আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সমাগমে আনন্দ বৃদ্ধি। চারুকলা শিল্পে উপার্জনের শুভ সূচনা। উচ্চশিক্ষায় সুযোগ। কর্মক্ষেত্রে অযথা হয়রানি। ... বিশদ
ঠাকুরমার চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল সহজের। এমন সময়ে কোনওদিনই তার ঘুম ভাঙে না। এই সময়টা তার কাছে সাতসকাল। একতলা থেকে তালগোল পাকিয়ে অসহ্য চিৎকার উঠে আসছে। সে মাথার নীচের থেকে বালিশ নিয়ে মাথার ওপর চাপা দিল। কিন্তু তাতেও আওয়াজ কমল না!
ঠাকুরমার চিৎকারের একবার তাকিয়েছিল সে। ঘরের জানলা ভরে আলো। কাল রাতে সে জানলার পর্দা টানতে ভুলে গিয়েছে নির্ঘাত। ফলে আলো আর শব্দ দুটোই তার ঘরের ভেতর এখন গম গম করছে।
সহজ ঘুরে শুলো।
দোতলা এই বাড়ির নীচের তলায় চারজন মানুষ চারটে দ্বীপ গড়ে বসে আছে। সহজ আর মিমি দোতলার বাসিন্দা। তারা খুব প্রয়োজন না পড়লে নীচের দ্বীপপুঞ্জে নামে না। একতলাটা যেন তাদের এ-বাড়ির ঢোকা আর বেরিয়ে যাওয়ার রাস্তায় পড়ে, এমনভাবেই তারা দু’টি ভাই বোন এখানে জুটি বেঁধে থাকে। একতলার বাসিন্দারা মাঝেমধ্যে নানা প্রশ্ন উত্তর নিয়ে ওপরে উঠে আসে। নইলে তিনজন কাজের লোকই দোতলার সঙ্গে একতলার সমন্বয় রক্ষা করে। এ-বাড়ির এটাই অলিখিত নিয়ম। বন্ধুবান্ধবরা এলে তারা চুপচাপ ওপরে উঠে আসে। একতলা থেকে চা, জলখাবার আসে। কোনও মানুষ আসে না।
এই বাড়িটা বহুত পুরনো। যদি কোনওভাবে এখানে একটা বটচারা শিকড় আঁকড়ে স্থায়ী হতে পারত, তাহলে এতদিনে সে বটবৃক্ষ হতো। সহজ জানে সেটা হয়নি, হবেও না। সহজ দেখেছে তাদের এত পুরনো বাড়ি, তবু এই বাড়ির কোথাও একটাও বটগাছের চারা বের হয়নি। কারণ একটাই, এ-বাড়িতে কোনওদিন কাক-পক্ষী বসেনি। কাক-পক্ষী যে বটবৃক্ষের বীজ বহন করে এনে এখানে ফেলবে তার উপায় নেই। তারা এ-বাড়ির ওপর চক্কর কেটে উড়ে গেছে। কারণ শব্দব্রহ্ম!
আগাগোড়া এই শব্দব্রহ্মের মালকিন সহজের ঠাকুরমা, বাসবী।
ছোটবেলা থেকে সহজ দেখেছে ঠাকুরমার দাপট। দপ দপে পা ফেলা তার হাঁটা। কপালে লাল বড় সিঁদুরের টিপ। গলায় মোটা একটা বিছে হার, হাতে সোনার পেটি চুড়ির ঝনঝন আওয়াজ। পান থেকে চুন খসলেই তিনি চিৎকার করে ওঠেন। সারা বাড়িতে তিনটে কাজের লোক, সর্বদা তিনি তাদের শিক্ষা দিচ্ছেন। তবু তারা ক্ষণে ক্ষণে ভুল করছে, পান থেকে চুন ফেলছে। তারা এত বোকা যে কী ভুল করেছে তাও তারা ভালো করে বুঝতে পারত না। ঠাকুরমা তাদের প্রতি মুহূর্তে শিক্ষা দিতেন, কিন্তু তারা পাশ ফিরেই সেই শিক্ষাকে অশিক্ষায় পরিবর্তন করত।
সেই অবস্থা কিছুমাত্রায় পরিবর্তন হয়নি।
এ বাড়ির সব চেয়ে ভুল করা মানুষটা হলেন সহজের ঠাকুরদা। তবে তিনি একটা ঘরে নিজেকে বন্দি রাখেন। ওই ঘরে না গেলে তাঁর সঙ্গে দেখা হওয়ার নয়। একজনই তাঁর ঘরে যায়, সে অচল। অচল এ বাড়ির খুবই পুরনো লোক। আগে অনেক কাজকর্ম করত। এখন বয়সের ভারে পারে না। সে রিটায়ার্ড লাইফ কাটাচ্ছে এখানে। তার কাজ ঠাকুরদা যে বেঁচে আছেন এই খবরটা নিত্য আনা। আর তাঁকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য খাদ্য আর চাহিদামাফিক কিছু জিনিসপত্র আদানপ্রদান করা। সহজ ঠাকুরদার ঘরে মাঝেমধ্যেই যায়। আর রোজ ঠাকুরমার কর্কশ কণ্ঠস্বরে দিন শুরু করে।
