আজ কর্ম ভাগ্য অনুকূল। অর্থাগমের ক্ষেত্র বাড়বে। গবেষকদের পক্ষে উল্লেখযোগ্য সাফল্য ও স্বীকৃতি লাভের সম্ভাবনা। ... বিশদ
বাংলায় একটা কথা চালু আছে, ‘খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে কাল হল এঁড়ে গোরু কিনে।’ মহম্মদ ইউনুসের হয়েছে সেই অবস্থা। নোবেল লরিয়েট হিসেবে দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। সম্মানও পাচ্ছিলেন। মাইক্রোফিন্যান্সের নতুন দিশারী হিসেবেও বেশ নামডাক রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে দু’চারখানা জালিয়াতি টালিয়াতির অভিযোগ উঠলেও তা মঞ্চে বসে হাততালি কুড়ানোর পথে বাধা হচ্ছিল না। কিন্তু তাঁর ‘কাল’ হল বাংলাদেশের তদারকি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ায়। শান্তির জন্য নোবেল প্রাইজ পাওয়া মানুষটাকেই এখন অনেকে যত অশান্তির মূল বলে মনে করছেন।
ইউনুস সাহেব রাজনীতির লোক ছিলেন না। তিনি যে বয়সে দাঁড়িয়ে আছেন, তাতে সাধারণ মানুষ ঝামেলা এড়িয়ে নিশ্চিন্তে জীবন কাটানোর কথাই ভাবে। ইউনুস সাহেবেরও বাকি জীবনটা শান্তিতে এবং আয়েশ করে কাটানোয় কোনও সমস্যা ছিল না। তা সত্ত্বেও তিনি উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশের দায়িত্ব নিলেন কেন? অনেকে মনে করছেন, এর পিছনে তিনটি কারণ রয়েছে। এক, ক্ষমতার লোভ, যেটা মানুষের আমৃত্যু থাকে। দুই, নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সাফ করে ‘ক্লিনচিট’ সার্টিফিকেট হাতিয়ে নেওয়ার বাসনা। তিন, নোবেল প্রাইজ প্রাপ্তির ‘ঋণ’ পরিশোধের প্রবল চাপ।
ইউনুস সাহেব খুব ভালো করেই জানেন, ভারতের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা তাঁর দেশের নেই। যুদ্ধ লাগলে দেড় দিনও টিকতে পারবে না। তা সত্ত্বেও যুদ্ধের জিগির তুলে দেওয়া হচ্ছে। ভারতের সীমান্ত এলাকায় সাঁজোয়া গাড়ি দৌড়াদৌড়ি করছে। সেনাবাহিনীর সুরক্ষার জন্য বাঙ্কার বানানো হচ্ছে। কামানের গোলা নিক্ষেপে যেমন ধোঁয়া ওড়ে ঠিক তেমনটাই হচ্ছে। বেশ একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। উদ্দেশ্য? ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত, সেই বার্তা দেওয়া। সেটা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকেও দেওয়া হয়েছে। তার প্রভাব পড়ছে উভয় দেশের সীমান্ত এলাকায়।
অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান ঠেকাতে ভারত নিজের জমিতে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে। কিন্তু বাধা দিচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীরা। তাদের পাশে থাকছে সাধারণ মানুষের ছদ্মবেশী জঙ্গিরা। মাছ ধরতে ধরতে কোনও ভারতীয় মৎস্যজীবী সীমানা অতিক্রম করলে তাঁদের জেলে ভরে বেধড়ক পেটানো হচ্ছে। অথচ কয়েক মাস আগেও এমন ঘটনা ঘটলে ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’ করেই বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া হতো।
এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে খারাপ ঘটনাটি ঘটেছে ত্রিপুরার ঊনকোটি জেলার কৈলাসহর পঞ্চায়েত এলাকায়। সেখানে চোরাকারবারিদের পিছু ধাওয়া করতে করতে দু’জন বিএসএফ জওয়ান বাংলাদেশের সীমান্তে ঢুকে যান। আর তখনই বাংলাদেশের পাচারকারীরা জওয়ানদের আগ্নেয়াস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। যে পাচারকারীরা এতদিন প্রাণ বাঁচানোর জন্য আত্মগোপন করাই শ্রেয় মনে করত এখন তারাই বিএসএফ জওয়ানদের মারতে যাচ্ছে। তারা এই সাহস পাচ্ছে মৌলবাদীদের গরম গরম হুমকি ও ইউনুস সরকারের পদক্ষেপে। পাচারকারীরা বুঝে গিয়েছে, বাংলাদেশ এখন দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্য। তদারকি সরকার যখন দাগি জঙ্গিদের জেল থেকে ছেড়ে দিচ্ছে তখন পাচারকারীদের শাস্তির মুখে পড়তে হবে, এটা ভাবা চরম মূর্খামি। তাই বাংলাদেশের পাচারকারীরাও বেপরোয়া।
১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতবর্ষ। মেধা ও সম্পদের কারণে বিশ্বের বহু শক্তিধর দেশ ভারতকে হিংসা করে। বিভিন্নভাবে আমাদের দেশকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে। তারজন্য অতীতে অনেক চক্রান্তও হয়েছে। কিন্তু সরাসরি আক্রমণের সাহস খুব একটা দেখায়নি। তাই প্রতিবেশী দেশগুলিকে নানাভাবে ভারতবর্ষের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, ভারতের মতো পরমাণু শক্তিধর দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ যা করছে, সেটা সেই চক্রান্তেরই অঙ্গ। এতদিন যে কাজটা পাকিস্তানকে দিয়ে করানো হচ্ছিল এখন সেটাই তারা বাংলাদেশকে দিয়ে করাতে চাইছে। তদারকি সরকার গঠন এবং তারপরই দাগি আসামি ও জঙ্গিদের ছেড়ে দেওয়া, সেই পরিকল্পনারই অঙ্গ। উন্মুক্ত সীমান্তের সুযোগ নিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে জঙ্গিদের। উদ্দেশ্য, ভারতে নাশকতা চালিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি।
