মাতৃকুল থেকে সম্পত্তি প্রাপ্তির যোগ। ডাক্তার, আইনজীবী, প্রমুখের পেশার প্রসার, সুনাম ও উপার্জন বৃদ্ধির সম্ভাবনা। ... বিশদ
নির্দোষং হি সমং ব্রহ্ম তস্মাদ্র্বহ্মণি তে স্থিতাঃ।।
—‘যেহেতু একই ব্রহ্ম সকলের মধ্যে রয়েছেন এবং তিনি নির্দোষ, যাঁদের মন সাম্যে প্রতিষ্ঠিত, এই জগতে থেকেও তাঁরা এই (আপেক্ষিক) অস্তিত্বকে জয় করেন; অতএব তাঁরা সত্যসত্যই ব্রহ্মে অবস্থান করেন।’
এটি এই অধ্যায়ের আর একটি অসাধারণ শ্লোক। ইহৈব, ‘এখানেই’, এই জগতেই, এই দেহেই; তৈর্জিতঃ সর্গো, ‘তাঁরা আপেক্ষিকতাকে জয় করেছেন’; যেষাং সাম্যে স্থিতং মনঃ, যাঁদের মন এই সাম্যস্থিতিতে, এই সমদৃষ্টিতে, এই ঐক্যভাবে প্রতিষ্ঠিত’। নির্দোষং হি সমং ব্রহ্ম, ‘ব্রহ্ম সমস্ত দোষ থেকে মুক্ত’, এবং সকলের মধ্যে সমভাবে বিরাজমান। তস্মাদ্ ব্রহ্মাণি তে স্থিতাঃ, ‘অতএব, তাঁরা ব্রহ্মেই অধিষ্ঠিত’। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো ইহৈব তৈর্জিতঃ সর্গো, ‘এখানেই তাঁরা আপেক্ষিকতাকে, জন্মমৃত্যুকে জয় করেছেন।’ সর্গ অর্থাৎ ‘আমাদের সম্মতি ছাড়াই আমাদের দেহ-মন-বিশিষ্ট একটি খাঁচায় আবদ্ধ হয়েছে’। এই বিষয়ে আমাদের পছন্দ-অপছন্দের কোন মূল্য নেই, কোন স্বাধীনতা নেই। আমরা জীবমাত্র। ঠিক একজন বন্দির মতো, যার কোন স্বাধীনতা নেই। কারাগারে আবদ্ধ, বেরোতে পারে না, কারণ সেখানে সে মুক্ত নয়। আমাদের জন্মও সেই রকম; আমরা এ অবস্থা বেছে নিইনি, তা আমাদের কাছে একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। এইভাবে জন্মানো—সর্গ মানে এমন জন্ম যেখানে মানুষ অসহায়—তখনই বন্ধ হবে যখন আপনি ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করবেন। এইটিই এই শ্লোকের মূল ভাব। আপনি যদি স্বাধীনভাবে জন্ম দেন, তবে সেটি সুন্দর। না হলে, নয়। যখন কোন অপরাধের জন্য কাউকে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তার গতায়াতের কোন স্বাধীনতা থাকে না। কিন্তু কেউ যদি অপরের উপকার হবে বলে স্বেচ্ছায় জেলে যায় তবে তা খুব ভালো। গান্ধীজীও জেলে গিয়েছিলেন। কেন? লক্ষ লক্ষ মানুষকে রাজনৈতিক পরাধীনতার কারাগার থেকে মুক্ত করার জন্য। উনিশ শতকের এক ইংরেজ নাগরিক, যতদূর মনে পড়ছে, ক্যানন উইল্বার ফোর্স, সামান্য কোন অপরাধ করে জেলে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি অসহায় বন্দিদের শোচনীয় অবস্থা খুঁটিয়ে লক্ষ্য করেন। জেল থেকে ছাড়া পেয়েই তিনি এই দুরবস্থার কথা সকলের সামনে এমনভাবে তুলে ধরেন যার ফলে ব্রিটেনে কারাসংস্কার করা হয়। এই ধরনের সর্গ কাম্য। কিন্তু এই সর্গ, যেখানে আমরা অসহায়, তা আমাদের কাছে কঠিন বোঝা। আমরা এখানে কেন এসেছি? কী করে আমরা এই বন্দিদশা থেকে মুক্ত হব? এটিই আমাদের প্রধান চিন্তা। এবং এই সংগ্রামে আমাদের অবতীর্ণ হতেই হবে। বেদান্ত এভাবেই মানবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে বলে। এই শ্লোকটি তাই বলছে যে, আপনি এইভাবে সংগ্রাম করে জন্মমৃত্যুর আবর্তে আবদ্ধ জীবাবস্থা থেকে মুক্ত হবার চেষ্টা করলে একদিন আপনি অবশ্যই এই ব্রহ্ম-উপলব্ধিতে পৌঁছাবেন।