গুরুজনের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা ও মানসিক উদ্বেগ। কাজকর্মে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। বয়স্কদের স্বাস্থ্য সমস্যা ... বিশদ
মরশুম বদলের সঙ্গেই বদলে যায় আমাদের পোশাকের বাছবিচার। শীতে ভারী, গরমে হাল্কা পাতলা পোশাক— এতেই অভ্যস্ত আমরা। এই প্রজন্ম আবার স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখে। সেই মতোই চলে পোশাকের ফ্যাব্রিকের বাছবিচার। আবহাওয়ার পারা যখন ঊর্ধ্বমুখী, তখন এমন পোশাক পরুন যাতে আরাম মেলে। সেক্ষেত্রে আপনার বাছাই হতেই পারে লিনেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন লিনেন নাকি সব মরশুমেই সমান আরামদায়ক। ডিজাইনার ঐশী গুপ্ত বললেন, ‘এই ফ্যাব্রিকটা অন্য নানারকম ফ্যাব্রিকের সঙ্গে মিলিয়ে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। তাই যে কোনও মরশুমেই তা ফ্যাশন তালিকায় নিজের জায়গা করে নিতে সক্ষম।’ লেদার বা সিল্কের সঙ্গে যখন লিনেন মিশিয়ে লং কোট, ওয়েস্ট কোট, ওয়েস্টার্ন ড্রেস, টপ ইত্যাদি তৈরি করা হয় তখন তা ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য উপযুক্ত। আবার এই লিনেনকেই যখন সুতির সঙ্গে টিম আপ করা হয় তখন তা গরমে আরামদায়ক হয়ে ওঠে। ঐশী বললেন, ‘লিনেন যে কোনও পোশাকেই একটু ক্লাসি লুক দেয়। ওয়েস্টার্ন থেকে শাড়ি— সবই খোলতাই হয় লিনেনের ছোঁয়ায়।’
গরম মানেই একচেটিয়া সুতি ছিল এতদিন। এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লিনেন।
ঐশী জানালেন, গত কয়েক বছর ধরেই পোশার বাছাই এবং ফ্যাব্রিক চয়নের ক্ষেত্রে আরামের দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। ‘ফিল গুড ফ্যাক্টর’ এই প্রজন্মের কাছে পোশাকের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাঁরা সেই পোশাকই বাছতে চাইছেন যাতে নিজেরা স্বচ্ছন্দ। তাই গরমকালে বিয়েবাড়ি বা অন্য কোনও অনুষ্ঠানেও এই প্রজন্ম ‘সামার কুল লুক’ বেছে নিচ্ছে। আর সেই ক্ষেত্রেই সুতির পাশাপাশি নিজের পাকাপোক্ত জায়গা করে নিয়েছে লিনেন।
এবছরের সামার কুল লুকের সঙ্গে রং চলছে হাল্কা পিচ। ওটাই নাকি গ্রীষ্মের থিম কালার, জানালেন ঐশী। তাঁর কথায়, পিচ রঙে চোখের আরাম তো হবেই, সঙ্গে মনেরও আরাম হবে। আর সেই আরাম জড়িয়ে থাকবে আপনাকে। সব মিলিয়ে একটা ফুরফুরে ভাব তৈরি হবে। যা এই ফ্যাব্রিকটিকে গ্রীষ্মের পক্ষে অনবদ্য করে তুলবে।
লিনেনের মজা
কয়েকটা বিশেষত্ব রয়েছে লিনেনে। প্রথম কথা লিনেন ক্যাজুয়াল থেকে সেমি ফর্মাল, সব ধরনের লুকের সঙ্গেই মানিয়ে যায়। একটু বিশ্লেষণ করে দিলেন ঐশী। ধরুন শাড়ি, যে কোনও পোশাকি অনুষ্ঠানে পরার পক্ষে আদর্শ। আজকাল অনেক আধুনিকাই এর সঙ্গে লিনেনের কলার দেওয়া ব্লাউজ পরছেন। তাতে একটা ভিন্ন ধরনের লুক আসছে চেহারায়। আবার হাল্কা শীতে তসর বা সিল্কের শাড়ির সঙ্গে কেউ হয়তো লিনেনের ওয়েস্ট কোটও পরছে। সেই ধরনের ওয়েস্ট কোটের সঙ্গে সিল্ক স্ট্রাইপ, তসরের প্যাচ ইত্যাদি থাকছে। সেটা ওয়েস্ট কোটের নকশায় আলাদা মাত্রা যুক্ত করছে।
