কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ। সরকারি ক্ষেত্রে কর্মলাভের সম্ভাবনা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
তিথি ধাড়া তারকেশ্বর মহিলা ভলিবল ক্লাবের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়। বর্তমানে সে বারাসতের অ্যাডামস ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পাঠরতা। তার কোচ শংকর পাল। তিথির বাবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী গদাধর ধাড়া জানালেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন ভলিবলের প্রতি তিথির উৎসাহ ও আগ্রহ বাড়ে। সেই তার প্রথম পথচলা। এর পরই সে বিশেষ মনোযোগ সহকারে নিজেকে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়। ২০১৩ সালে তিথি জেলাস্তরে অংশ নিয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে। ২০১৪ সালে বালুরঘাটে জেলা ভলিবলে সে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। ২০১৫ সালের ২৬ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত তামিলনাড়ুতে সে দ্বিতীয় স্থানাধিকারিণী। ২২ নভেম্বর থেকে ২৭ নভেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত তেলেঙ্গানায় অনুষ্ঠিত সাব জুনিয়র ভলিবলে তিথি প্রথম স্থান অধিকার করে। সাফল্যের পর সাফল্য তাকে উৎসাহিত করে। এরপর বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিযোগিতায় সাফল্য পায় সে। জেলা ছাড়িয়ে রাজ্য, রাজ্য ছাড়িয়ে দেশ এবং দেশ ছাড়িয়ে তার নাম একসময় বিদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ভলিবল চািম্পয়নশিপের খেলায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে ভারত। প্রথম স্থানে অপরাজিত ছিল চীনের খেলোয়াড়। সেই খেলায় প্রতিনিধিত্ব করে তিথি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্রীড়া বিভাগের উদ্যোগে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে তিথিকে ‘খেলাশ্রী’ সম্মান জ্ঞাপন করা হয়। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তিথিকে। নিজের স্বপ্নের ডানায় চড়ে একের পর এক সাফল্য অর্জন করেছে সে। ভলিবল নিয়ে আরও এগিয়ে যেতে চায় তিথি।
এবার অনন্যার কথায় আসি। অনন্যা দাস তারকেশ্বর বটতলা ভলিবল ক্লাবের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় উজ্জ্বলতম ভলিবল খেলোয়াড়। তার নির্ভরযোগ্য কোচ সুরেশ মণ্ডল সদা সর্বদা তাকে ঐকান্তিক প্রেরণা জুগিয়ে তার সাফল্যের বিজয়রথকে উত্তরোত্তর শিখরে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনন্যার বাবা রবীন্দ্রনাথ দাস ও মা স্বাগতা দাস মেয়েকে পরম স্নেহে উৎসাহ দিতে কসুর করছেন না। বর্তমানে সে রেলওয়ে দলের প্রতিনিধিত্ব করছে। এবং চেন্নাই-এর আন্নামালয় ইউনিভার্সিটির পঠন-পাঠনে যুক্ত। একান্ত আলাপচারিতায় অনন্যা জানিয়েছে, সপ্তম শ্রেণীতে পড়াকালীন ভলিবলে তার হাতেখড়ি। গত ২৬ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর ’১৩ পর্যন্ত ভলিবল ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার ব্যবস্থাপনায় ২২তম মিনি ন্যাশনাল ভলিবল চ্যাম্পিয়নশিপের খেলায় (উত্তরপ্রদেশে অনুষ্ঠিত) অনন্যা প্রথম স্থান অধিকার করে। ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ পর্যন্ত দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ৩৭তম সাব জুনিয়র ন্যাশনাল ভলিবল চ্যাম্পিয়নশিপে সে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। এরপর ২২ নভেম্বর থেকে ২৭ নভেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত তেলেঙ্গানায় অনুষ্ঠিত ৩৮তম সাব জুনিয়র ন্যাশনালে সে প্রথম স্থান অর্জন করে। ১২ অক্টোবর থেকে ১৬ অক্টোবর ২০১৭ পর্যন্ত ছত্তিশগড়ে অনুষ্ঠিত পূর্ব জোনের বিশ্ববিদ্যালয় মহিলা ভলিবলে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্বে অনন্যা প্রথম স্থান অধিকার করে তার পায়ের তলায় মাটিকে আরও শক্ত করেছে ও বিশেষ সম্মান লাভে সমর্থ হয়েছে। ২৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর, ২০১৭ তারিখ পর্যন্ত বর্ধমানের অরবিন্দ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ৪৪তম জুনিয়র ন্যাশনাল ভলিবল চ্যাম্পিয়নশিপের খেলায় (অনূর্ধ্ব ১৮) সেরা খেলোয়াড়ের শিরোপায় ভূষিতা হয়ে ও প্রথম স্থান অধিকার করে ক্রীড়ামোদী মানুষজনের বাহবা কুড়িয়েছে। ওই খেলায় চূড়ান্ত পর্যায়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে বাংলা ৩-২ফলাফলে সাইকে পরাজিত করে বিজয়ীর সম্মান লাভ করে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে হলদিয়ায় অনুষ্ঠিত রাজ্য ভলিবল প্রতিযোগিতায় হুগলি জেলা চ্যাম্পিয়নের শিরোপা লাভ করে। ফাইনালে হুগলি ৩-০ সেটে ২৪ পরগনাকে নাস্তানাবুদ করে প্রথম স্থানের খেতাব অর্জন করে। সেখানেও অনন্যা উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। ২ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি, ২০১৯ চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিত সিনিয়র ন্যাশনালে অনন্যা ভারতীয় রেলওয়ে দলের হয়ে অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। ২০১৯ সালে আগস্টে অনুষ্ঠিত সিনিয়র এশিয়ান মহিলা ভলিবল চ্যাম্পিয়নশিপের খেলায় দক্ষিণ কোরিয়াগামী ভারতীয় দলে অনন্যা প্রতিনিধিত্ব করেছে। চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিত ইন্টার রেলের খেলায় অনন্যা ইন্ট্রিগ্যাল কোচ ফ্যাক্টরির হয়ে অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় স্থানের অধিকারিণী হয়ে অভাবনীয় সাফল্যের অংশীদার হয়েছে।
এত কিছু সাফল্যের পরেও তিথি ও অনন্যার আক্ষেপ, ভারতীয় দলে নিয়মিত ও অপরিহার্য মহিলা ভলিবল খেলোয়াড় হয়েও স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত ও তারকেশ্বর ব্লকের পক্ষ থেকে কেউ তাদের ন্যূনতম সম্মান দেখানোর প্রয়োজন মনে করেনি। তবুও তারা অঙ্গীকারবদ্ধ, দেশের ও দশের স্বার্থে খেলাধূলায় দেশের সম্মান অটুট রাখার চেষ্টার কসুর করবে না। আগামী দিনে তিথি ও অনন্যার অভাবনীয় সাফল্যের আরও নিদর্শন চায় সাধারণ মানুষ যারা খেলা ভালোবাসে। দেশের ক্রীড়াপিপাসু মানুষজনের আশা পূর্ণ করার ইচ্ছা আছে এই দুই খেলোয়াড়ের। সেই লক্ষ্যেই তারা এগিয়ে চলেছে।