সন্তানের তীক্ষ্ণ বাক্য ও উদ্ধত আচরণে মনঃকষ্টের যোগ। কর্ম নিয়ে জটিলতার অবসান। অর্থকড়ি দিক অনুকূল। ... বিশদ
কীভাবে? তদন্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলে কম সময়ের জন্য আসা সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের প্রথম টার্গেট করত তারিকুল। তাদের মগজ ধোলাই করে জঙ্গি সংগঠনে নিয়োগের প্রস্তাব দিত। সঙ্গে লোভনীয় অফার। যাতে তাড়াতাড়ি জেল থেকে বেরিয়েই ওই বন্দি স্লিপার সেল খুলতে পারে। এভাবে মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক স্লিপার সেল খুলেও ফেলেছিল তারিকুল। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, শুধু মুর্শিদাবাদে নয়। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় একই কায়দায় দু-একজন জেলবন্দি আসামিকে পাঠিয়ে জঙ্গি সংগঠনের কাজ সুচারুভাবে চালাচ্ছিল।
বেঙ্গল এসটিএফ নওদা থেকে এবিটি জঙ্গি সাজিবুল ইসলাম ও মোস্তাকিম শেখকে গ্রেপ্তার করে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে খাগরাগড় বিস্ফোরণকাণ্ডে অভিযুক্ত জেলবন্দি তারিকুলের যোগসূত্র পান। কালবিলম্ব না করেই তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন গোয়েন্দারা। তাতেই একের পর এক উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সাত দিনের এসটিএফ হেফাজত শেষ করে আধিকারিকরা তারিকুলকে সোমবার বহরমপুর আদালতে পেশ করেন। বিচারক তার পুনরায় জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
বহরমপুর আদালতের সরকারি আইনজীবী বিশ্বপতি সরকার বলেন, ‘এসটিএফ হেফাজত থেকে ফেরত এসেছিল তারিকুল। তাকে আবার জেলে পাঠানো হয়েছে।’
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, তারিকুল অত্যন্ত মিষ্টভাষী। একবার তার সঙ্গে কথা বললেই মনে হবে, সে বিনয়ের অবতার। প্রথমে মুখ না খুললেও পরে একাধিক বিষয়ে গোয়েন্দাদের তথ্য দিয়েছে সে। জেলে নতুন আসামিদের আনা হলে তারিকুল তাদের সঙ্গে গোপনে দেখা করত। ওই আসামিকে জেলে কেন পাঠানো হয়েছে, তা জানতে পেরেই তাদের সহানুভূতি দেখাত তারিকুল। এভাবে খুব সহজে নতুন বন্দিদের খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠত এই জেএমবি জঙ্গি। তারপর শুরু হতো ধীরে ধীরে মগজ ধোলাইয়ের কাজ। সরকার ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে বারবার কথা বলতে বলতে দেশবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা হয় সেই সব বন্দিদের। গোটা সিস্টেমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে—এমন মগজ ধোলাই করে নতুন সদস্য বৃদ্ধি করত তারিকুল। কয়েকটি পর্যায়ে সে এই কাজ করেছে। মাসখানেক ধরে যাদেরকে মগজধোলাই করেছে, তারাই অনেক সময় নতুন সদস্যদের মগজ ধোলাইয়ের কাজ করত। তারপর তাদের নিয়ে যাওয়া হতো তারিকুলের ক্লাসে। জেলের ভিতরে খাওয়া আর ঘুম ছাড়া তারিকুলের এই নিয়মিত ক্লাস নেওয়াই ছিল রোজদিনের রুটিন।
শুধু স্লিপার সেল বাড়ালেই তো আর হবে না। সংগঠন চাঙ্গা করতে প্রয়োজন প্রচুর টাকা। সেটাও মাথায় রেখে অর্থ সংগ্রহ করত তারিকুল। জেলবন্দি গোরু পাচারকারী, বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের কারবারি বা মাদক ব্যবসায়ীদের টার্গেট করত সে। তাদের কাছে টাকা চাওয়া হতো। জানা গিয়েছে, তারিকুলের নানা টোপ গিলে প্রায় সকলেই অর্থ দিতে রাজি হতো। বেশ কয়েকবার তাদের দেওয়া নগদ টাকা যায় তারিকুলের স্ত্রীর কাছে। পাশাপাশি জেল থেকে এবিটির প্রতি সহানুভুতিশীল ব্যক্তিদেরকে ফোন করে টাকা তোলে তারিকুল ওরফে সুমন। সেই টাকা নতুন স্লিপার সেল তৈরির কাজে ব্যবহার করা হতো বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। এমনকী, জঙ্গি সংগঠনের হাত মজবুত করবে এমন বন্দিদের ছাড়ানোর জন্য সেই অর্থ ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। - নিজস্ব চিত্র