আবার ওয়েস্টার্ন ফর্মাল পোশাকের সঙ্গে লিনেন জ্যাকেট খুবই মানানসই। লিনেনের ফ্যাব্রিকে স্ট্রাইপ, সলিড কালার, চেকস যেমন ফর্মাল লুক আনতে সাহায্য করে তেমনই আবার ফ্লোরাল প্রিন্ট, কালার্ড প্যাচ ইত্যাদিতে ক্যাজুয়াল লুক আসে। প্রিন্টের ক্ষেত্রে বড় গোলাপ, সাইট্রাস ডিজাইন এখন ক্যাজুয়াল লুকে খুবই চলছে।
সেমি ফর্মাল থেকে ক্যাজুয়াল
লিনেনের আর একটা বিশেষত্ব হল একই পোশাকে সেমি ফর্মাল থেকে ক্যাজুয়াল লুক দেওয়া যায়। ধরুন একটা শর্ট টপ, তার সঙ্গে ক্যাজুয়াল লিনেন ট্রাউজার টিম আপ
করলে সেটা ক্যাজুয়াল ড্রেস হয়ে যাবে। ক্যাজুয়াল লুকের ক্ষেত্রে বড় গোলাপ বা অন্য কোনও ফ্লাওয়ার প্রিন্ট যেমন মানানসই, তেমনই আবার পাউচ পকেটও ভালো লাগে। সেক্ষেত্রে প্রিন্টেড লিনেন ড্রেসের সঙ্গে একরঙা লিনেনের পাউচ পকেট লাগানো যেতে পারে। আর পকেট ছাড়া এ-লাইন ফ্রকে কম্বিনেশন রঙের কলার থাকলে সেটা ক্যাজুয়াল চেহারা নেবে। কিন্তু ওই একই ড্রেসে যদি কোমরে একটু চওড়া লেদার বেল্ট পরা যায় তাহলে তাতে সেমি ফর্মাল লুক আসবে। এছাড়া লিনেন স্কার্টে চওড়া প্লিট দিয়ে তা সেমি ফর্মাল করা যায়। েড্রসের ক্ষেত্রেও কোমর থেকে সরু প্লিট ফেলে সঙ্গে ফর্মাল কলার লাগিয়ে তাতে পোশাকি লুক দেওয়া যেতেই পারে।
শাড়িতে লিনেন
লিনেনের শাড়ি গরমে দারুণ আরামদায়ক। তার আবার নানা ধরন রয়েছে। একেবারেই রোজকার পরার ক্ষেত্রে একরঙা লিনেন শাড়ি, সঙ্গে সরু বোনা পাড় পছন্দ করেন আধুনিকারা। এই ধরনের শাড়ি একটু কনট্রাস্ট ব্লাউজ বা প্রিন্টেড ব্লাউজ দিয়ে টিম আপ করে পরলে ভালো লাগে। সামার কুল কিছু রং রয়েছে যেমন হাল্কা সবুজ, পেল ইয়েলো, দুধে আলতা ইত্যাদি, এগুলো গরমে আরাম দেয়। আবার লিনেনের শাড়িতে একটু জমকালো লুক দিতে চাইলে তাতে সুতোর কাজ, জামদানি আঁচল, জামদানি বুটি দেওয়া যেতে পারে। এখন অনেকে আবার আঁচলে সিল্কের প্যাচ লাগিয়ে লিনেনের শাড়িতে পার্টি লুক দিতে চাইছেন। কেউ বা আলাদা করে হাতে বোনা বর্ডার লাগাচ্ছেন লিনেনের শাড়িতে। এগুলো সবই শাড়িতে একটু নতুনত্ব আনছে।
এছাড়াও কম্বিনেশন কালারও লিনেন ফ্যাব্রিকে খুবই চলে। সামার কুল জমির সঙ্গে কুঁচিতে একটু হ্যান্ড বাটিক করা যেতে পারে। তাতে শাড়িটা পরে আরামই হবে। গোটা শাড়ির মোলায়েম ভাব বজায় থাকবে। আর ফ্লোরাল প্রিন্ট ওয়েস্টার্ন ওয়্যারের পাশাপাশি আজকাল শাড়িতেও দেখা যাচ্ছে। অনেকে আবার প্লেন লিনেনের সঙ্গে কুঁচি আর আঁচলে চওড়া স্ট্রাইপস করছেন। এগুলো সবই শাড়িতে বৈচিত্র্য আনছে।