আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সমাগমে আনন্দ বৃদ্ধি। চারুকলা শিল্পে উপার্জনের শুভ সূচনা। উচ্চশিক্ষায় সুযোগ। কর্মক্ষেত্রে অযথা হয়রানি। ... বিশদ
একটা কর্পোরেট অফিসের পাবলিক রিলেশন অফিসার সে। ফলে ডেকোরাম আর দায়বদ্ধতার মাঝে মুক্তি খোঁজে সে নীচে নেমে এই সময়টুকুতে।
তারপর গাড়িতে উঠে বাড়ির দিকে রওনা হয়। বন্ধ কাচের জানলা দিয়ে সে দেখে নিয়নের আলোয় সেজে উঠেছে শহর। অফিস ফেরত যাত্রীদের ভিড় রাস্তা জুড়ে। সবার শরীরেই ক্লান্তির ছাপ। কোনও মতে দেহটাকে ধরে রেখেছে বাড়ি ফেরার জন্য। সেখানে তার জন্য কেউ না কেউ অপেক্ষা করে আছে। এই অপেক্ষাগুলোর জন্যেই বাড়ি ফেরা। নইলে এক দেওয়াল ছেড়ে আরেক দেওয়ালে যাওয়া না যাওয়া সমান।
এসব ভাবতে ভাবতেই মোবাইল বেজে উঠল।
‘হ্যালো, বলো সোনা।’
‘মা, তুমি কতদূর? কখন ফিরবে?’ ফোনের ওদিক থেকে অর্ণার গলা ভেসে এল।
‘এই তো ফিরছি। রাস্তায়।’
‘তাড়াতাড়ি এসো।’
‘আসছি তো। কী হয়েছে? আম্মা ঠিক আছে?’ পর্ণা তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করল। বৃদ্ধা শাশুড়িকে নিয়ে তার দুশ্চিন্তার শেষ নেই। সব সময় মনে হয় কোনও অঘটন ঘটেনি তো!
‘না, মা। চলে এসো।’ বলে লাইন কেটে দিল অর্ণা।
মোবাইলটা হাতে নিয়ে পর্ণার মনে হল মেয়েটার গলার স্বরটা কেমন কান্না ভেজা শোনাল। কিছু কি হল? আজকাল সে অফিসে থাকাকালীন খুব একটা ফোন করে না অর্ণাকে। মেয়েটা বিরক্ত হয়।
—মা, আমি এখন যথেষ্ট বড় হয়ে গেছি। নিজের খিদে পেলে খেয়ে নেব। আমার ওপর চব্বিশ ঘণ্টা মনিটরিং করা বন্ধ করো।
—তুমি আমার কাছে কখনওই বড় হবে না।
—তাহলে এক কাজ করো, নিজের কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে এবার থেকে বাড়িতেই বসে থাকো। আর কে, কী করছে লক্ষ করো।
পর্ণা চুপ করে যায়। মনে হয় তার আর তার মায়ের মধ্যেও কি এমন শীতল সম্পর্ক ছিল? বিয়ের আগের দিন পর্যন্ত মা খাইয়ে না দিলে তার পেট ভরত না। শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি এসে সে সিঁড়ি থেকেই চিৎকার জুড়ত— মা ভীষণ খিদে পেয়েছে। অনেক দিন খাওয়া হয়নি ঠিকমতো। খাইয়ে দাও।
শুধু কী তাই! প্রতিটি কথা খুঁটিনাটি বলে তবে যেন এতদিনের জমে থাকা স্রোতটাকে মুক্তি দিতে পারত।
অর্ণাও তার কাছে খেতে চায়। তবে মোবাইলে গেম খেলতে খেলতে খিদে পেলে তখনই একমাত্র সে বলে— মা খাইয়ে দেবে?
