শেয়ার প্রভৃতি ক্ষেত্র থেকে অর্থাগমের সম্ভাবনা। সন্তানের কর্ম প্রাপ্তির সুখবর পেতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে জটিলতা কিছুটা ... বিশদ
ভিন্ন বিশ্ব দৃষ্টিকোণ
এনআরএন এবং এসএনএস উভয়েই তাঁদের সম্পদ উত্তরাধিকারসূত্রে পাননি। তাঁরা কোনও সংস্থার কর্মচারী কিংবা শিল্প-কারখানার শ্রমিকও নন যে বেতন বা মজুরি পান। তাঁরা শিক্ষিত-যোগ্য পেশাদার এবং সামান্য ইঞ্জিনিয়ার থেকে হয়ে উঠেছেন প্রথম প্রজন্মের শিল্পোদ্যোগী। তাই, নিজ নিজ সংস্থার অর্জিত মুনাফায় তাঁদের ভাগ প্রাপ্য হয়। স্বভাবতই তাঁদের ‘ওয়ার্ল্ড ভিউ’ বা বিশ্ব দৃষ্টিকোণের সঙ্গে ‘উত্তরাধিকারী’ এবং ‘কর্মচারীদের’ দৃষ্টিভঙ্গি পৃথক। ফলত, কর্মজীবনের ভারসাম্য সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও ভিন্ন।
উত্তরাধিকারী হিসেবে যাঁরা ভাগ্যবান তাঁদের নীচ থেকে কাজ করে উপরে উঠতে হয় না। তাঁরা জানেন, এবং শিল্প-ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অন্য সকলেও জানেন যে উত্তরাধিকারীরা একদিন শীর্ষেই পৌঁছবেন। আমার উদ্বেগ এইখানে যে, ডজন খানেক পুরনো পরিবারকে বাদ দিলে বেশিরভাগ উত্তরাধিকারী তাঁদের পারিবারিক শিল্প-ব্যবসায় বাড়তি কোনও মূল্য যোগ করেননি বা সৃষ্টি করেননি নতুন সম্পদ।
দুর্ভাগ্যবশত, বরং কেউ কেউ তাঁদের পারিবারিক ব্যবসার কিছু সুনাম এবং সম্পদ ধ্বংসই করেছেন। ১৯৯১ সালের আগের এবং আজকের, ভারতের শীর্ষ ১০টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের তালিকার তুলনা করা যেতে পারে। প্রথম প্রজন্মের উদ্যোগীরা আরও বেশি সম্পদ সৃষ্টি করেছেন। শ্রমিক এবং কর্মচারীদের ক্ষেত্রে বলা যায়, তাঁরা যে মজুরি বা বেতন (এবং তার নিয়মমাফিক বৃদ্ধি) পান তাতে তাঁদের বেশিরভাগই সন্তুষ্ট। বর্তমান অবস্থা থেকে উপরে ওঠার জন্য তাঁদের না-আছে দক্ষতা এবং না-আছে উচ্চাকাঙ্ক্ষা। আমি লক্ষ্য করেছি যে, মোটামুটিভাবে উত্তরাধিকারীদের মতো ভাগ্যবান ব্যবসায়ী এবং শ্রমিক-কর্মচারীরাই, সপ্তাহে কত ঘণ্টা কাজ করা উচিত, এই প্রশ্নে এনআরএন এবং এসএনএস-এর মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন।
নিয়ম স্বাভাবিক নয়
সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করার পক্ষে সওয়াল করেছেন এনআরএন। অন্যদিকে, এসএনএস নাকি সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজ করার জন্য বলেছেন। আমি বিশ্বাস করি, তাঁরা যা বলেছেন তা তাঁদের দৃষ্টিকোণ থেকে অসম্মানজনক কিছু নয়। এনআরএন বলেছেন, “বিশ্বের মধ্যে যেসব দেশের ওয়ার্ক প্রোডাক্টিভিটি বা কর্মদক্ষতা সবচেয়ে কম, সেগুলিরই একটি হল ভারত... তাই, আমার অনুরোধ, আমাদের তরুণদের বলতে হবে, ‘এটা আমার দেশ, আমি সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করতে চাই’।’’ এই মন্তব্য ঘিরে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হলেও তিনি পিছু হটতে রাজি নন বলে জানিয়ে দেন। অন্যদিকে, একটি তারিখবিহীন ভিডিওতে দেখা গিয়েছে এসএনএস বলেছেন, “সত্যি বলতে কী, আমার দুঃখ এই যে, আমি রবিবার আপনাদের কাজে লাগাতে পারছি না। আমি রবিবারে কাজ করি। রবিবার আপনাদেরকেও কাজে লাগাতে পারলে খুশি হব।”
শিল্প শ্রমিকদের জন্য প্রতিটি ৮ ঘণ্টার দিন প্রথম আইনে পরিণত হয় ১৯১৮ সালে জার্মানিতে। তারপর থেকে ‘৮ ঘণ্টা শ্রম, ৮ ঘণ্টা বিনোদন এবং ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম’ একটি সর্বজনীন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ৮-৮-৮ এর মধ্যে একটি সুন্দর ছন্দ আছে। তবে আমি এমন কাউকে জানি না, যিনি ‘বিনোদনে’র জন্য দিনে ৮ ঘণ্টা ব্যয় করেন। আমার মনে হয়, এই ‘বিনোদন’ কথাটির মধ্যে স্নান-খাওয়া, ব্যায়াম, খেলাধুলো, সিনেমা দেখা, খবরের কাগজ ও বই পড়া, হাটবাজার করা, আড্ডা দেওয়া, গল্প করা প্রভৃতি সবই ধরা রয়েছে। ব্যাপারটাকে আপনি এইভাবে দেখলে ‘বিনোদনের’ জন্য ৮ ঘণ্টা যথেষ্ট বলে মনে হয় না!
বেশিরভাগ শিল্প শ্রমিক একই কাজ বারবার করে থাকেন। তাঁদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক ব্যক্তিই দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নতুন কিছু শিক্ষা করেন এবং জটিল কাজ উতরনোর জন্য তৈরি করে তোলেন নিজেদেরকে। ‘ডেস্ক জব’-এর প্রচলন বেশি হওয়ার পর নিয়োগকর্তারা ৮-৮-৮ নিয়মটি কপি বা অনুকরণ করেন। বেশিরভাগ ডেস্ক কর্মীর কাজও একঘেয়ে। অতএব, আমি একমত যে বেশিরভাগ শ্রমিক বা কর্মীর জন্য ৮-৮-৮ নিয়মটি গ্রহণ করা যুক্তিসঙ্গত। অটোমেশন, রোবোটিকস এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আসার সঙ্গে সঙ্গেই এই নিয়মটি পাল্টে ‘সামান্য কয়েক’ ঘণ্টার কাজের দিকে যেতে পারে। তাঁদের দীর্ঘতর সময় ধরে কাজ করার কোনও প্রয়োজন নেই, বরং ‘আরও উৎপাদনশীল’ হয়ে ওঠার জন্য তাঁদের প্রয়োজন উপযুক্ত সরঞ্জাম, প্রযুক্তি এবং সিস্টেমের। আমার ধারণা, এনআরএন এবং এসএনএস-এর মন্তব্যের লক্ষ্য এই ধরনের শ্রমিক এবং কর্মীরা নন।