ঠাকুরমাকে কতদিন ধরে একইরকম দেখছে সহজ।
সহজের মা কস্তুরী। সহজের যা মনে পড়ে, তার মা ছিল খুব শান্ত আর চুপচাপ। সারাদিন সে পড়ে আছে ঠাকুরঘরে। সহজের ঠাকুমা বাসবীর একঘর ঠাকুর। এই ঠাকুরের দেখভাল বাসবী যতদিন পেরেছেন করেছেন। কিন্তু যেদিন তাঁর মনে হল, আর নয় এবার ঠাকুরঘর সামলাক ছেলের বউ, সেদিনই তিনি ডেকে নিয়ে কস্তুরীর হাতে ঠাকুরঘরের চাবি তুলে দিলেন। সহজ ছোট, আর মিমি তখন একটু বড় হয়েছে।
এ বাড়ির ঠাকুরঘর সর্বদা খুব সুরক্ষার মধ্যে থাকে। এই সুরক্ষার প্রধান বিষয়টি হল একজন মানুষ ওই ঘরে চব্বিশঘণ্টা থাকা। রাতে সন্ধ্যারতি শয়নপর্ব মিটলে ভারী কাঠের দরজায় তিনখানা তালা পড়ে। চাবি জমা হয় বাসবীর কাছে।
ঠাকুরঘরের দায়িত্ব পেয়েই কস্তুরীকে সাতসকালেই স্নান করে ঢুকে যেতে হয় ঠাকুরঘরে। সেখানে বেলা দেড়টা পর্যন্ত নানাবিধ কাজ। দেড়টার পর তালা পড়ে দরজায়। আবার সন্ধ্যা নামলেই আরেক পর্ব। সব মিলিয়ে কস্তুরীর সারাটা দিনই চলে যায় পুজোআচ্চায়।
তার মা কবে যে ঠাকুরঘরে ঢুকে হারিয়ে গিয়েছে টের পায়নি সহজ আর মিমি। টের পেল যখন তখন বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে। পুরো ছোটবেলাটাই তাদের কেটেছে কাজের লোকের কাছে। তারাই স্নান করাত, খেতে দিত। সকালের ঠাকুরঘরের পর্ব মিটলেই দুপুরের খাওয়া, একটু ঘুম। সন্ধে লাগলেই কস্তুরী আবার ঠাকুরঘরে ঢুকে যায়। তখনও লম্বা সময়। ওই ঘরে এই বিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রায় সব দেবদেবীই আছেন। মিমি বলে— দেবতাদের হেডকোয়ার্টার!
সহজ অনেক আগে নিয়ম করে হেডকোয়ার্টারে যেত। সকাল-সন্ধে। এখন যায় না। যাবে কী এখানে এলে বার বার তার মনে হয় এই ঘর তার মাকে কেড়ে নিয়েছে। সমস্ত শৈশবটা সে মাকে পায়নি। ঠাকুরমা এ বাড়ির সবচেয়ে বড় দায়িত্ব তার মাকে দিয়েছে, আর তার মা জীবনপাত করে নিষ্ঠার সঙ্গে তা পালন করেছে। তার ওপর সারা বছর জুড়ে আছে নানারকম পুজো পার্বণ!
মাকে দেখে সহজের মনে হয়, মা যেন মা নয় এক টুকরো চন্দন কাঠ! প্রতিদিন যাকে ছোট পিঁড়িতে ফেলে ঘষা হয়। ঘষতে ঘষতে চন্দন কাঠের মতো মা শীর্ণ হয়ে গিয়েছে। তবু মায়ের কাছে এলে সুগন্ধ পায় সহজ। মিমিও পায়।
কোনও কোনওদিন রাতে মায়ের সঙ্গে দেখা হয় সহজের। বিছানায় মরার মতো পড়ে আছে। সহজ কাছে যেতেই ধড়ফড় করে উঠে বসে। সহজ কতবার বলেছে, ‘এ বাড়ির সবকিছু করার জন্য এতগুলো কাজের লোক, নয় আর একটা লোক রাখো— তোমাদের ঠাকুরের সেবা করার জন্য। তুমি এবার ওই ঘর থেকে বেরিয়ে এসো মা।’
সহজের কথায় কস্তুরী হাসে। ‘ঠাকুরের কাজ বাইরের লোক দিয়ে হয় রে বোকা!’