তার মন যে খাওয়ার দিকে এক ফোঁটাও নেই বুঝতে অসুবিধা হয় না পর্ণার। তবু নাড়ির টান। চুপ করে খাইয়ে দেয়, বুঝতে পারে মেয়েটা খাওয়ার দিকে মোটেই যত্ন নেয় না। কিন্তু এ কথা বললেই মেয়েটা আবার উত্তেজিত হয়ে পড়ে— আমাকে খাইয়ে খাইয়ে মোটা করে দিলেই তোমার শান্তি, তাই তো!
পর্ণা জানে কথায় কথা বাড়ে। তাই নীরব থাকে। মনে মনে বলে, যেদিন মা হবি, সেদিন বুঝতে পারবি মায়ের দুশ্চিন্তা।
বাচ্চারা খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যায়। ওদের একটা নিজস্ব জগৎ গড়ে ওঠে। সেখানে বারবার যদি বড়রা অধিকারবোধ প্রয়োগ করেন, সবকিছু চুপ করে একতরফা মেনে নিতে বাধ্য করেন, তবে তাদের বেড়ে ওঠার পথে শুধু যে স্বকীয়তা নষ্ট হয় তাই নয়, ব্যক্তিত্বের জায়গাটাও নড়বড়ে হয়ে যায়। কাজেই প্রতিটি পদক্ষেপ চোখে চোখে রাখুন, কিন্তু জোর করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবেন না। মনস্তত্ত্ববিদ ডাঃ দেবাংশুর কথাগুলো পর্ণার মাথায় ঘুরতে থাকে।
অর্ণাকে সে ছোট থেকেই তাই নিজের মতো করেই বাড়তে গিয়েছে। খুব বেশি মাথা ঘামায় না প্রতিদিনের কাজে, পড়াশোনায়, খাওয়ায়।
ছোট থেকে সাধারণ রেজাল্ট করা মেয়েটাই কিন্তু ক্লাস টুয়েলভের ফাইনাল পরীক্ষার আগে সাংঘাতিক সিরিয়াস হয়ে গেল। দিন রাত তার পড়া দেখে পর্ণারই বরং অস্বস্তি হতো।
—তুই এত কী পড়িস সারাদিন ধরে? একটু তো ওঠ। গল্প কর, ঘুরে আয়। না হলে টিভি দেখ। টানা এত পড়লে শেষে গিয়ে দেখবি মাথা কাজ করবে না।
—এ তো মহা ঝামেলা মা। আমি পড়ছি, তাতেও তোমার সমস্যা? ভালো রেজাল্ট না হলে একটাও মনের মতো কলেজে চান্স পাব না। তখন কোথায় পড়ব?
পর্ণা অবাক হয়ে ভাবে মেয়েটা এত বড় কবে হল!
শেষ পর্যন্ত নাইন্টি পার্সেন্ট নম্বর পেয়ে মেয়েটা নামী কলেজে যখন ভর্তি হল তখন পর্ণার বুকটা আনন্দে ভরে উঠল। স্কুলে দেওয়া সংবর্ধনায় অর্ণা তার সাফল্যের কারণ বলতে গিয়ে বলল, আমার মা-বাবা কখনওই আমাকে খালি পড়তে হবে, এই কথাটা বলেননি। রেজাল্ট কেমন হবে, নাম্বার এত পেতেই হবে— এ সব নিয়ে তাদের বিন্দুমাত্র মাথা ব্যথা ছিল না। তাঁরা আমাকে আমার মতো বাড়তে দিয়েছেন। আর তাই আমারও মনে হয়েছে এই স্বাধীনতার অপব্যবহার করা উচিত নয়।
অর্ণার এই কথা শুনে টিচাররাও একই কথা বলেছিলেন অভিভাবকদের উদ্দেশে। বাচ্চাদের ওপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেবেন না। ওদের স্পেস দিন নিজের মতো বড় হওয়ার।
অবশ্য অর্ণা কোনও ক্ষেত্রেই স্বাধীনতার অপব্যবহার করেনি। স্কুলে এমনকী কলেজে উঠেও বন্ধুদের সে দিব্যি বলে দেয়, আমি তো নাইট স্টে করতে পারব না, কিংবা না রে, আজ বেরতে পারব না তোদের সঙ্গে। মা পছন্দ করেন না রাত পর্যন্ত বাইরে থাকায়।
