শরীর-স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে উন্নতির সম্ভাবনা। গুপ্তশত্রুতার মোকাবিলায় সতর্কতা প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষায় বিলম্বিত সাফল্য।প্রতিকার: ... বিশদ
খণ্ডব্যক্তিত্ব যখন পার হয়ে যাব, তখনই আমরা হয়ে উঠব সত্যপুরুষ। অহং ছিল সহায়, অহংই এখন অন্তরায়। মানবসাধারণকে যখন পার হয়ে যাব, তখনই আমরা হয়ে উঠব মানুষ। পশু ছিল সহায়, পশুই এখন অন্তরায়।
বিচারকে সুসম্বদ্ধ অন্তর্বোধে রূপান্তরিত কর—তোমার সবখানি নিয়ে তুমি জ্যোতির্ম্ময় হয়ে ওঠ। এই তোমার লক্ষ্য।
চেষ্টাকে অন্তরাত্মস্থ সামর্থ্যের প্রশান্ত ও সর্ব্বজয়ী পরিপ্লাবনে রূপান্তরিত কর—তোমার সবখানি নিয়ে তুমি আনন্দময় হয়ে ওঠ। এই তোমার লক্ষ্য।
খণ্ডিত ব্যষ্টিসত্তাকে বিশ্বপুরুষে রূপান্তরিত কর—তোমার সবখানি নিয়ে তুমি ভগবৎময় হয়ে ওঠ। এই তোমার লক্ষ্য।
পশুকে পশুপতিরূপে পরিণত কর। তোমার সবখানি নিয়ে তুমি গোষ্ঠপতি শ্রীকৃষ্ণময় হয়ে ওঠ। এই তোমার লক্ষ্য।
এখন আমি যা করতে পারি না, তা হল পরে আমি যা করতে পারব তার চিহ্ন। ‘‘করা অসম্ভব’’ এই ভাব হল যা কিছু করা সম্ভব তার সূত্রপাত। এই নশ্বর বিশ্ব ছিল একটা স্ববিরোধী অসম্ভব জিনিষ, তাই ত শাশ্বতপুরুষ তাঁর সত্তা থেকে একে সৃষ্টি করে ধরলেন।
অসম্ভব হল ভবিষ্যতে সিদ্ধ হবে এমন সব বৃহত্তর সম্ভাবনার সমষ্টি। তার অর্থ এই যে একটা দূরের পৈঠা, একটা অনতিবাহিত পথ অন্তরালে রয়ে গেছে। মানবজাতির অগ্রগতি যদি চাও, তবে পূর্ব্বকল্পিত ধারণা সব জোর করে ঠেলে চল। চিন্তা-শক্তি এভাবে আঘাত পেয়েই জেগে ওঠে, সৃষ্টিক্ষম হয়; নতুবা সে একটা যন্ত্রবৎচালিত পুনরাবৃত্তির মধ্যে আবদ্ধ থাকে আর একেই তার সত্যক্রিয়া বলে ভুল করে।
নিজের অক্ষটি ঘিরে আবর্ত্তনই মানবাত্মার একমাত্র গতি নয়, তার আছে আবার অফুরন্ত জ্যোতির উৎস এক সূর্য্যের চারিদিকে পরিক্রমণ।
প্রথমে নিজের অন্তরে নিজের সম্বন্ধে সচেতন হও, তারপর চিন্তাপূর্ব্বক কাজ কর। জীবন্ত চিন্তামাত্রই একটা জগৎসৃষ্টির আয়োজন। বাস্তব ক্রিয়া মাত্রই হল প্রমূর্ত্ত চিন্তা। জড়জগৎ বর্ত্তমান, এই জন্য যে ভগবানের আত্মচেতনায় এক দিব্য-ভাবনার লীলা ফুটে উঠেছিল।
অস্তিত্বের অপরিহার্য্য উপাদান বা অস্তিত্বের কারণ চিন্তা নয়, চিন্তা হল প্রকাশের উপায়। নিজের অন্তরে আমি যা দেখি তাই আমি হয়ে উঠি। চিন্তা যা কিছুর ইঙ্গিত আমাকে এনে দেয়, তাই আমি করতে পারি; চিন্তা যা-কিছু আমার মধ্যে ব্যক্ত করে ধরে, তাই আমি হতে পারি; চিন্তা যা-কিছু আমার মধ্যে ব্যক্ত করে ধরে, তাই আমি হতে পারি। নিজের উপর মানুষের নিজের থাকবে এই অটল আস্থা, কারণ তার অন্তরে রয়েছেন ভগবান।
অতীতে মানুষ যা করেছে চিরকাল তারই পুনরাবৃত্তি করে চলা আমাদের কাজ নয়, আমাদের কাজ হল অভিনব সিদ্ধি, অচিন্ত্যপূর্ব্ব ঈশিতা সব অর্জ্জন করা। কাল, আত্মা আর জগৎ আমাদের দেওয়া হয়েছে আমাদের কর্ম্মক্ষেএরূপে, দিব্য-দৃষ্টি ও আশা আর সৃষ্টিক্ষম কল্পনা হল আমাদের প্রেরণাদাত্রী, আর সঙ্কল্প, চিন্তা ও শ্রম হল আমাদের সর্ব্বসিদ্ধিপ্রদ উপায়।
নূতন কি জিনিষ আমাদের এখনও সাধন করবার আছে? প্রেম, —কারণ এ-যাবৎ আমরা কেবল দ্বেষ ও আত্মতুষ্টি সাধন করেছি; জ্ঞান, —কারণ এ যাবৎ আমরা কেবল প্রমাদ, ইন্দ্রিয়-প্রতীতি আর মানস ধারণা সাধন করেছি; আনন্দ, —কারণ এ-যাবৎ আমরা কেবল সুখ আর দুঃখ আর উদাসীনতা সাধন করেছি; শক্তি, —কারণ এ-যাবৎ আমরা কেবল দুর্ব্বলতা, চেষ্টা আর পরাজয়-পূর্ণ বিজয় সাধন করেছি; জীবন, —কারণ এ-যাবৎ আমরা কেবল জন্ম, বৃদ্ধি ও মৃত্যু সাধন করেছি; একত্ব, —কারণ এ-যাবৎ আমরা কেবল সংগ্রাম আর সহযোগ মাত্র সাধন করেছি।
শ্রীঅরবিন্দের ‘চিন্তা-কণা-দৃষ্টি-নিমেষ’ থেকে