কাজকর্মের ক্ষেত্রে ও ঘরে বাইরে বাধা থাকবে। কারও প্ররোচনায় যে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সতর্ক হন। ... বিশদ
দরদ মিশিয়ে মৃদুস্বরে আমার কাছে জানতে চাইলেন, ‘মানুষ কি ওখানে খুব সমস্যায় রয়েছে? একটি প্রকল্প সত্যিই দরকার?’ আমি বলালম, ‘হ্যাঁ স্যর। কেলেঘাই-কপালেশ্বরীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সবং, পটাশপুর, ভগবানপুর, পিংলা, নারায়ণগড়, ময়না, খড়্গপুর লোকালের প্রায় ২২ লক্ষ মানুষের ভাগ্য।’ আর কিছু আমাকে বলতে হল না। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ডঃ সিংয়ের সেক্রেটারি। বললেন, ‘ওঁকে পবন বনশলের কাছে নিয়ে যান। বলবেন, উনি আমার ছোট ভাই। বাংলা থেকে এসেছেন। ইটস আ সিরিয়াস প্রবলেম অ্যান্ড গেট ইট ডান।’ ঠিক এই ভাষা। পবন তখন কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী। তিনি আধ ঘণ্টার মধ্যে ফাইল ক্লিয়ার করলেন। বনশল আমাকে বললেন, ‘তুমি এবার প্ল্যানিং কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান আলুওয়ালিয়ার কাছে যাও।’ তিনিও ২০ মিনিটের মধ্যে কাজ করে দিলেন। এবার প্রণববাবুর কাছে যেতে বলা হল। কারণ, বাজেটে ঢোকানোর আগে মিনিস্ট্রি অব এক্সপেনডিচারে এটা ক্লিয়ার করাতে হবে। প্রণববাবু তখন বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। বলে গেলেন, ‘রাত্রে কথা বলব’। রাত্রি ১১টায় প্রণববাবুর সঙ্গে দেখা হল ১৩ নম্বর তালকোটরায়। প্রধানমন্ত্রী নিজে আমার আবেদন মঞ্জুর করেছেন জেনে উনি সঙ্গে সঙ্গে স্পেশ্যাল গাড়ি দিয়ে একজনকে পাঠিয়ে দিলেন বাজেট ছাপানোর জায়গায়। সেদিন গভীর রাতে বঙ্গভবনে ফিরলাম। ২৭ তারিখ বিশ্রাম নিয়ে ২৮ তারিখ সংসদে গেলাম। বাজেট পড়ছেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। ২০ মিনিট হয়ে গিয়েছে। তখনও কেলেঘাই নিয়ে কিছু বললেন না ভেবে আমার তো বুক ধড়ফড় করছে। এক ঢোক জল খেয়ে উনি বললেন, ‘নাও আই অ্যাম গোয়িং টু ডিক্লেয়ার আ মেগা ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট অ্যান্ড রিএক্সক্যাভেশন প্রজেক্ট অব রিভার কালিয়াঘাই, কপালেশ্বরী...’ ৬৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ হল।
ইউপিএ-২ সরকারের রেলমন্ত্রী থাকাকালীনও বারবার এই প্রকল্পের জন্য সোচ্চার হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লড়াই করেছেন বাংলার মানুষের জন্য। এতসবের পরও তৎকালীন সিপিএম সরকার কাজ শুরু করল না। ১১ সালের মুখ্যমন্ত্রী হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি তখন রাজ্যের সেচমন্ত্রী। ২০১২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কাঁটাখালিতে ২ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে শুরু হল কেলেঘাই খননের কাজ। প্রথমে নিয়ম ছিল রাজ্য ২৫ শতাংশ টাকা দেবে, আর কেন্দ্র দেবে ৭৫ শতাংশ। ২০১৪ সালে বিজেপি এসে করে দিল ৫০-৫০। তারপরও হাল ছাড়েননি আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। ক্রমাগত চেষ্টা চলিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু বিজেপি চায় পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের ২২ লক্ষ মানুষকে আরও ধাক্কা দিতে। তাই আজও ১৪৭ কোটি প্রাপ্য দেয়নি তারা।
আজ সেসব কথা থাক। বড় মনে পড়ছে ডঃ মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে কাটানো সুখস্মৃতিগুলি। তিনি ও তাঁর স্ত্রী উভয়েই আমাদের পরিবারের সবাইকে অসম্ভব স্নেহ করতেন। উনি যখনই কলকাতায় আসতেন, আমি বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। পরিশেষে বলব, ডঃ মনমোহন সিং পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক অর্থনীতিবিদ, যিনি ভারতবর্ষের ভেঙে পড়া অর্থনীতির সংস্কার করেছিলেন। একজন সৎ, নির্ভীক শিক্ষক এবং নীরবে কাজ করে যাওয়া ১০ বছরের প্রধানমন্ত্রী।