পর্ণাই বরং বিরক্ত হয়ে বলে, তুই এত ঘরকুনো কেন? একটু খেলাধুলো, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা তো দিতে পারিস।
অর্ণা হাসে।—মা আমি ওদের সঙ্গে পাবে গেলে, স্মোক করলে, ডেটিং করলে তোমার ভালো লাগবে শুনতে? তাছাড়া ওরা যে পরিমাণ টাকা একদিনে ওড়ায়, তা আমি সারা মাসেও খরচ করি না।
—কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালো টাকাই দিই।
—হ্যাঁ, তুমি দাও বলেই আমি বেহিসেবি খরচ করতে পারব না মা। বরং যা জমবে তা দিয়ে একদিন ফুটপাতের বাচ্চাগুলোকে কিছু কিনে দিলে আমি বেশি শান্তি পাই মা।
মেয়ের কথা শুনে মনে মনে খুশিই হয় সে। যাক, খুব খারাপ মানুষ করেনি মেয়েকে। সেদিক থেকে কিছুটা স্বস্তি পেলেও মাঝে মাঝে এই মেয়েকেই আবার বুঝে উঠতে পারে না সে। সারাদিন একা থাকে বাড়িতে বয়স্ক ঠাকুমার সঙ্গে। একটা অজানা আতঙ্ক যেন তাকে গ্রাস করে রাখে সবসময়। এই বুঝি আম্মার কিছু হয়ে গেল, এই বোধ হয় এ ঘর থেকে ও ঘর যেতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গেল!
পর্ণা বোঝে অর্ণার এই চিন্তা স্বাভাবিক। জন্ম থেকে এতগুলো বছর সে লেপ্টে আছে আম্মার সঙ্গেই। সে নিজে আর কতটা সময় দিতে পেরেছে তাকে! তাই আম্মার প্রতি এই মনোযোগ তাকেও নিশ্চিন্ত করেছে অনেকটাই।
কিন্তু গত এক বছরে পৃথিবী জুড়ে মহামারীর ধাক্কা যে তার ঘরে না এসেও মেয়েটাকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে, এটা পর্ণা অতটা বুঝতে পারেনি। যেদিন থেকে অর্ণা বন্ধুর ঠাকুমার হঠাৎ করে চলে যাওয়ার কথা শুনেছে, সেদিন থেকেই তার উৎকণ্ঠা চরমে পৌঁছেছে। বাড়ি ফিরেই তাদের স্নান, জামা কাপড় কাচা— এসবের পাশাপাশি আরও নানা নির্দেশ জারি করেছে সে মা-বাবার প্রতি।
এগুলো তারা নিজেরাও মেনে নিয়েছে। কিন্তু মেয়েটা ঘুমতে ভুলে গিয়েছে। সামান্য শব্দ হলেই ছুট্টে গিয়ে দেখে আম্মা ঠিক আছে কি না!
বাথরুমে জল পড়ার শব্দ পেলে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দেরি হলে অস্থির হয়ে ওঠে। —মা, আম্মা বেরচ্ছে না বাথরুম থেকে। কিছু হল না তো! এসো তাড়াতাড়ি।
বাধ্য হয়ে সারারাত প্রায় জেগেই থাকতে হচ্ছে পর্ণাকে। ভোরের দিকে মেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেও তাকে তখন উঠে পড়তে হয় সংসারের কাজ সারার জন্য। এর ফলে অফিসে গিয়েও একটা ক্লান্তি ঘিরে থাকছে সারাক্ষণ।
এসব ভাবনার মাঝে মোবাইলটা আবার বেজে উঠল। ছোট বোন ফোন করছে। হ্যালো, বলতেই বলল— অফিস থেকে বেরলি?
—হ্যাঁ। কেন?