উল্টো দিকে, কৃষকরা, বিশেষ করে স্বনিযুক্ত কৃষকরা তাঁদের কাজের জন্য ৮-৮-৮ নিয়ম ফলো করেন না। খামারের কাজে, প্রথম ৮ ঘণ্টা সম্ভবত ১০ বা ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত প্রলম্বিত হতে পারে। একইভাবে, ডাক্তার, আইনজীবী, বিচারক, স্থপতি, বিজ্ঞানী, অভিনেতা প্রভৃতি পেশাদাররা দিনে মাত্র ৮ ঘণ্টা কাজ করে ক্ষান্ত দেন না। আমি এমন পেশাদারদেরও চিনি, যাঁদের দৈনিক কাজের সময়কাল ১২ ঘণ্টার মতো দীর্ঘ এবং শনিবার তো বটেই অনেক ক্ষেত্রে তা পেরিয়ে রবিবারটিও তার মধ্যে জুড়ে যায়। খুব কম সফল পেশাদারই, স্বেচ্ছায় গৃহীত দীর্ঘ কাজের সময় সম্পর্কে অসন্তোষ ব্যক্ত করেন। অতএব, তথাকথিত নিয়মটি সমস্ত মানুষের ক্ষেত্রে অভিন্নভাবে প্রযোজ্য বলে ধরে নেওয়ার কোনও বিষয় নয়।
নিজের জন্য আবিষ্কার করুন
আমি দিনের মধ্যে দীর্ঘসময় কাজ করার ব্যাপারটা উপভোগই করি। তবে আমার দিক থেকে ‘কাজ’-এর সংজ্ঞার মধ্যে রয়েছে আইন প্র্যাকটিস, সংসদীয় কাজকর্ম, নিজস্ব পড়া ও লেখা, সাধারণ মানুষের কথাবার্তা শোনা, দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কথা বলা, ভাষণদান, পছন্দের সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ প্রভৃতি। ঘুমনোর বাইরের প্রতিটি ঘণ্টাকেই আমি ‘কাজের সময়’ বলে বিবেচনা করি। কর্মজীবনের ভারসাম্য এমন একটি জিনিস যা ‘প্রতিটি’ ব্যক্তি মানুষকে নিজের জন্য ‘আবিষ্কার’ করতে হয় এবং খুশি যে, আমি আমার প্রয়োজনের জিনিসটি আবিষ্কার করেছি।
এনআরএন এবং এসএনএস ভীষণভাবে
সফল এবং তাঁরা শীর্ষেই পৌঁছেছেন। তাই আমি মনে করি, ভারতীয়দের ‘দীর্ঘ’ সময় কাজের কথা বলার পক্ষে যোগ্য ব্যক্তি তাঁরা। কিছু ট্রোল এবং মিম
থেকে যে ইঙ্গিত করা হয়েছে, সেসব আর্থিকভাবে পুরস্কৃত হওয়ার মতো কোনও বিষয় বলে আমি মনে করি না। আমি এমন অনেক পুরুষ ও নারীকে চিনি, যাঁরা ব্যক্তিগত বিপুল আয় বা সম্পদের ভারে বেসামাল হয়ে যাননি। তাঁরা বরং সুশৃঙ্খল জীবনযাপনই করেন, সেইমতো সাধারণ খাবার খান,
মদ্যপান করেন না, জাঁকালো নয় সুন্দর ছিমছাম পোশাক পরেন। তাঁরা যথেষ্ট বিনয়ী এবং দয়ালুও বটেন। আমি বিশ্বাস করি, এনআরএন এবং এসএনএস উচ্চাকাঙ্ক্ষী তরুণ প্রজন্মকে এই শিক্ষা গ্রহণের জন্যই উৎসাহিত করেছেন যে, দীর্ঘ সময় ধরে উৎপাদনশীল কাজই একটি উন্নয়নশীল দেশকে সত্যিকার অর্থে ধনী করে তুলবে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনমান উন্নত হবে তাতেই।
আমার মতে, এনআরএন এবং এসএনএস-এর মন্তব্যের মধ্যে বিতর্কিত কিছু নেই। তেমন যদি কিছু থেকে থাকে, তাঁদের কথার সেই অনিচ্ছাকৃত প্রভাব মানুষকে ভাবার জন্য প্ররোচিত করতে পারে, যা ‘ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্স’-এর খোঁজে খারাপ কিছু নাও হতে পারে!