পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
আমি কোনও মতবাদের সমালোচনা করাবার জন্য এখানে এই কথাগুলি বলছি না। আমি শুধু ব’লে যাচ্ছি, স্বামী বিবেকানন্দ কিরূপ ভাবতেন এবং কিরূপ ভাবধারা অবলম্বনে এই রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এই ভাবধারা তিনি পেয়েছিলেন তাঁর গুরু শ্রীরামকৃষ্ণদেবের পদপ্রান্তে ব’সে। দু-একটি ঘটনা বললে আপনারা বিষয়টি বুঝতে পারবেন। একদিন শ্রীরামকৃষ্ণ জিজ্ঞেস করেছিলেন নরেন্দ্রনাথকে—‘তুই কি চাস্? নরেন্দ্রনাথ বলেছিলেন—‘আমি নির্বিকল্প সমাধিতে ডুবে থাকতে চাই। তারপর শরীররক্ষার জন্যে খানিকটা নীচে নেমে এসে আবার সমাধিতে চলে যেতে চাই।’ শ্রীরামকৃষ্ণ সন্তুষ্ট না হয়ে বলেছিলেন—‘ছিঃ ছিঃ, তুই এত বড় আধার—তোর মুখে এই কথা! আমি ভেবেছিলুম, তুই তো একটা মস্ত বড় বট গাছের মতো বেড়ে উঠবি, যার তলায় হাজার হাজার লোক আশ্রয় পাবে—তা না হয়ে তুই কিনা স্বার্থপর হয়ে শুধু নিজের মুক্তি চাস্।’ অবশ্য স্বামী বিবেকানন্দের জীবনে নির্বিকল্প সমাধি লাভ হয়েছিল, কিন্তু সেকথা এখানে আমাদের আলোচ্য নয়। আমাদের আলোচ্য হচ্ছে স্বামীজীর সমাজদৃষ্টি, মানুষের প্রতি তাঁর বুকভরা দরদ—যা তিনি উত্তরাধিকার-সূত্রে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের কাছ থেকে পেয়ে কাজে পরিণত করেছিলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণদেব গিয়েছেন শ্রীযুক্ত মথুরানাথ বিশ্বাসের সঙ্গে তীর্থদর্শনে। গিয়ে উপস্থিত হলেন দেওঘরের কাছে। গরিব লোকেরা সেখানে—খেতে পায় না, পরতে পায় না, জীর্ণ-শীর্ণ কঙ্কাল-সার চেহারা, উস্কো-খুস্কো চুল। তাদের দেখে শ্রীরামকৃষ্ণদেব বললেন—‘এদের একমাথা ক’রে তেল দাও, একখানা ক’রে নতুন কাপড় দাও, আর পেটটা ভরে খাইয়ে দাও।’ মথুরাবাবু বিষয়ীলোক। শ্রীরামকৃষ্ণের দিকে তাকিয়ে বললেন—‘বাবা, এদের সংখ্যা ত নেহাৎ কম নয়। এত টাকা যদি এখানে খরচ করি, তা হ’লে তীর্থদর্শন হবে কি ক’রে?’ শ্রীরামকৃষ্ণ বললেন, ‘তোর কাশী আমি যাবো না, আমি এদের কাছেই থাকবো। এদের কেউ নেই, এদের ছেড়ে যাবো না।’ কথাটা ভেবে দেখতে হবে। কথাটা শ্রীরামকৃষ্ণের, যিনি মৃন্ময়ী দেবীতে চিন্ময়ীকে দর্শন করেছিলেন এবং হাতে-নাতে দেখিয়ে প্রমাণ ক’রে দিয়েছিলেন যে, জিন্দুরা পৌত্তলিক নয়, তারা প্রতিমাকে পূজো করে না, প্রতিমাতে ভগবানকেই পূজো করে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে তিনি এটা দেখিয়ে দিয়েছিলেন বলেই হিন্দুধর্ম আজও বেঁচে আছে। সেই শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন—আমি তীর্থদর্শনে যাবো না। কথাটা কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন নয়। এটা আমরা ভাগবতেও দেখতে পাই।