—না, অনেকদিন আসিসনি। মনটা খারাপ করল।
—আর আমার যাওয়া! অফিস থেকে বাড়ি আর বাড়ি থেকে অফিস... তারপর শাশুড়িকে একা রেখে বেরনো প্রায় অসম্ভব।
—তোর একারই শাশুড়ি আছেন। পৃথিবীতে আর কারওর প্রতি কোনও দায় নেই তাই তো তোর। অর্ণাও অনেকদিন আসে না। আমাদেরও তো মন খারাপ হয়!
—ঠিক। কিন্তু সেই একই সমস্যা। আমি বা তোর দাদাভাই না থাকলে আম্মাকে একা রেখে সেও কোথাও যেতে পারে না।
—তোদের কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি। আয়া মাসি রেখেছিস। তাও এত ঢং! আজ নয় অর্ণার অনলাইনে বাড়িতে বসেই ক্লাস চলছে, কলেজ বন্ধ। কিন্তু খুলে গেলে তো বেরতেই হবে।
পর্ণা চুপ করে শোনে। এই কথাগুলো তার মাথাতেও ঘোরে। কিন্তু অর্ণাকে বোঝাতে পারে না।
আরও কিছু কথা শুনিয়ে বোন ফোন কেটে দিল।
পর্ণা মেয়েকে ফোন করে। ওপাশ থেকে একটা ক্ষীণ স্বর ভেসে আসে।
—কী হয়েছে সোনা? কোনও অসুবিধা?
—না মা। আমি কি একটু একাও থাকতে পারি না? সবসময় তোমাদের মতো চলতে হবে? আমার কি কোনও স্পেস থাকবে না এ বাড়িতে? আমার থাকা নিয়ে এত অসুবিধা হলে বল, আমি অন্য কোথাও চলে যাব স্টাডি বা জব নিয়ে।
—কী হয়েছে সেটা তো বল।
—কিছুই হয়নি মা। বাড়ি ফেরো।
পর্ণার একই সঙ্গে রাগ ও চিন্তা জন্মায়। জন্ম দিয়ে যেন মহা ভুল করে ফেলেছে সে। একটা বাচ্চা হওয়ার এটাই সমস্যা। যত রকম মুড পরিবর্তন তাকেই সামলাতে হবে। তাদের ছোটবেলায় এসব মুড সুইং দেখার অবকাশ ছিল না মায়েদের। সংসার, তিনটে বাচ্চা, অফিস সব নিয়ে সময় কোথায় পেত মা এই মন খারাপগুলো দেখার বা শোনার! অবশ্য তাদের কি আদৌ মন খারাপ হতো নাকি এত ঘন ঘন মনের গতিবিধি বদলে যেত!
বাড়ি ঢোকা মাত্র শাশুড়িমা বললেন, ‘অর্ণার আজ কিছু হয়েছে।’
‘কেন মা?’
‘দুপুরে কিছু খায়নি। ঘর বন্ধ করে বসেছিল। মনে হল ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ পেলাম। তুমি কিছুই নজর রাখো না মেয়েটার দিকে। ঘরে গিয়ে শান্ত মাথায় জিজ্ঞেস করো— কী হয়েছে? আমার রীতিমতো ভয় করছিল।’
‘ভয়ের কী হল মা?’ বলে বাথরুমে ঢুকে গেল পর্ণা।
কিন্তু ‘তুমি কিছুই নজর রাখো না মেয়েটার দিকে...’ শব্দগুলো মাথায় ঘুরতে লাগল। যবে থেকে সে অফিসে যাওয়া শুরু করেছে তবে থেকে এই অভিযোগ শুনতে শুনতে সেও ক্লান্ত। স্নান শেষ করে একটু বিরক্তি নিয়েই ঘরে ঢুকল।
অর্ণা কাত করে শুয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে। সে একবার উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করল কী করছে মেয়েটা। একটা সিনেমা দেখছে।
‘কী সিনেমা দেখছিস রে?’
‘১৯১৭।’
‘এটা সিনেমার নাম? নাকি সাল?’
