বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা : বাঙালির সব আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। সব আনন্দে তাঁকে স্মরণ। সব ভেঙে পড়ায় তাঁকে অবলম্বন করে ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া লড়াই। করোনার ক্ষেত্রেই বা তার ব্যতিক্রম কেন! এবছর খোদ স্বাস্থ্যদপ্তরের উদ্যোগে অভিনব ২৫ বৈশাখ পালন হল অনলাইন প্ল্যাটফর্মেই। যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে রোজ রবিবার সন্ধ্যায় রেমডিসিভির নাকি ফ্ল্যাবিপিরাভির, কখন স্টেরয়েড, কখন নয়, মৃত্যুহার কমাতে চটজলদি কী করণীয় ইত্যাদি নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, সেখানেই। যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের প্রথম সারির কর্তা এবং বিশেষজ্ঞরা করোনার মোকাবিলায় তাঁদের বার্তা পৌঁছে দেন মেডিক্যাল কলেজ থেকে জেলা, মহকুমা বা ব্লক হাসপাতালের ডাক্তারবাবুদের কাছে, সেখানেই। প্রশ্ন থাকলে, যেখানে খোলা মনে আলোচনা হয়, হাতেকলমে প্রয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যা হলে কীভাবে মোকাবিলা হবে, তার চর্চা চলে, ঠিক সেখানেই। প্রায় দেড় বছর ধরে জীবনমরণ লড়াইয়ে যুক্ত কোভিড যোদ্ধাদের মানসিকভাবে চাঙ্গা করতে কবিতা, গান, নাটক শোনালেন এক্সপার্টরাই। রবীন্দ্রনাথের পূজা পর্যায়ের গান ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই ...’ গাইলেন বিখ্যাত ফিজিশিয়ান অপূর্ব মুখোপাধ্যায়। শহরে না থেকেও বারাণসী থেকে রবীন্দ্রনৃত্যের ভিডিও পাঠালেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর চিকিৎসক কন্যা অগ্নিপর্ণা। কী নিয়ে না আলোচনা হল! লালন ফকিরের লেখা ও রবীন্দ্রসঙ্গীত, পদাবলি ও রবীন্দ্রচিন্তা, দুঃসময় ও ঘুরে দাঁড়াতে রবীন্দ্রভাবনা! দিনরাত কোভিড রোগীদের বাঁচাতে যাঁদের চোখ থাকে মনিটরে, তাঁদের গলায় ওইদিন শুধু ছিল রবীন্দ্রনাথই। মেডিক্যাল কলেজ কোভিড টাস্ক ফোর্স-এর চেয়ারম্যান ডাঃ উদাস ঘোষের স্ত্রী শোনালেন, ‘আমার মন যখন জাগলি না রে...’। আপাত কাঠখোট্টা অন্তরে সজীব ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বিভূতি সাহা গাইলেন, ‘আমার হিয়ার মাঝে..’। এক্সপার্টদের অন্যতম ডাঃ জ্যোতির্ময় পাল শোনালেন ‘ডাকঘর’ নাটক, করলেন সঞ্চালনা।
করোনা মোকাবিলা করতে করতে কবিগুরুকে স্মরণ? এসময় আরও দু’জন মরণাপন্ন রোগী দেখলে বেশি কাজ দিত না? জ্যোতির্ময়বাবু বলেন, রবীন্দ্রনাথ আমাদের সব কাজে। আর যিনি জীবনে এতবার মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁর সৃষ্টি থেকেই তো আমরা শক্তি পাব। যাঁরা দেড় বছর ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে করে ক্লান্ত, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে রবীন্দ্রনাথের মতো আর কে আছেন? ন’টা থেকে ১০টা অনুষ্ঠান হয়েছে। আমরা, কোভিড যোদ্ধারা অনুষ্ঠান শেষে যেন পুনরুজ্জীবিত হয়েছি। যেন মৃতসঞ্জীবনী মন্ত্র দিয়েছেন ‘গুরুদেব’। পাশাপাশি যাঁরা সঙ্গে নেই, তাঁদেরও স্মরণ করেছি ওই এক ঘণ্টায়। ‘ডাকঘর’-এর কথা মনে করিয়েছি। শেষ বাক্যটা মনে আছে তো? যখন রাজকরিবাজকে সুধা বলছে অমলকে মনে করিয়ে দিতে, ‘বলো যে, সুধা তোমাকে ভোলেনি।’ আমরাও করোনায় হারিয়ে যাওয়া মানুষদের ভুলিনি—আবেগরুদ্ধ উত্তর ছিল জ্যোতির্ময়বাবুর।