‘কেন হয় না? একটা মেয়ে রাখো, আর দু’বেলা বামুন ঠাকুর ডেকে নাও। ঝামেলা মিটিয়ে ফেলো।’
‘ছিঃ! ঝামেলার কী আছে।’ কস্তুরী কথাটা বলে, কিন্তু তার গলার স্বরে যেন জোর থাকে না।
সহজ বলে, ‘লাস্ট তুমি এই ঠাকুরঘর ছেড়ে কবে বেরিয়েছ?’
‘আমি কি চব্বিশঘণ্টা ঠাকুরঘরে থাকি নাকি?’
‘চব্বিশঘণ্টা ঠাকুরঘরে থাকো না, কিন্তু ওই ঠাকুরঘরের চক্করে বাড়ির বাইরে বেরুতে পার না।’
সহজের কথায় ম্লান হাসে কস্তুরী। ‘কোথায় আর যাব?’
‘কোথায় যাবে মানে, প্রথমে তুমি ছাদে যাবে। রোদে গিয়ে বসবে। দেখতে তো শ্বেতচন্দন কাঠের মতো ফ্যাসফেসে হয়ে গিয়েছ। কতদিন তোমার গায়ে রোদ্দুর লাগে না, তুমি জানো।’
কস্তুরী হেসে বলে, ‘তোর যত বোকা বোকা কথা।’
সহজ বোকা হয়ে এ বাড়িতে থাকে। কিছুতেই সে চালাক হতে পারে না। চালাক হওয়ার চেষ্টাও করে না। তার বাবা খুব চালাক মানুষ। ইনকাম ট্যাক্স, সেল ট্যাক্সের নামী ল’ইয়ার। বাবার সম্পর্কে যতদূর শুনেছে সম্বুদ্ধ মিত্র নাকি খুবই ধুরন্ধর। তার চেম্বারে সর্বদা মক্কেলেরা এসে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকে। তবে সম্বুদ্ধ মিত্র বাড়িতে কোনও হুজ্জতি রাখেন না। যা কিছু সব চেম্বারে। সেখানে রাত দশটা পর্যন্ত কাটান। বাড়ি ফেরেন পৌনে এগারোটা নাগাদ। আবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান ঠিক ন’টা। তিনি সে অর্থে কারও সঙ্গে কথা বলেন না। তবে দরকার পড়লে সব বিষয়েই তিনি হাজির থাকেন। আর সংসারের যাবতীয় কিছুতে তাঁর দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। নাহলে একদিন রাতে সহজের ঘরে ঢুকে সটান বললেন, ‘শুনলাম, তুমি নাকি লোকাল কিছু লুম্পেনদের সঙ্গে মেলামেশা করো?’
‘লুম্পেন কী না জানি না। তবে হ্যাঁ লোকাল কিছু ছেলেদের সঙ্গে মিশি।’
‘লোকাল ছেলে হলে আমি তোমাকে কিছু বলতাম না, ওদের নামে নানা রিপোর্ট আছে।’
‘তোমাকে আমার নামে রিপোর্টটা কে করল?’
‘সেটা তোমার জানা খুব জরুরি নয়।’
‘না, আমার জানা দরকার, কে ওদের লুম্পেন ভাবল?’
‘ভাবাটা ভুল নয়, আমি একজনের কাছ থেকে তোমার খবরটা পেয়েছি। তারপর সত্যি কি না, মানে তুমি তাদের সঙ্গে মেশো কি না, তারা কারা, সব খবরই নিয়েছি। নিয়েই তোমাকে বলছি, ওরা লুম্পেন। আর ওদের সঙ্গে তুমি যথেষ্টই মেলামেশা করো! কেন? তোমার কি আর বন্ধু নেই?’
‘আছে, কিন্তু তারা সবাই ব্রেড বাটার আর ভাত চিকেনের মানুষ। তাদের গল্প নেই।’
‘মানে?’
‘ওই যে বললাম, তাদের গল্প নেই। আর যা গল্প আছে, তা তৈরি করা গল্প। আমি গল্পের জন্য ওদের সঙ্গে মিশি।’
‘গল্পের জন্য মেশো? মানে ওদেরকে নিয়ে গপ্প লিখবে? ওরা তোমার সাবজেক্ট!’ সম্বুদ্ধ মিত্র কিছুক্ষণ থুতনি ঝুলিয়ে দাঁড়িয়েই রইলেন। ‘তাহলে, তাহলে তুমি এখনও লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখছ? আমার জীবনের লক্ষ্য রচনায় ছোটবেলায় যেটা লিখতে বড়বেলাতেও সেটা করতে চাইছ?’