‘মা এটা ইংরেজি ফিল্ম। এখন প্রশ্ন না করে চুপ করো। দেখতে দাও।’
‘একটা হামি—’ বলে মেয়ের মুখটা নিজের দিকে টেনে আনতে চেষ্টা করল পর্ণা।
‘কেন বিরক্ত করছ? দেখছ তো আমি মুভি দেখছি। পছন্দ না হলে বলো আমি বাইরের ঘরে চলে যাচ্ছি।’
মেয়ের এরকম প্রতিক্রিয়া দেখে পর্ণা চুপ করে গেল। ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের কাজ সেরে চায়ের কাপ নিয়ে বসল মাঝের ঘরে। এই ঘরটা থেকে আকাশ দেখা যায়। সেখানে অজস্র তারাদের ভিড়। সেদিকে তাকিয়ে সে মাকে খোঁজার চেষ্টা করল। কতদিন হয়ে গেল মা নেই। ছোটবেলায় দিদা মারা যাওয়ার পর সে কাঁদলে মা বোঝাত, ওই যে তারাটা দেখছিস ওটাই দিদা। যখনই তোর মন খারাপ করবে, আকাশের দিকে তাকাবি, দেখবি সবচেয়ে জ্বলজ্বল করছে যে তারাটা, সেটাই দিদা।
পর্ণা সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটা খোঁজার চেষ্টা করল আকাশের দিকে তাকিয়ে। এই এতগুলো বছরে তারাদের সংখ্যাটা বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। দাদু, দিদা, ঠাম্মা, কাকাই, মামু কত প্রিয় মানুষ। আর শেষ পর্যন্ত বাবা-মা। তবে আজ শুধু মাকেই দেখতে, কথা বলতে, ছুঁতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে মায়ের থেকে জানতে, যখন আমরা ছোট ছিলাম আমাদের এইসব মন খারাপ তুমি কেমন করে সামলাতে মা? নাকি নিজের থেকেই সব প্রলেপ পড়ে যেত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে!
একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল তার বুকের মধ্যে থেকে। নিজের মনেই বলল, মাগো, আমি এবার তোমার কাছে চলে যেতে চাই। অনেক হল এই সংসার সংসার খেলা।আর ভালো লাগছে না।
‘বউমা অর্ণা কিছু বলল?’ শাশুড়ির কথায় সংবিৎ ফিরে এল পর্ণার।
‘না মা। বড় হয়েছে তো! যদি কিছু হয়ে থাকে নিজে থেকেই বলবে ঠিক।’
‘কী জানি বাপু আজকালকার মায়েদের বুঝতে পারি না। সবেতেই গা ছাড়া ভাব। একটাই তো মেয়ে, তার মনের হদিশও ঠিক মতো রাখতে পারো না! কেমন মা তুমি? সারাদিন খালি নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত! আমারই হয়েছে যত জ্বালা!’
সে কথার সরাসরি উত্তর না দিয়ে পর্ণা বলল, ‘আমার মা চলে গিয়েছেন এতগুলো বছর হয়ে গেল। আমি তো বেঁচে আছি। আকাশের তারা হয়ে যাইনি। আমাকে ইচ্ছে করলেই ছুঁতে পারবে অর্ণা।’
তারপর রান্না ঘরের দিকে পা বাড়িয়ে বলল— ‘চিন্তা করবেন না, কিছু কিছু বিষয় ছেড়ে দিলেই ভালো। নইলে অকারণে জটিলতা, মতান্তর তৈরি হয় যে। আমারও তো বয়স বাড়ছে মা।’
সেদিন গভীর রাতে ঘুমের ঘোরে পর্ণা টের পেল অর্ণা তাকে শিশুর মতো আঁকড়ে ধরে। বুকের মধ্যে ঢুকে ফিসফিস করে সে বলল, আমাদের কলেজের একটা ছেলের মা চলে গিয়েছেন কাল। তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না তো! পর্ণা উত্তর না দিয়ে মেয়েকে নিবিড়ভাবে দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল।