শরীর-স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে উন্নতির সম্ভাবনা। গুপ্তশত্রুতার মোকাবিলায় সতর্কতা প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষায় বিলম্বিত সাফল্য।প্রতিকার: ... বিশদ
বিদ্যাসাগরকে বিধবাবিবাহ-প্রবর্তনকারী ও বহুবিবাহ-রোধকারী মহাবীর বলিয়া উল্লেখ করিলেন। কিন্তু তৎসম্বন্ধে তাঁহার একটি প্রিয় গল্প ছিল: একদিন তিনি ব্যবস্থাপক সভা হইতে—এই চিন্তা করিতে করিতে গৃহে ফিরিতেছেন, ঐরূপ স্থানে সাহেবী পরিচ্ছদ পরিধান করা উচিত কিনা, এমন সময়ে তিনি দেখিলেন যে, ধীরে সুস্থে এবং গুরুম্ভীর চালে গৃহে-গমনরত এক স্থূলকায় মোগলের নিকট এক ব্যক্তি দ্রুতপদে আসিয়া সংবাদ দিল, ‘মহাশয়, আপনার বাড়িতে আগুন লাগিয়াছে।’ মোগলপ্রবরের গতির হ্রাসবৃদ্ধি ঘটিল না; সংবাদবাহক ইঙ্গিতে ঈষৎ বিস্ময় প্রকাশ করিয়াছিল। তৎক্ষণাৎ প্রভু সক্রোধে ফিরিয়া কহিলেন, ‘পাজি! খান কয়েক বাখারি পুড়িতেছে বলিয়া আমায় বাপ-পিতামহের চাল ছাড়িয়া দিতে বলিস্!’ এবং বিদ্যাসাগর মহাশয়ও তাঁহার পশ্চাতে আসিতে আসিতে দৃঢ় সঙ্কল্প করিলেন যে, ধুতি-চাদর এবং চটিজুতা কোনক্রমে ছাড়া হইবে না; ফলে দরবার-যাত্রাকালে একটা জামা ও একজোড়া জুতা পর্যন্ত পরিলেন না।
‘‘বালবিধবাগণের বিবাহ চলিতে পারে কি না?’’— মাতার এইরূপ সাগ্রহ প্রশ্নে বিদ্যাসাগরের শাস্ত্রপাঠার্থ এক মাসের জন্য নির্জন গমনের চিত্রটি খুব চিত্তাকর্ষক হইয়াছিল। নির্জন বাসের পর তিনি ‘‘শাস্ত্র এরূপ পুনর্বিবাহের প্রতিপক্ষ নহেন’’—এই মত প্রকাশ করিয়া পণ্ডিতগণের সম্মতি-পত্র সংগ্রহ করিলেন। কতিপয় দেশীয় রাজা বিপক্ষে দণ্ডায়মান হওয়ায় পণ্ডিতগণ নিজ নিজ স্বাক্ষর প্রত্যাহার করিলেন; সুতরাং সরকার আন্দোলনের স্বপক্ষে সাহায্য করিতে কৃতসঙ্কল্প না হইলে ইহা কখনই আইনরূপে পরিণত হইত না। স্বামীজী বলিলেন, ‘‘আর আজকাল এই সমস্যা বরং এক অর্থনীতিসংক্রান্ত ব্যাপার হইয়া দাঁড়াইয়াছে।’’
যে ব্যক্তি কেবল নৈতিক বলে বহুবিবাহকে হেয় প্রতিপন্ন করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন, তিনি যে প্রভূত আধ্যাত্মিকশক্তি সম্পন্ন ছিলেন, তাহা আমরা অনুধাবন করিতে পারিলাম। যখন শুনিলাম যে, এই মহাপুরুষ ১৮৬৪ খৃস্টাব্দের দুর্ভিক্ষে, অনাহারে ও রোগে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোক কালগ্রাসে পতিত হওয়ায় মর্মাহত হইয়া ‘আর ভগবান মানি না’ বলিয়া সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞেয়বাদের চিন্তাস্রোতে গা ঢালিয়া দিয়াছিলেন, তখন ‘পোশাকী’ মতবাদের উপর ভারতবাসীর কিরূপ অনাস্থা, তাহা সম্যক উপলব্ধি করিয়া আমরা যারপরনাই বিস্ময়াভিভূত হইয়াছিলাম।