আবেগের বশে কোনও কাজ না করাই ভালো। দাম্পত্য জীবনে বনিবনার অভাবে সংসারে অশান্তি বাড়বে। কর্মে ... বিশদ
রাস্তা থেকেই চওড়া ড্রাইভটা মাথা উঁচু করে সোজা উঠে গিয়েছে দোতলায়। সেখানে বড়সড় গাড়ি বারান্দা। হোটেলের নাম আই টি সি রয়্যাল বেঙ্গল। হোটেলের তরফে অরুন্ধতী ঘোষ জানালেন নামের সঙ্গে খাপ খাইয়ে হোটেলের সাজসজ্জায় রয়েছে বাঙালিয়ানা ও পুরনো জমিদারি ছাপ। সেন্সর লাগানো কাচের দরজা পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলেই বনেদী ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। লবির সামনের দেওয়ালগুলোয় টাঙানো রয়েছে বাংলার বিশিষ্ট কাঁথা কাজের জমকালো ওয়াল হ্যাংগিং। ফ্রেমে বাঁধানো এই সূক্ষ্ম কারুকাজগুলো প্রকৃতই বাংলার ঐতিহ্যের কথা বলে। লবির দু’পাশ দিয়ে উঠে গেছে শ্বেত পাথরের চওড়া ঘোরানো সিঁড়ি। আর একটু ঢুকে চলে আসুন রিসেপশনে। এলাহি বসার বন্দোবস্ত রয়েছে সেখানে। সেই সঙ্গেই পাবেন বাংলার আরও একটু ছোঁয়া। রিসেপশন ডেস্কের পিছনের দেওয়ালে লাগানো রয়েছে বাংলার ব্লক প্রিন্টিংয়ের বোর্ড। শুধু যে সেই বোর্ডে বাংলার ছাপ সীমাবদ্ধ তাও নয়। এদিক ওদিক তাকালে সর্বত্রই বাংলা ও বাঙালিয়ানার ছাপ স্পষ্টভাবে ধরা পড়বে হোটেলের অন্দরসজ্জায়। এই যেমন ডোকরার শোপিস, সুসজ্জিত ঝাড়বাতি বা লণ্ঠনের মতো মোম।
হোটেলের অন্দরসজ্জার কথা তো অনেক হল এবার একটু হোটেলের রেস্তরাঁ প্রসঙ্গে আসা যাক। লাউঞ্জ ও রিসেপশনের ঠিক মাথার ওপর রেস্টুরেন্ট ফ্লোর। এখানে রয়েছে ভেজিটেরিয়ান ও ইটালিয়ান দুটি রেস্তরাঁ। এ দুটিতেই পাবেন ডিনারের ব্যবস্থা। এছাড়াও আছে দার্জিলিং টি লাউঞ্জ। এখানে দার্জিলিং চা ছাড়াও টুকটাক স্ন্যাক্স পাবেন। তবে এই হোটেলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ও আকর্ষণ যে রেস্তরাঁ তার নাম গ্র্যান্ড মার্কেট প্যাভেলিয়ন।
নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটা বাজারের ছবি ফুটে উঠেছে রেস্তরাঁর অন্দরসজ্জায়। এ যেন রেস্তরাঁ নয়, বরং ব্রিটিশ আমলের হগ মার্কেট। কী নেই সেখানে? বিভিন্ন প্যাভেলিয়নে সাজানো রয়েছে হরেক রকম খাবার দাবার। তাতে পুব থেকে পশ্চিম সবরকম খাবারই পাবেন। তবে এই রেস্তরাঁর অভিনব আকর্ষণ এখানকার নর্থ ইস্টার্ন স্টল। এখানে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রান্না পরিবেশন করা হয়। মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মেঘালয় সব রকম খাবার পাবেন এই স্টলে। এছাড়াও আছে এশিয়ান কিচেন, ওয়াকারি, স্টু অ্যান্ড ক্যাসারোল, গ্লোবাল গ্যালারি, প্যাভেলিয়ন ডেলি, কাবাবরি, কিচেনস অব ইন্ডিয়া, ডেজার্ট স্টুডিও ইত্যাদি। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩০০ রকম জাতি উপজাতির হেঁশেল থেকে নানা ধরনের পদ তুলে এনেছেন হোটেলের একজিকিউটিভ শেফ। নাগা খাবারের ঝাল ঝাঁঝালো স্বাদ যেমন পাবেন তেমনই পাবেন সিকিমের নেপালি খানা। পাশাপাশি রয়েছে ত্রিপুরা ট্রাইবাল কুইজিন বা অরুণাচলের অর্গানিক কুইজিন। আবার তারই পাশাপাশি পাবেন মিজোরামের বার্মিজ খানাপিনা। মণিপুরের খাবারের ধরন আবার এক্কেবারে আলাদা। এখানে রয়েছে নিরামিষ খাবারের আধিক্য। পুরাকালে মণিপুর ছিল বৈষ্ণব রাজ্য। তাই খাবারও এখানে স্বাদে গন্ধে অন্য ধাঁচের। এহেন এলাহি বুফে পাবেন ১২৫০ টাকায়, কর অতিরিক্ত। ভিন্নতায় ভরা নর্থ ইস্টার্ন কাউন্টার থেকে দুটি রেসিপি অন্দরমহলের পাঠকদের উপহার দিলেন একজিকিউটিভ শেফ বিজয় মালহোত্রা।
উপকরণ: কাবলি ছোলা বা সাদা মটর ২০০ গ্রাম, আদাকুচি ১০ গ্রাম, ধনেপাতাকুচি ১০ গ্রাম, মৌরি ৩ গ্রাম, পেঁয়াজশাক ১০ গ্রাম, বেসন ৭০ গ্রাম, নুন স্বাদ মতো, জল প্রয়োজন অনুযায়ী, সাদা তেল ভাজার জন্য।
পদ্ধতি: অল্প গরম জলে কাবলি ছোলা বা সাদা মটর ২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে দিন। তারপর তা জল ঝরিয়ে শুকিয়ে নিন। এরপর বেসন, নুন, আদা কুচি, ধনেপাতাকুচি, মৌরি, পেঁয়াজশাক কুচি একসঙ্গে মেশান। তাতে শুকিয়ে নেওয়া কাবলি ছোলা বা সাদা মটর মেশান। এইসব উপকরণের সঙ্গে অল্প অল্প করে জল মেশান ও তা একসঙ্গে মাখুন। জল যেন বেশি না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। মিশ্রণটা বেশ আঁটোসাঁটো হলে তা আলাদা করে সরিয়ে রেখে দিন। এবার কড়াইতে বা ননস্টিক ফ্রাই প্যানে তেল গরম করে নিন। এরপর কাবলি ছোলা আর বেসনের মিশ্রণ থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে তা যেমন তেমন আকৃতিতে ভাজুন। বেশ সোনালি বাদামি রং ধরলে তেল ঝরিয়ে নামিয়ে নিন। নিজের পছন্দসই চাটনি সহযোগে এই ভাজা পরিবেশন করুন।
উপকরণ: চর্বিযুক্ত পর্ক বেলি ৩০০ গ্রাম, থেঁতো করা আদার টুকরো ২০ গ্রাম, চিলি ফ্লেকস ১০ গ্রাম, কালো তিল রোস্ট করে বাটা ৮০ গ্রাম, নুন স্বাদ মতো, রোস্ট করা গোলমরিচ গুঁড়িয়ে নেওয়া ১০ গ্রাম, আদা ও রসুনকুচি ১০ গ্রাম।
পদ্ধতি: পর্ক নুন, চিলি ফ্লেকস ও থেঁতো করা আদা দিয়ে ম্যারিনেট করে রাখুন অন্তত ৪ ঘণ্টা। তারপর তা অল্প জল দিয়ে প্রেসারে সেদ্ধ করে নিন। অথবা ঢিমে আঁচে সেদ্ধ করুন। কড়াইতে তেল গরম করে আদা ও রসুন ভেজে নিন। তারপর পর্ক দিয়ে ঢিমে আঁচে রান্না করুন। তেল ছেড়ে এলে কালো তিল বাটা দিয়ে কষিয়ে নিন। তারপর ঢাকা দিয়ে ঢিমে আঁচে রাঁধুন। নুন দিন। সব শেষে গোলমরিচগুঁড়ো দিয়ে নামিয়ে নিন। ব্যাম্বু পিকল আর সাদা ভাত সহযোগে পরিবেশন করুন।