প্রেম-প্রণয়ে কিছু নতুনত্ব থাকবে যা বিশেষভাবে মনকে নাড়া দেবে। কোনও কিছু অতিরিক্ত আশা না করাই ... বিশদ
যিনি রাঁধেন, তিনি চুলও বাঁধেন। যাবতীয় চ্যালেঞ্জ পিছনে ফেলেছেন প্রয়াত শিল্পী অরুণ পালের স্ত্রী পিউ। নতুন সাজে রাঙিয়েছেন মা দুগ্গাকে। সহযোগিতায় ২২ জন সহকারী মৃৎশিল্পী। সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছে পাশে রাখা স্বামীর ছবি। অবশেষে পিউর আপ্রাণ চেষ্টায় কালীঘাটের পটুয়াপাড়া থেকে সপরিবারে দেবী পাড়ি দিয়েছেন চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন হংকংয়ে। জাহাজে চড়ে। এবার কুমোরটুলি থেকে বিদেশে দুর্গাপ্রতিমা যাওয়ার সংখ্যা অনেকটাই কম। করোনা পরিস্থিতিতে দেবীর হংকং যাত্রা তাই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
২০০৭ সাল থেকে প্রতি তিন বছর অন্তর হংকং থেকে বরাত আসে। এবারও এসেছিল। মন দিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন শিল্পী অরুণ পাল। ফাইবারের তৈরি পাঁচ ফুটের প্রতিমা। চালচিত্র নিয়ে সাড়ে সাত ফুট। একচালার প্রতিমা নয়। দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ আলাদা। মুখমণ্ডলের রূপরেখা থেকে রং, চালচিত্রের নকশা—সবই অরুণবাবুর মস্তিষ্কপ্রসূত। কিন্তু উমার সপরিবারে সাগর পাড়ি দেখে যাওয়া হয়নি তাঁর। গত ৪ জুলাই তিনিই পৌঁছে যান জীবনের ওপারে। স্বামীর মৃত্যুর পর অকূল পাথারে পড়েছিলেন পিউ। সেইসময় কর্তব্যজ্ঞানই তাঁকে দুঃখের সাগর থেকে তুলে আনে। দিনরাত এক হয়েছে। তবু থামেনি স্বামীর ‘অধরা মাধুরী’ স্পর্শের চ্যালেঞ্জ।
দক্ষিণ কলকাতার একাধিক নামকরা পুজো কমিটির দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করেছেন অরুণ পাল। এ বছরও সেই তালিকা দীর্ঘ। তিনি নেই। তবে তাঁর দেখানো পথই পাথেয় হয়েছে স্ত্রী পিউ ও সহকারী মৃৎশিল্পীদের। পিউর কথায়, ‘মা দুগ্গাকে নতুন আঙ্গিকে সাজিয়ে তোলাই ছিল ওঁর (অরুণ পাল) লক্ষ্য। ফি বছরই সাজসজ্জায় পরিবর্তন আনতেন। সেভাবেই এবার আমরাও চেষ্টা করেছি। বাকিটা উদ্যোক্তারাই বলবেন।’
সৃষ্টিসুখের উল্লাসের মধ্যেই আক্ষেপ রয়েছে পিউ পালের। করোনা পরিস্থিতিতে দুর্গার সদলবলে যাত্রা করার ছবিটা স্বামী যে দেখে যেতে পারলেন না। ভেজা গলায় শোনা গেল, ‘করোনা মুক্ত পৃথিবীর আশায় বুক বেঁধেছিলেন উনি। বারবার বলতেন, মা দুগ্গার পাদস্পর্শে হংকংও ভাইরাসের হাত থেকে মুক্তি পাবে।’ সীমান্ত সংঘাতে ভারত-চীন সম্পর্কও এখন তলানিতে। কিন্তু দু’দেশের বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন শিল্পী পিউ। তাঁর আশা, অসুর নিধনের পর শুভশক্তির উদয় হবেই। গভীর রাতেও আশার সূর্যোদয়ের খোঁজে এগিয়ে চলেছেন তিনি।