যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
শ্রবণ-কীর্তনাদিরূপ জলসেচনের প্রভাবে রোপিত ভক্তিলতার বীজ হইতে অঙ্কুর জন্মে। এই অঙ্কুরই আবার বর্ধিত হইয়া ভক্তিলতায় পরিণত হয়। জলসেচনের প্রভাবে এই লতাই ক্রমশঃ বাড়িতে থাকে, বড়িতে বাড়িতে ব্রহ্মাণ্ডকে ভেদ করিয়া, অতিক্রম করিয়া উপরের দিকে উঠিতে থকে। কোনও প্রকার লতা যখন বাড়িতে থাকে, তখন কেবলই সে উপরের দিকে উঠিতে থাকে। কোনও আশ্রয় পাইলে বাড়িতে বাড়িতেও তাহাতে জড়াইয়া পড়িলে আর উপরে উঠিতে পারে না। প্রাকৃত ব্রহ্মাণ্ডে স্বর্গলোক, তপোলোক, সত্যলোক প্রভৃতি ভোগলোক আছে, কর্মফল অনুসারে জীব এই সকল লোকে আসিয়া থাকে। শ্রবণ-কীর্তনাদিরূপ সেচজল পাইয়া ভক্তিলতা বাড়িতে বাড়িতে এই সকল ভোগলোককে অতিক্রম করিয়া চলিয়া যায়। ভাবার্থ এই যে, যাঁহার চিত্তে ভক্তির উন্মেষ হইয়াছে কোনও ভোগলোকের সুখভোগের আকর্ষণই তাঁহাকে মুগ্ধ করিতে পারে না। তাঁহার মনের গতি প্রাকৃত ব্রহ্মাণ্ড ছাড়াইয়া অপ্রাকৃত ভগবদ্ধামের দিকে ধাবিত হয়। ভক্তির প্রভাবে তাঁহার সমস্ত কর্মফল নষ্ট হইয়া যায়, তাই কোন ভোগলোকই তাঁহার ভক্তিপূতচিত্তের ঊর্দ্ধগতিকে বাধা দিতে পারে না।
ভক্তিলতা বিরজাকে ভেদ করিয়া চলিয়া যায়। বিরজা হইল কারণসমুদ্র। মহা প্রলয়ে জীব সূক্ষ্মরূপে এই কারণসমুদ্রে কর্মফলকে আশ্রয় করিয়া অবস্থিতি করে। ভক্তিলতা এই কারণসমুদ্রকেও ভেদ বা অতিক্রম করিয়া চলিয়া যায়, কারণসমুদ্র ও কোনও বস্তুকে আশ্রয় করিয়া থাকিয়া যায় না। ভাবার্থ এই যে, যাঁহার হৃদয়ে ভক্তির উন্মেষ হইয়াছে তাঁহার কর্মফল সমস্ত নষ্ট হইয়া যায় সুতরাং মহা প্রলয়েও তাঁহার ভক্তিপূত চিত্তের ঊর্দ্ধগতিকে বাধা দিতে পারে না অর্থাৎ মহা প্রলয়েও তাঁহাকে কর্মল আশ্রয় করিয়া বিরজায় থাকিতে হয়না, যেহেতু তাঁহার কর্মফল নাই।
ভক্তিলতা ব্রহ্মলোককেও ভেদ করিয়া চলিয়া যায়। বিরজা ও পরব্যোমের পরবর্তী জ্যোতির্ময় ধামকে ব্রহ্মলোক বা সিদ্ধলোক বলে। যাঁহারা জ্ঞানমার্গের সাধন করিয়া সাযুজ্য-মুক্তির অধিকারী হন, অথবা যে সমস্ত দৈত্য শ্রীহরি কর্তৃক নিহত হন, তাঁহারা এই নিত্যধামে সূক্ষ্ম জীবস্বরূপে থাকেন। ভক্তিলতা এই ব্রহ্মলোককেও ভেদ করিয়া চলিয়া যায়, এখানেও অপেক্ষা করে না।
তীর্থ গোস্বামী রচিত ‘মহৎ কৃপা’ থেকে