শরীর-স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে উন্নতির সম্ভাবনা। গুপ্তশত্রুতার মোকাবিলায় সতর্কতা প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষায় বিলম্বিত সাফল্য।প্রতিকার: ... বিশদ
এই পরিদৃশ্যমান জগতে আমরা যে এত বিভিন্ন স্তরের, বিভিন্ন প্রকারের শক্তিপরিণাম দেখি, এত অভিনব সৃষ্টি ও আকস্মিক ধ্বংস দেখি, এত নিয়মের বাঁধন ও তার সাথে এত নিয়মের ব্যভিচার দেখি, এর মধ্যেও আমাদের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি একথা অস্বীকার করতে পারে না যে, দেশ কাল দ্বারা অপরিচ্ছিন্ন, অসংখ্য সৌরমণ্ডল নক্ষত্রমণ্ডল বিশিষ্ট, অশেষ জটিলতা-সমাকীর্ণ এই বিশ্বপ্রপঞ্চ একটা রহস্যময় ঐক্যসূত্রে গ্রথিত। এর একটা আভ্যন্তরীণ যোগসূত্র আছে, এর সর্ব্বাবয়বে একটা অদ্ভুত সামঞ্জস্য আছে। একটা প্রাণশক্তি যেন এই বিশাল ব্রহ্মাণ্ডকে বিধৃত ক’রে রয়েছে। এটা যেন কারো একটা বিরাট দেহ; একথাটা শুধু কবিকল্পনা মনে হয় না।
এই বিরাট বিশ্বের একটা ক্ষুদ্র অংশ আমাদের পৃথিবী। এই পৃথিবীর ক্রম-বিকাশের ইতিহাসও সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, কি আকস্মিকভাবে সূর্য্যের একটা টুকরো খ’সে এসে একটা নির্দ্দিষ্ট কক্ষে সূর্য্যকেই প্রদক্ষিণ করতে আরম্ভ করল, কি অদ্ভুতভাবে একটা প্রচণ্ড তাপবিশিষ্ট অগ্নিগোলকের অবস্থা থেকে শক্তিপরিণামের ভিতর দিয়ে সূর্য্যের এই টুকরাটি আকাশে, বাতাসে, জলে, স্থলে, পর্ব্বতে অরণ্যে, অগ্নি, বিদ্যুদাদিতে বিভক্ত হ’য়ে এ সকলের সুন্দর সমাবেশে কালক্রমে জীববহসতির যোগ্যতা লাভ করলে, কি রহস্যময় প্রণালীতে এই জড় পিণ্ডের মধ্যে প্রাণের অভ্যুদয় হ’ল, প্রাণের মধ্যে আবার মনের বিকাশ হ’ল, মনের মধ্যে বুদ্ধির উদয় হ’ল, এবং ক্রমে এই পৃথিবী মনুষ্য সভ্যতার লীলাভূমি হ’ল। এই বিবর্ত্তনের মধ্যে কতবার কত প্রকার ভাঙ্গাগড়া হয়েছে, কত সৃষ্টি-প্রলয় ঘটেছে। বৈজ্ঞানিকদৃষ্টিতে এসবই তো শক্তিরই খেলা। প্রাণ, মন, বুদ্ধি, সবই তো এক শক্তিরই বিচিত্র রূপ। সূর্য শক্তিময়, নক্ষত্রাদি ও শক্তিময়, পৃথিবীও শক্তিময়ী। কত সৃষ্টি ও ধ্বংসের সমাবেশে কী অদ্ভুত সংগঠন!
বিজ্ঞান আমাদের সামনে যে সব তথ্য উপস্থাপিত করেছে, তা থেকে আমরা অক্লেশেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, এই বিশ্বপ্রপঞ্চ অশেষ বৈচিত্র্যসমাকুল ও প্রতিনিয়ত পরিবর্ত্তনশীল হ’লেও এবং প্রত্যেক ক্ষেত্রে সর্ব্বদা সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ের তাণ্ডবলীলা চললেও, এর সমস্ত অতীত, বর্তমান ভবিষ্যতের মধ্যে একটা একত্ব আছে, একটা যোগযুক্ত সংঘবদ্ধ ভাব আছে। সুতরাং নিশ্চয়ই এর একটা প্রাণকেন্দ্র অবশ্যই অনন্ত শক্তির আধার, স্বসত্তায় সত্তাবান, স্বয়ং প্রকাশ, স্বয়ং ক্রিয় ও স্বতন্ত্র। সেই প্রাণকেন্দ্র থেকেই চিরকাল অসংখ্য প্রকার শক্তি বিকীর্ণ হচ্ছে, অসংখ্য প্রকার রূপান্তরের সৃষ্টি হচ্ছে, সেই প্রাণকেন্দ্রই স্বীয় অসীম শক্তিতে বিশ্বের সকল অংশকে, সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে বিধৃত ক’রে, সংঘবদ্ধ ক’রে, যোগযুক্ত ক’রে ধ’রে রেখেছে, সেই প্রাণকেন্দ্রই বিশ্বের সকল ব্যষ্টি ও সমষ্টিসত্তার অফুরন্ত উৎস, আশ্রয় ও নিয়ামক।