উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
মঙ্গলবার কলকাতায় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের রোড-শো ঘিরে ব্যাপক হাঙ্গামা হয়। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে সরগরম হয়ে উঠল বাংলা, বিহার ও ওড়িশার একসময়ের রাজধানী মুর্শিদাবাদ জেলা। এদিন সকালে নবাবি মুলুকের বহরমপুরে প্রতিবাদ সভার ডাক দিয়ে প্রচার চালায় তৃণমূল কংগ্রেস। দুপুরে তারা শহরের বিদ্যাসাগর মোড়ে জমায়েত হন। বিদ্যাসাগরের মূর্তিতে মাল্যদান করার পর তারা বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। সভায় তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি অশোক দাস, তৃণমূলের বহরমপুর মহকুমা সভাপতি অরিৎ মজুমদার, বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকুমার অধিকারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি বলেন, বর্ণপরিচয়ের সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তাঁর মূর্তির উপর বানরসেনার হামলার ঘটনা মানা যায় না। বর্বর এই ঘটনার প্রতিবাদেই এই সভা করছি। দিল্লি সহ ভিনরাজ্য থেকে গুন্ডাবাহিনী এনে এই রাজ্যের মাটিতে গোরুয়া বাহিনী মস্তানি করবে, তা মেনে নেওয়া হবে না। সভা থেকে গেরুয়া বাহিনীকে সেই বার্তাই দেওয়া হল। পাশাপাশি, অপসংস্কৃতির দল বিজেপিকে ধিক্কার জানাই।
এদিন সন্ধ্যায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ শহরে ধিক্কার মিছিল বের করে। শহরের টেক্সটাইল মোড় থেকে ওই মিছিলের সূচনা করা হয়। কালেক্টরেট মোড়, মোহন হাউস মোড়, রবীন্দ্র সদন মোড়, লালদিঘির পাড় হয়ে সেই মিছিল শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিক্রম করে। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি বিশ্বদেব কর্মকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের বিরুদ্ধে মিছিল থেকে স্লোগান দেওয়া হয়। অনেকে সংশ্লিষ্ট দু’টি কর্মসূচির ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন।
তৃণমূলের পাশাপাশি, শহরের গোরাবাজার মোড় থেকে বিদ্যাসাগরের মূর্তি পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল করে এসইউসির ছাত্র সংগঠন ডিএসও। মিছিলে উপস্থিত ছাত্র নেতাদের বুকে ছিল বিদ্যাসাগরের ছবি। শহরের টেক্সটাইল মোড় থেকে বিদ্যাসাগরের মূর্তি পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল করেছে সিপিএম। দলের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, রাজ্যের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। যে বা যারা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার সঙ্গে জড়িত তাদের কঠোর শাস্তি চাই।
রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনও এদিন রাজপথে নেমেছে। এদিন বিকালে শিক্ষক, নাট্যকর্মী, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্বিজীবী, সাংবাদিক সহ সর্বস্তরের মানুষ বিদ্যাসাগরের মূর্তির পাদদেশে জমায়েত হন। তাঁদের প্রত্যেকের বুকে ছিল বিদ্যাসাগরের ছবি। তাঁদের প্রতিবাদ মিছিল বিদ্যাসাগর মোড় থেকে জজকোর্ট, নিমতলা মোড়, মোহনহাউস মোড় হয়ে রবীন্দ্র সদন চত্বরে যায়। তাঁদের হাতে থাকা ব্যানারে উল্লেখ ছিল- ‘শিক্ষাঙ্গনে বানরসেনা ও দুষ্কৃতীদের যৌথ তাণ্ডবে চূর্ণ হলো বিদ্যাসাগরের মূর্তি’। ধিক্কার জানাই! মিছিলের পর তাঁরা রবীন্দ্র সদনের সামনে কবিতা, সঙ্গীত ও আলোচনার মাধ্যমে ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানান।
এদিন ওই ঘটনার প্রতিবাদে জেলার অন্যান্য প্রান্তের বাসিন্দারাও গর্জে ওঠেন। সন্ধ্যায় নওদায় প্রতিবাদ সভা করে তৃণমূল। সভায় জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল, জেলা পরিষদ সদস্য সঞ্জয় হালদার, বিধায়ক শাওনী সিংহরায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জঙ্গিপুরের রঘুনাথগঞ্জের সদরঘাট এলাকায় প্রতিবাদ সভা করেছে সিপিএম। সূতিতে বিদ্যাসাগরের ছবি নিয়ে ধিক্কার মিছিল ও নেতাজি মোড়ে প্রতিবাদ সভা করেছে এসইউসি। একই রকম ছবি ছিল লালবাগ, ডোমকল, কান্দি সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায়। বিজেপির দক্ষিণ মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সহ সভাপতি শাখারভ সরকার অবশ্য মূর্তি ভাঙার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, তৃণমূলীরাই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে।
এদিন সালার মোজাফ্ফর আহম্মেদ কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে ধিক্কার মিছিল করা হল। প্রধানমন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়ানো হয়। টিএমসিপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সকাল ১০টা নাগাদ কলেজে পরিষদের সদস্যরা হাজির হয়ে ধিক্কার মিছিল শুরু করেন। পরে তাঁরা ওই মিছিল নিয়ে সালারের একটা এলাকা পরিক্রমা করেন। ছাত্র সংসদ সম্পাদক রফিকুল হাসান বলেন, বিজেপি এরাজ্যে সংস্কৃতির উপর আক্রমণ হানছে।