যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
জ্ঞানমুদ্রায় কৃষ্ণায় গীতামৃতদুহে নমঃ।।
হে কৃষ্ণ, আপনি হচ্ছেন সমুদ্রজাত লক্ষ্মীর আশ্রয় এবং যাঁরা সর্বতোভাবে আপনার শ্রীপাদপদ্মে শরণাগত হন, তাঁদেরও আশ্রয়। ভক্তদের কাছে আপনি হচ্ছেন কল্পবৃক্ষ-সদৃশ। আপনার এক হাতে শোভা পায় গোপবালকের যষ্টি, আর অন্য হাত জ্ঞানমুদ্রা-বিশিষ্ট। হে পরমেশ্বর ভগবান, আমি আপনার শ্রীপাদপদ্মে প্রণতি নিবেদন করি, কারণ আপনি গীতারূপ অমৃতের দোহনকর্তা।
শ্রীপাদ শঙ্করাচার্য সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, ভজ গোবিন্দং ভজ গোবিন্দং ভজ গোবিন্দং মূঢ়মতে। অর্থাৎ, মূর্খের দল, গোবিন্দের ভজনা কর, গোবিন্দের ভজনা কর, গোবিন্দের ভজনা কর। তিনি আরও বলেছেন যে, নারায়ণ স্বয়ং হচ্ছেন ভগবদ্গীতার বক্তা। কিন্তু তবুও তারা তাদের গবেষণার মাধ্যমে ভগবানকে জানতে চায়, ফলে তারা অধিক থেকে অধিকতর ক্লেশ ভোগ করে তাদের সময়ের অপচয় করে। নারায়ণ কখনই ক্লিষ্ট নন অথবা দরিদ্র নন; পক্ষান্তরে তিনি হচ্ছেন সমস্ত ঐশ্বর্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মীর পতি এবং তিনি সমস্ত জীবের পতি। শঙ্করাচার্য নিজেকে ‘ব্রহ্ম’ বলে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তিনি স্বীকার করেছেন যে, নারায়ণ বা শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন সব রকমের জড় সংস্পর্শ রহিত পরম পুরুষ। তিনি শ্রীকৃষ্ণকে ‘পরমব্রহ্ম’ বলে বর্ণনা করে তাঁর উদ্দেশ্যে প্রণতি নিবেদন করেছেন, কারণ তিনি হচ্ছেন সকলের আরাধ্য। যারা ভগবদ্গীতার তত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারে না, (অথচ ভগবদ্গীতার ভাষ্য রচনা করে) কেবল সেই সব মূর্খ এবং শ্রীকৃষ্ণের শত্রুরাই বলে, “সবিশেষ পুরুষ শ্রীকৃষ্ণের কাছে আমাদের আত্মনিবেদন করতে হবে না, জন্মহীন, অনাদি, শাশ্বত যে সত্তা শ্রীকৃষ্ণের মুখ দিয়ে এই কথাগুলি বলাচ্ছেন, তাঁর কাছে আত্মনিবেদন করতে হবে।” দেবতারা যা স্পর্শ করতে পর্যন্ত ভয় পায়, মূর্খেরা সেই বিষয়ে নাক গলাতে চায়। শঙ্করাচার্যের মতো সর্বশ্রেষ্ঠ নির্বিশেষবাদী যেখানে শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর রচিত ভগবদ্গীতার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন, সেখানে মূর্খরা বলে যে, “আমাদের শ্রীকৃষ্ণের কাছে আত্মনিবেদন করতে হবে না।” এই ধরনের মূর্খ মানুষেরা জানে না যে, শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমতত্ত্ব এবং তাঁর অন্তর এবং বাহিরের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। দ্বন্দ্বভাব-সম্পন্ন এই জড় জগতেই কেবল অন্তর এবং বাহির ভিন্ন। চিন্ময় জগতে এই ধরনের কোন পার্থক্য নেই, কারণ চিন্ময় জগতের সব কিছুই সচ্চিদানন্দময় এবং নারায়ণ বা কৃষ্ণ হচ্ছেন সেই চিন্ময় জগতের পরম পুরুষ। চিন্ময় জগতে প্রকৃত সত্তা রয়েছে, এবং সেই সত্তার দেহ এবং দেহীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
সর্বোপনিষদো গাবো দোগ্ধা গোপালনন্দনঃ।
পার্থো বৎসঃ সুধীর্ভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃতং মহৎ।।
সমস্ত উপনিষদ হচ্ছে গাভী, গোপালনন্দন শ্রীকৃষ্ণ দোহনকর্তা, অর্জুন বৎস, পরম অমৃত গীতা হচ্ছে দুগ্ধস্বরূপ। আর যাঁরা যথার্থই পণ্ডিত, যাঁদের চিত্ত সর্বতোভাবে নির্মল হয়েছে, তাঁরাই সেই দুগ্ধামৃত পান করেন।
চিন্ময় বৈচিত্র্য হৃদয়ঙ্গম করতে না পারলে, পরমেশ্বর ভগবানের অপ্রাকৃত লীলাবিলাস যে কি বস্তু তা বোঝা যায় না। ব্রহ্মসঙ্ঘিতায় বলা হয়েছে যে, শ্রীকৃষ্ণের নাম, রূপ, গুণ, লীলা, পরিকর ইত্যাদি সব কিছুই হচ্ছে আনন্দচিন্ময়রস—অর্থাৎ, তাঁর সঙ্গে চিন্ময়ভাবে যুক্ত সব কিছুই সৎ, চিৎ এবং আনন্দময়। তাঁর নাম, রূপ ইত্যাদি সব কিছুই অন্তহীন। তা জড় জগতের বস্তুর মতো সীমিত নয়। ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে যে, মূর্খরাই কেবল তাঁকে অবজ্ঞা করে।