শরীর-স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে উন্নতির সম্ভাবনা। গুপ্তশত্রুতার মোকাবিলায় সতর্কতা প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষায় বিলম্বিত সাফল্য।প্রতিকার: ... বিশদ
বিশ্বের মূলীভূতা চৈতন্যময়ী পরমা শক্তির সহিত ঐকাত্ম্যবোধে প্রতিষ্ঠিত হয়ে, আরো অনেক মহাযোগিনী বাগ্দেবীর মতই সারা বিশ্বের যাবতীয় খেলা—আপনারই আত্মার অভিব্যক্তি ব’লে অনুভব ও বর্ণন করেছেন। ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন—যাঁরা যোগযুক্তাত্মা, তাঁরা বিশ্বের সব পদার্থকে নিজের মধ্যে এবং নিজেকে সব পদার্থের মধ্যে দর্শন ক’রে সর্ব্বত্র সমদর্শী হন, সব ব্যাপারে সমরস আস্বাদন করেন। পার্থসারথি শ্রীকৃষ্ণ এই মহাযোগের দৃষ্টিতেই বিশ্ববৈচিত্র্যের সর্ব্বত্র আপনারই অনন্ত বিভূতির পরিচয় দিয়েছেন এবং অর্জ্জুনের দিব্য চক্ষু উন্মীলিত ক’রে আপনার বিশ্বরূপ প্রদর্শন করেছেন। আমাদের চেতনা পরমাত্মার সহিত যোগযুক্ত হয়ে একাত্মভাবে প্রতিষ্ঠিত হ’লে, পরমাত্মাকেই অনন্ত শক্তির মূলাধার উপলব্ধি করে তৎসূত্রে নিজেকে অনন্ত শক্তির আধার ব’লে অনুভব করে।
সমস্ত বিশ্বপ্রপঞ্চের যে মূল তত্ত্ব বৈজ্ঞানিকগণ পরোক্ষভাবে অনুসন্ধান করেন, দার্শনিকগণ যুক্তিবিচার দ্বারা প্রতিপাদন করতে চেষ্টা করেন এবং জ্ঞানী ভক্ত মহাযোগিগণ ধ্যানযোগে প্রত্যক্ষ উপলব্ধি করেন, তাঁকে মহাশক্তিময়ী চৈতন্যসত্তা বা ব্রহ্ম বা পরমাত্মা বলা হয়ে থাকে, চৈতন্যময়ী মহাশক্তি বা মহাদেবীও বলা হয়ে থাকে। বস্তুতঃ চৈতন্য ও শক্তির মধ্যে ভেদ নাই। চৈতন্যকে শক্তিমান্ ব’লে শক্তির সহিত একটা অবান্তর ভেদ কল্পনা করে দার্শনিক বিচারের জটিলতা সৃষ্টি করা অনেক দর্শনাচার্য্য আবশ্যক বোধ করতে পারেন, এবং এই ভেদের মধ্যে তাঁদের নিত্যমিলনের রহস্য উদ্ঘাটনের তাঁরা ঘর্ম্মাক্তকলেবর হয়ে থাকেন। বৈজ্ঞানিকগণ শক্তি ও বস্তু—শক্তি ও শক্তিমানের ভেদ অনেকটা নিরসন ক’রে দিয়েছেন ও দিচ্ছেন। বাস্তবিকপক্ষে শক্তি ও বস্তুর কোন ভেদ নাই। শক্তির ভিতরেই বস্তুর সব পরিচয়। শক্তির ঘনীভূত অবস্থার নামই বস্তু এবং বস্তুর ক্রিয়াহীন অবস্থার নাম শক্তি। বস্তুর তটস্থ লক্ষণ সব বাদ দিলে স্বরূপ লক্ষণ অর্থাৎ শক্তিহীন লক্ষণ শূন্যেই পর্য্যবসিত হয়। বস্তুর ভিতরে যখন স্বপ্রকাশ জ্ঞানশক্তি বা অনুভব শক্তির এবং স্বতন্ত্র ক্রিয়াশক্তি বা আত্মপরিণামশক্তির পরিচয় পাওয়া যায়, তখনই সেই শক্তিকে চৈতন্যশক্তি এবং তদাধার বস্তুকে চৈতন্যস্বরূপ বলা হয়ে থাকে। ‘‘পরাস্য শক্তির্বিবিধৈব শ্রূয়তে, স্বাভাবিকী জ্ঞানবলক্রিয়া চ’’—ইহা চৈতন্যস্বরূপেরই বাস্তব লক্ষণ।
শক্তিপরিণামময় এই বিশ্বজগতের মূলকারণ বা মূলতত্ত্বকে অভিন্নশক্তি শক্তিমান্ চৈতন্যস্বরূপ পরমাত্মা বা ব্রহ্ম বলেও ধারণা করা চলে, কিংবা নিত্যা স্বতন্ত্রা আত্মপ্রকাশ-স্বভাবা চৈতন্যময়ী মহাশক্তি বা মহাদেবী ব’লেও ধারণা করা চলে।
মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর ‘চণ্ডী চিন্তা’ থেকে