কাজকর্মের ক্ষেত্রে ও ঘরে বাইরে বাধা থাকবে। কারও প্ররোচনায় যে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সতর্ক হন। ... বিশদ
রাজ্যের মসনদে তখনও সিপিএম। শাসক দলের নিপীড়ন, অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে মুখ খুলছেন। কোণঠাসা লাল পার্টি ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া। জঙ্গলমহলের গ্ৰামীণ এলাকায় সিপিএম নেতাকর্মীদের বাড়িঘর সশস্ত্র ক্যাম্প হয়ে উঠছে। লেঠেল, বন্দুকধারী গুন্ডাদের মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিনপুর-১ ব্লকের নেতাই গ্ৰামের স্থানীয় সিপিএম নেতা রথীন দন্ডপাটের বাড়ি থেকে ২০১১ সালে ৭ জানুয়ারি নিরীহ গ্ৰামবাসীদের ওপর গুলি চালানো হয়েছিল। হাড়হিম করা সেই ঘটনা গ্ৰামবাসীর আজও ভুলে যাননি । নেতাই দিবস এলেই আতঙ্ক, স্বজন হারানোর যন্ত্রণা ফিরে আসে। ক্যাম্পের লোকদের খাবার দেওয়ার জন্য গ্ৰামবাসীদের বাধ্য করা হতো। গ্ৰামের অল্পবয়সিদের বন্দুক চালানোর ট্রেনিং দেওয়ার জন্য ক্যাম্পে জোর করে ধরে আনা হতো। অত্যাচার চরমে উঠলে ৭ জানুয়ারি গ্ৰামের পুরুষ নারীরা ঘর থেকে বের হয়ে প্রতিবাদ শুরু করেন। সেইসময় রথীন দন্ডপাটের দোতলা বাড়ি থেকে নির্বিচারে গ্ৰামবাসীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। গ্ৰামের একাধিক ব্যাক্তির মৃত্যু হয়। বহু মানুষ জখম হন। গ্ৰামবাসী শ্রীকান্ত ঘোড়াই বলেন, সেই দিনের ঘটনা আজও স্পষ্ট মনে আছে। আমার সঙ্গে স্ত্রী সরস্বতী ঘোড়াই ছিল। গুলি ছোড়া শুরু হলে চিৎকার, কান্নাকাটির সঙ্গে যে যেদিকে পারছিল ছুটছিল। মাথায় গুলি লেগে আমার স্ত্রী মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। কাঁধে করে স্ত্রীকে নিয়ে ছুটছিলাম। ওদের কেউ চিৎকার করে আমাকে গুলি করার নির্দেশ দিচ্ছিল। জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় পড়ে যাই। সেই ঘটনার আতঙ্ক ও স্ত্রীকে হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি। গৃহবধূ গীতা ঘোড়াই বলেন, ক্যাম্পের লোকদের খাবার রান্না করার জন্য আমাদের বাধ্য করা হতো। না করে দিলে বাড়ির ছেলেদের মারধর করত। সেই সবও সহ্য করছিলাম। যখন ওরা অল্পবয়সি ছেলেদের জোর করে ক্যাম্পে নিয়ে যেতে শুরু করল, তখন জীবন মরণের পরোয়া না করে প্রতিবাদ করি। শহিদ ধ্রুবপ্রসাদ গোস্বামীর স্ত্রী লতিকা গোস্বামী বলেন, স্বামীর পেটে গুলি লেগেছিল। ভিড়ে আমিও ছিলাম। স্বামীকে ওখান থেকে আনার চেষ্টা করলে ওরা বাধা দেয়। দ্রুত হাসপাতাল নিয়ে যেতে পারলে হয়তো বাঁচাতে পারতাম। এই সরকার ছেলেকে চাকরি দিয়েছে। না হলে সংসারটা ভেসে যেত। শহিদ শ্যামলেন্দু গোস্বামীর স্ত্রী অঞ্জু গোস্বামী বলেন সেদিন মৃত ও জখমের ভিড়ে প্রিয়জনকে খুঁজেছি। রক্তাক্ত সেই দিনের কথা আজও ভুলে যাইনি। বিনপুর-১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি তারাচাঁদ হেমব্রম বলেন, গুলি চালানোর ঘটনায় যারা অভিযুক্ত তারা জামিন পেয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। শহিদ পরিবারের সদস্যরা এখনও বিচার পাননি। বদলা নয়, বদলের রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা চাই দোষীদের কঠোর শাস্তি হোক। নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির সম্পাদক জয় রায় বলেন, ২০১২ সাল থেকে শহিদ দিবস পালন করা হচ্ছে। শ্রদ্ধার সঙ্গে দিনটি পালন করা হবে। রাজ্য নেতৃত্ব জয়প্রকাশ মজুমদার সহ জেলার সকল নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। ঝাড়গ্রাম জেলা সিপিএমের সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন, প্রথমদিন থেকে বলে আসছি সেদিনের নেতাইয়ের ঘটনায় এজেন্সি দিয়ে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। নন্দীগ্রামের ঘটনা যেমন সামনে আসছে, তেমনি এই ঘটনার সত্যতাও একদিন সামনে আসবে। -নিজস্ব চিত্র