পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
যতদিন আমরা শুধু বুদ্ধির রাজ্যে বাস করিতেছি, ততদিন আমরা এইটুকু মাত্র করিতে পারি—যাহা ভাবিয়াছি খুঁজিয়াছি, তাহার গবেষণা নিরপেক্ষভাবে করিতে পারি, অবিরাম নূতন নূতন কল্পনা-ধারণাকে (যত রকম কল্পনা-ধারণা সম্ভবপর) এবং নানা প্রকার দার্শনিক বিশ্বাস মতবাদ ও সিদ্ধান্তকে মনে স্থান দিতে পারি। একটা উদার নমনীয় বুদ্ধির পক্ষে এইরূপ নিঃস্বার্থ সত্যান্বেষণই হইবে একমাত্র সম্ভবপর মূলভাব। কিন্তু এইভাবে কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হইলেও তাহা আনুমানিক হইবে মাত্র; তাহার কোন আধ্যাত্মিক মূল্য থাকিতে পারে না; আত্মা যে ধ্রুব অভিজ্ঞতা বা আধ্যাত্মিক নিশ্চয় খুঁজিতেছে, এই মানস সিদ্ধান্তও তাহা দিতে পারিবে না।
যদি বুদ্ধি আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ যন্ত্র হয়, যদি অতিভৌতিক সত্যে পৌঁছিবার আর কোন উপায় না থাকে, তাহা হইলে একটা বুদ্ধিসঙ্গত উদার অজ্ঞেয়বাদই আমাদের চরম ভাব হইতে বাধ্য। সৃষ্টিগত বস্তুরাজিকে কতকদূর জানা যাইতে পারে, কিন্তু পরম তত্ত্ব এবং মনের অতীত সবকিছু আমাদের কাছে চিরদিন অজ্ঞেয় থাকিবেই। শুধু যদি মনের পরস্তাৎ একটা শ্রেষ্ঠতর চেতনা থাকে আর সেই চেতনা আমাদের প্রাপ্তব্য হয়, তবেই আমরা চরম সত্যকে জানিতে পারি, তাহার মধ্যে প্রবেশ করিতে পারি। একটা মহত্তর চেতনা আছে কি নাই এ সম্বন্ধে বুদ্ধির অনুমান কি ন্যায়শাস্ত্রানুমোদিত যুক্তি আমাদিগকে বহুদূর লইয়া যাইতে পারে না। আমাদের যাহা আবশ্যক তাহা হইল এই চেতনার অনুভূতি লাভের, এই চেতনাতে উপনীত হইবার, ইহাতে প্রবেশ করিবার, ইহাতে বাস করিবার উপায়। ইহা যদি আমরা প্রাপ্ত হইতে পারি, তাহা হইলে বুদ্ধির যুক্তি ও অনুমান আপন হইতেই গৌণ বিষয় হইয়া দাঁড়াইবে, আর তাহার কোন প্রয়োজনই থাকিবে না। দর্শন শাস্ত্র ও পরম সত্যের বুদ্ধিগত অভিব্যক্তি থাকিতে পারে কিন্তু প্রধানতঃ এই মহত্তর আবিষ্কারকে এবং তাহার উপাদান সমূহের যতটা মনের ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব ততটাকে, প্রকাশ করিবার নিমিত্ত সেইসব লোকের জন্য যাহারা এখনও মনোবুদ্ধিতে বাস করিতেছে।
ব্রাডলী প্রভৃতি পাশ্চাত্য ভাবুকদের কথা তুমি যাহা জিজ্ঞাসা করিয়াছ, তাহার উত্তর তুমি পাইলে, দেখিতেছ ত—যে ভাবুকগণ ‘‘চিন্তার অতীত সেই অপর তত্ত্বের’’ ধারণাতে বুদ্ধিগত চিন্তার দ্বারা পৌঁছিয়াছেন, অথবা ব্রাডলীর মত আপন সিদ্ধান্তরাজিকে এমন ভাষায় ব্যক্ত করিতে চেষ্টা করিয়াছেন যাহা ‘‘আর্য্য’’ পত্রিকার ভাষা মনে করাইয়া দেয়। এই ধারণা ত নূতন নয়, ইহা বেদের মতই পুরাতন। নানা বিভিন্ন রূপে ইহা বার বার ব্যক্ত হইয়াছিল, বৌদ্ধদর্শনে, সুফী-দর্শনে, খৃষ্টীয় সূক্ষ্ম অতিমানস অনুভুতিতে।