কারও কাছ থেকে কোনও দামি উপহার লাভ হতে পারে। অকারণ বিবাদ বিতর্ক এড়িয়ে চলুন। স্বাস্থ্য ... বিশদ
স্বামী হীরানন্দজীর তখন পরিচিতি হীরেন লাহিড়ী নামে। কর্মস্থল ডালহৌসীর বার্মাশেল কোম্পানী। বাড়ী নৈহাটিতে। ডেইলি প্যাসেঞ্জারী করেন। আরও অনেকেই কর্মস্থলের সঙ্গী ছিল যারা ঐভাবে দূর থেকে যাতায়াত করতো। হীরেনদার বাড়ীতে ছিল অভাব অনটন এবং নানা দায় দায়িত্ব। পরিবারের নানা অশান্তির বোঝা টানতে হয়েছে বিবাহ না করেও। ভরসা ছিলেন একজন। তিনি তাঁর প্রাণের মানুষ ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব। তাঁকে অন্তর থেকেই ভক্তি করতেন হীরেনদা। সব দুঃখ কষ্ট অশান্তি তাঁকেই নিবেদন করতেন। মনে প্রানে তাঁর চরণেই নিবেদন করতেন সব প্রার্থনা সব আকুতি। দিব্য জীবনের জন্য প্রাণ কাঁদতো। চাইতেন আধ্যাত্মিক পথ ধরে দেবত্বের পথে এগিয়ে যেতে। কিন্তু পরিবেশ সম্পূর্ণ প্রতিকূল। এক একদিন পরিবেশের প্রতিকূলতায় সহ্যের মাত্রা ছাড়িয়ে যেতো। বুক ফেটে কান্না আসতো। আর তখনি বেশী করে মনে হ’ত শ্রীরামকৃষ্ণের কথা। কিন্তু সে যে অধরা অচিন বাউল। সেদিন ট্রামের সীটে বসে চোখ বুজে একাগ্র মনে রামকৃষ্ণদেবকে স্মরণ করে মনের বেদনা জানাতে জানাতে চলেছেন ডালহৌসী অভিমুখে। অজান্তে দু’চোখ বেয়ে অশ্রুও গড়িয়ে পড়ছে। বাইরেও অভাব অন্তরেও অভাব। কোথাও শান্তি নেই। বাইরের অভাব তবু সহ্য করা যায়, বাইরের অভাবের সঙ্গে লড়াইও করা যায়, জয়ীও হওয়া যায়, সন্তোষ ধারণও করা যায়। কিন্তু অন্তরের অভাব? সে যে মানুষের সাধ্যের বাইরে! আত্মস্থ হয়ে কত কি ভাবছেন হীরেনদা। হঠাৎ একটা মৃদু ধাক্কায় চমক ভাঙ্গে। চোখ মেলে দেখেন সহকর্মী শ্রীগোপাল ব্যানার্জী বসে আছেন তাঁর পাশের সীটে। কখন এসে বসেছেন শিয়ালদায় ট্রেন থেকে নেমে তা টেরই পাননি হীরেনদা। গোপালদা সস্নেহে বললেন—আপনাকে খুব অশান্ত দেখছি। কি ব্যাপার বলুন তো! হীরেনদার সঙ্গে আলাপ এবং ঘনিষ্ঠতা তো ছিলই। তাই নিঃসঙ্কোচেই বললেন মনের কথা। গোপালদা বললেন—মনের শান্তি একমাত্র মহাপুরুষ বা সৎগুরুই দিতে পারেন। তাছাড়া তো পথ নেই। বেশ সমর্থ মহাপুরুষের শরণ নিলে মনের এই জ্বালা শান্ত হতে পারে। কথাটা তো ঠিক। কিন্তু সে রকম সত্যিকার সিদ্ধ সমর্থ মহাপুরুষের দেখা মেলা যে ভার। গোপালদা বলেন, সত্যিকার চাহিদা থাকলে পাওয়া যায়। আপনি তো অনেক সাধু সন্তের দর্শন লাভ করেছেন। আমি একজনকে জানি। যাবেন সেখানে? একবার গিয়েই দেখুন না। হীরেনদা সম্মতি জানালেন। গন্তব্যস্থল এসে পড়েছে তখন। উভয়ে নেমে পড়লেন।