বাংলাদেশের ইউনুস সরকার পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া বাধাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চাইছে যাতে বিএসএফ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। আর গুলি চালালেই তাকে ইস্যু বানাবে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশের এত হম্বিতম্বির পরেও ভারত সরকার চুপ কেন, এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এখানে একটা কথা ভুললে চলবে না, ‘রাজনীতি’ আর ‘পররাষ্ট্র’ নীতি এক নয়। দু’টিকে একই আতসকাচের নীচে রেখে বিশ্লেষণ করতে যাওয়াটা ঠিক হবে না। কারণ ইউনুস সরকার ভারত বিরোধী জিগিরের মুখ। কিন্তু আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ছে বড় কোনও শক্তি। বাংলাদেশের ঘাড়ে বন্দুক রেখে কে ‘ফায়ার’ করতে চাইছে, সেটা খুঁজে বের করাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি।
মৌলবাদীদের খুশি করতে তদারকি সরকার যা করছে, তাতে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সমর্থন নেই। সেটা মহম্মদ ইউনুস খুব ভালো করেই জানেন। নির্বাচন হলে যে গোহারা হারবেন, সেটাও তিনি বুঝে গিয়েছেন। তারজন্যই তিনি নির্বাচনে না গিয়ে যুদ্ধের জিগির তুলে কোনওরকমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছেন।
ভারতবর্ষ থেকে পূর্ব পাকিস্তান অধুনা বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল ১৯৪৭ সালেই। ১৯৭১ সালে আলাদা দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর দুই বাংলার মধ্যে একটা আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠছিল। সেই সম্পর্কের আবেগ এতটা তীব্র ছিল যে অনেকেই কাঁটাতারের বেড়া মুছে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করতেন। অত্যাচারের ভয়ে ফেলে আসা পৈতৃক ভিটে একটিবারের মতো দেখার আশায় অনেকেই আকুলি বিকুলি করতেন। কিন্তু ইউনুস সরকারের কর্মকাণ্ডে সেই আবেগ কর্পূরের মতো উবে গিয়েছে। দেশ ছাড়ালেও বহু মানুষ ‘আমাগো দ্যাশ’ বলে গর্বিত হতেন। ইউনুস সরকার তাঁদের সেই আবেগে জোর ধাক্কা দিয়েছে। এখন তাঁদেরই মুখ থেকে বাংলাদেশ নিয়ে বেরিয়ে আসছে এক রাশ ক্ষোভ। কারণ বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ভারতবর্ষকে নয়, পাকিস্তানকে তাদের বন্ধু বলে মনে করছে।
অথচ একদিন এই পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই ফুঁসে উঠেছিল পূর্ব পাকিস্তান অধুনা বাংলাদেশ। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণার প্রতিবাদে এককাট্টা হয়েছিল বাংলা ভাষাভাষী সমস্ত মানুষ। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে শুরু হয়েছিল আন্দোলন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ১৪৪ ধারা ভেঙে রাস্তায় নেমেছিলেন। তারজন্য পুলিসের গুলিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন রফিক, সালাম, বরকত, আব্দুল জব্বারের মতো আরও অনেকে। ভাষার দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে আত্মবলিদানের এক অনন্য নজির গড়েছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা। সৃষ্টি হয়েছিল ইতিহাস। রফিক, সালাম, বরকতের বলিদান বৃথা যায়নি। উর্দুপ্রেমী পাকিস্তানি শাসকরা বাংলাকেও দিতে বাধ্য হয়েছিল রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা। মিলেছিল লড়াইয়ের আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি। সমগ্র বাঙালির কাছে একুশে ফেব্রুয়ারির এখন একটাই পরিচয়, ‘আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস’।
বাংলাদেশের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির মধ্যেই সেই তরুণ গায়ক গেয়েছেন, ‘ওরা পিতার মাথায় প্রস্রাব করে জুতোর মালা পরিয়ে/ ঘরে বসে তুমি দেখেছ অশ্রু পড়েছে দু’গাল গড়িয়ে/ ওরা কবিগুরুকে রাজাকার বলে তার গান আর চায় না/ সোনার বাংলা মুছে দেবে বলে ধরেছে এবার বায়না।’ বাংলাদেশের তদারকি সরকার মেতেছে ইতিহাস মুছে দেওয়ার খেলায়। ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছে গর্বের সমস্ত স্মৃতিসৌধ। অস্বীকার করতে চাইছে বহু রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা। ফলে উঠছে প্রশ্ন, ভাষা শহিদদের গৌরবোজ্জ্বল অতীতকেও কি পদদলিত করবেন বাংলাদেশের ‘মেধাবী’রা? এবারেও কি একুশে ফেব্রুয়ারি সমগ্র বাংলাদেশ ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলতে পারি’ গানে আলোড়িত হবে! নাকি রফিক, সালাম, বরকতদের জন্যও অপেক্ষা করছে ‘বঙ্গবন্ধু’ মুজিবের মতোই নিদারুণ কোনও ‘স্বীকৃতি’!