ইসলামাবাদ, ১৭ ফেব্রুয়ারি (পিটিআই): কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে পাকিস্তানে পা রাখলেন সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন। নির্ধারিত দু’দিনের পাক সফর কাটছাঁট করেই রবিবার রাওয়ালপিন্ডির নুর খান বায়ুসেনা ঘাঁটিতে নামেন তিনি। বিমানবন্দরেই তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে পাকিস্তানে এসেছেন সৌদি যুবরাজ। কিন্তু তাঁর দু’দিনের সফরে আসার কথা থাকলেও, তা কাটছাঁট করে একদিন করা হয়। উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগের পুলওয়ামা কাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছিল সৌদি আরব।
পুলওয়ামায় হামলার পর পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়িয়েছে ভারত। ইসলামাবাদকে আন্তর্জাতিক স্তরে একঘরে করে রাখার উদ্যোগও নিয়েছে দিল্লি। তারই মাঝে সৌদি আরবের যুবরাজের পাক সফর দু’দিন থেকে কমে দাঁড়িয়েছে একদিন। পুলওয়ামা কাণ্ডর পর তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও নিরাপত্তাজনিত কারণে যুবরাজের সফর কাটছাঁট করা হয়েছে বলে সৌদি আরবের তরফে জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানের আর্থিক মন্দা কাটাতে কয়েকদিন আগেই বিপুল পরিমাণ অর্থ সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছিল সৌদি আরব। বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করতেই সৌদি যুবরাজের পাকিস্তানের যাওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। মনে করা হচ্ছে পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর বিশ্বে সমালোচিত পাকিস্তানের ভূমিকা। তার জেরেই মেপে পা ফেলতে চাইছেন যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন। দিল্লি ও ইসলামাবাদ সম্পর্ক এখন তলানিতে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সফরের পর ভারতে আসতে হবে মহম্মদ বিন সলমনকে। নানা অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারেন তিনি। সেই পরিস্থিতি এড়াতেই ‘বিশেষ কারণ’-এর দোহাই দিয়ে যুবরাজের পাকিস্তান সফর একদিন পিছিয়ে দেন বলে মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ। পাশাপাশি পূর্ব নির্ধারিত বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের পাক সফরও স্থগিত হয়ে যায়। এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে আগামী সপ্তাহেই নয়াদিল্লি আসবেন সৌদি আরবের যুবরাজ।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদতের অভিযোগ তুলেছে ভারত। রাষ্ট্রসঙ্ঘে ইসলামাবাদের বিরোধিতা করা হয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি করা হয় জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই-মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারকে। কিন্তু চীনের হস্তক্ষেপে তা কার্যকর হচ্ছে না। পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের আঁতুরঘর তকমা দিয়ে ইসলামাবাদের আর্থিক অনুদান বন্ধ করে ট্রাম্প প্রশাসন। তারপরেও টনক নড়েনি পাকিস্তানের। পাঠানকোট, উরির পর পুলওয়ামার আত্মঘাতী বিস্ফোরণ। শহিদ হন ৪৯ জন সিআরপিএফ জওয়ান। এরপরই ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে চাপ বাড়িয়ে তাদের একঘরে করার ডাক দেয় ভারত। ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দেশের বেহাল অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের জন্য সৌদি আরবের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য চেয়ে আবেদন করে। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানকে ৬০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সৌদি আরব। এছাড়া পাকিস্তানের পেট্রোকেমিকাল শিল্পে বিনিয়োগের আশ্বাস দেয় সৌদি আরব। এদিকে সৌদি যুবরাজের পাক সফর ঘিরে তাঁর ছবি সমেত হোর্ডিংয়ে ছেয়ে গিয়েছে ইসলামাবাদে রাস্তা। এদিন পাক আকাশসীমায় মহম্মদ বিন সলমনের বিমান প্রবেশ করতেই তাকে গার্ড দিয়ে নিয়ে আসে দু’টি পাক যুদ্ধবিমান।