‘আমি লেখক হতে চাইছি না, লিখতে চাইছি।’
‘ওটা কি প্রফেশন হিসেবে নিতে চাইছ? আমার বেশ কিছু ক্লায়েন্ট আছে, যাদের ইনকাম ট্যাক্সে লেখালিখির টাকা যোগ হয়। তার মধ্যেও দু’জন বেশ নামী। কিন্তু একজন একসময় খবরের কাগজে চাকরি করতেন, একজন সরকারি অফিসার। কেন চাকরির কথা বললাম— তার কারণ বাংলাভাষায় লেখালিখি করে জীবননির্বাহ করা যায় না বলেই আমার মনে হয়। তাঁরা চাকরি করতে করতে লিখেছেন। লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এখন তাদের রয়্যালিটির একটা বড় অংশের টাকা ট্যাক্সেবল। ক্রিয়েটিভ রাইটারদের তিনলক্ষ টাকা ওই খাতে ছাড় আছে—।’
সম্বুদ্ধ মিত্রকে থামিয়ে সহজ বলল, ‘আমি লেখক হতে চাইছি না, লিখতে চাইছি—।’
‘এ তো ভাবের ঘরে চুরি! তুমি নিজের কাছে পরিষ্কার নও। দেখো, রচনার খাতায় লেখা আর জীবনখাতায় সেটা বাস্তব করে ফেলা সহজ নয়। তবে তোমাকে আমি বাধা দেব না। চেষ্টা করো। বেস্ট অব লাক! শোনো, যে কাজে অর্থ নেই, সে কাজে সম্মানও নেই। আর একটা কথা মাথায় রেখো— গল্প লিখতে গিয়ে নিজেই যেন গল্প হয়ে যেও না।’
সম্বুদ্ধ মিত্র পিছন ফিরে চলে যাচ্ছিলেন, সহজ বলল, ‘বাবা, আমি ভাবছি গল্পটা এই বাড়ির থেকে শুরু করব।’
‘এই বাড়ির থেকে!’ বিস্মিত হলেন সম্বুদ্ধ। ‘এ বাড়িতে গল্প কোথায়— তোমার কথায় ব্রেড বাটার বা ভাত চিকেনের মানুষ নাহলেও এ বাড়ির সবাই খুব সাধারণ। আটপৌরে। বলতে পার, ডাল ভাতের মানুষ!’
‘তা কেন এ বাড়ি নীচের তলার সবাই এক একটা চরিত্র— যেমন তুমি!’
‘আমি! আমি খুব সাধারণ! আমার মধ্যে তোমার লেখার মতো মেটিরিয়াল কোথায়? গল্প কোথায়? আমি দুটো বিয়ে করে টানাপোড়েনে নেই, আমার কোনও পরকীয়া নেই, রাতে মদ খেয়ে এসে মাতলামি করি না, আমি কোনও ক্রাইম করিনি। আমি একদম সাদামাটা একজন মানুষ।’
‘হ্যাঁ, ঠিক, এসব তোমার নেই। তুমি গড়পরতা ভালোমানুষ।’
সহজের কথা শুনে সম্বুদ্ধ হাসলেন। ‘তাহলে কী হল? প্রথম যে চরিত্রটা ধরলে সেটাই ফেল, কোনও গল্প নেই।’
‘কে বলল নেই? একটা গোটা ট্যাঁকশালের গল্প আছে।’
‘মানে?’
‘ট্যাঁকশাল। মিন্ট। যেখানে টাকা ছাপানো হয়।’
‘তুমি কি আমাকে ট্যাঁকশাল বলছ!’
‘ট্যাঁকশাল পছন্দ হচ্ছে না। ঠিক আছে, আমি বরং একটা রোবটের কাহিনি লিখি।’
‘তুমি আমাকে রোবট বলছ! রোবটের মতো কাজ করে যাই—।’
সহজ হাসে, ‘না, কর্ম তো ধর্ম! কাজের জন্য তোমাকে রোবট বলব কেন?’
‘তাহলে? কোন রোবটের কাহিনি লিখবে?’
‘আমি একটা রোবটের কাহিনি লিখব— যে কোনওদিন চন্দনের সৌরভ পায়নি। সে জানলই না, একটা চন্দন কাঠ কীভাবে পাথরের বুকে ঘষতে ঘষতে ক্ষয়ে গেল। তবু শেষটুকু তার সৌরভ থাকবে। কারণ সে চন্দন কাঠ! যার সুগন্ধ কোনওদিন রোবট পাবে না।’
‘রাবিশ! গাঁজা খাচ্ছো না কি!’