক কল্পকাহিনি।
১৯৬০ সালে কোটশিলা-মুরি শাখায় বেগুনকোদর স্টেশনটি তৈরি হয়। ১৯৬৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ছিল একই হাল। তবে, এই সময়সীমায় বেগুনকোদর স্টেশন চালু করার কথা যে একেবারেই ওঠেনি, তা নয়! যাঁরা ভৌতিক তত্ত্ব মানতে নারাজ তাঁদের যুক্তি, ভূতের ভয় বাজে কথা। গ্রাম থেকে অনেক দূরে এই স্টেশন। সেজন্য কেউ ওখানে কাজ করতে চাইত না। তাই এই ভৌতিক উপদ্রবের রটনা! আর গুরুত্বহীন স্টেশন হওয়ায় কোনও বড় ট্রেনও বেগুনকোদরে দাঁড়াত না। তবে ২০১০ সালে আবার খোলে বেগুনকোদর স্টেশন। কিন্তু তার আগেই যে ভূতুড়ে তকমা লেগে গিয়েছে এই স্টেশনের গায়ে। ফলে ভূতুড়ে স্টেশনের দুর্নামটা এখনও যায়নি। পুরুলিয়ায় ঘুরতে–আসা পর্যটকরা একবার হলেও এই স্টেশনে আসেন। স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছবিও তোলেন। ভূতের ভয়ে পালিয়েও যান সন্ধে নামার আগেই।
বেগুনকোদর স্টেশনে ভূতের উপদ্রবের কোনও সত্যতা নেই বলে জানান পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের যুক্তিবাদী সদস্যরা। এমনকী এই ‘ভূতুড়ে’ স্টেশনে গিয়ে রাত কাটিয়ে আসেন যুক্তিবাদীদের দল। তারা জানার চেষ্টা করেন বেগুনকোদরের এই ভূতুড়ে তকমার কারণ। টর্চ, ডিজিটাল কম্পাস, ক্যামেরা হাতিয়ার করে তাঁরা এই অভিযান চালান। যুক্তিবাদী দলের নেতৃত্বে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক। তিনি বলেছিলেন যে, কোনও আধিভৌতিক ঘটনা তাঁদের নজরে আসেনি। কোনও মহিলা বা স্টেশন মাস্টারের ভূতও তাঁরা দেখতে পাননি। তবে সেই রাতেই স্টেশন ভবনের পিছন থেকে বিকট শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে যুক্তিবাদী দলের চোখে পড়ে চার-পাঁচজন লোক। টর্চের আলো দেখতে পেয়েই পিঠটান দেন তারা। কিছু দূর গিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে যান ওই ব্যক্তিরা। ধারণা করা হয় কিছু অসৎ লোকের উদ্দেশ্য এই স্টেশনটি সম্বন্ধে ভৌতিক কৌতূহল যাতে বজায় থাকে। মনে করা হয়, অনেকেই আগ্রহী হয়ে এখানে আসতেন। কিন্তু বিকট আওয়াজ করে তাঁদের তাড়িয়ে জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়ার মতলবেই এই চেষ্টা। অনেক চেষ্টাতেও স্টেশন চত্বরে রাখা ডিজিটাল কম্পাস ও ক্যামেরায় অস্বাভাবিক কিছুই ধরা পড়েনি।
কিন্তু এখনও বেগুনকোদর স্টেশনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি সেভাবে। এখনও স্থানীয়দের মুখে শোনা যায়, রাত নামলে হঠাৎ হঠাৎ এখানে দেখা যায় অদ্ভুত আলো। যত রাত বাড়ে, বাতাসে ভেসে আসে অদ্ভুত সব গন্ধ। মাঝেমধ্যেই নাকি শোনা যায় অশরীরী কণ্ঠস্বর। দিনের আলোতেও বেগুনকোদর মনে ত্রাস সঞ্চার করে স্থানীয় লোকজনের। দিনের বেলাতেও অনেকেই নাকি কানের কাছে মানুষের গলা শুনে চমকে উঠেছেন। চারপাশে তাকিয়ে কাউকেই নাকি দেখা যায়নি। অনেক সময়ে আবার লোকজনের গা ঘেঁষে কোনও অশরীরীর চলে যাওয়া অনুভূত হয়েছে! আচমকা ধাক্কা খেয়ে সচেতন হয়েছেন কেউ কেউ। কিন্তু যাঁর সঙ্গে ধাক্কা লাগল, তাঁর দেখা মেলেনি! এমনই নানা গল্প স্থানীয় লোকজনের মুখে মুখে ফেরে।
সন্ধ্যার পর স্টেশন বিল্ডিংয়ের ত্রিসীমানায় দেখতে পাওয়া যায় না কোনও গ্রামবাসীকে। নেই কোনও রেলের স্থায়ী কর্মী। কোনও গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনকে এই স্টেশনে দাঁড়ও করানো হয় না। ফলে সন্ধের পরে আর কেউ আসেন না এখানে। এখনও একরাশ ভয়, আতঙ্ক নিয়ে সারা দিন ফাঁকা পড়ে থাকে
পুরুলিয়ার বেগুনকোদর স্টেশন। এই ভৌতিক অখ্যাতিই জিইয়ে রেখেছে স্বাভাবিক বেগুনকোদরের অস্বাভাবিক খ্যাতি।