বিজ্ঞান গবেষণা ও ব্যবসায় আজকের দিনটি শুভ। বেকাররা চাকরি প্রাপ্তির সুখবর পেতে পারেন। ... বিশদ
সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার। বহরমপুরে কালেক্টর অফিস সংলগ্ন এলাকায় চলে আসেন শঙ্কর। সেখানকার একটি ছোট্ট জায়গা তাঁর বরাদ্দ। রাস্তার ধারে পরিবেশ সচেতনতার বার্তা দিয়ে লেখা কয়েকটা ব্যানার টাঙিয়ে দেন। কাঁধের ঝোলা থেকে একটি হ্যান্ড মাইক বের করেন। তাতে মুখ লাগিয়ে পরিবেশ বাঁচানোর নানা পরামর্শ অনর্গল ফুঁকতে থাকেন। পথচলতি মানুষদের কেউ কেউ দাঁড়িয়ে পড়েন। অনেকে ‘পাগলের প্রলাপ’ বলে এড়িয়ে যান। শঙ্করের তাতে কোনও যায় আসে না। তিনি মাইক ধরে ফুঁকতেই থাকেন। অনেকের মধ্যে অন্তত একজনেরও যাতে পৃথিবীকে রক্ষার চেতনা বৃদ্ধি পায়, সেই আশায়।
সপ্তাহের বাকি দিনগুলি পেটের টানে পেশার কাজে বেরোন শঙ্কর। ট্রেনে, বাসে কিংবা বাজার-হাটে। যখন যেখানে যান সঙ্গে থাকে সরঞ্জাম। ফুরসৎ পেলেই বসে পড়েন মাইক হাতে। নিজের কথায় সুর বসিয়ে গান ধরেন। মানুষকে কাছে টানার চেষ্টা করেন। সমাজের কিছু ভালো মানুষ রয়েছেন। পরিবেশকে ভালো বাসেন। শঙ্করের পরিবেশ নির্ভর গান তাঁদের আকৃষ্ট করেন। সবুজ পাগল হকারের একক প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ করে যান। কিছু সাহায্যও করে যান। কিন্তু শঙ্করবাবু নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা নিতে চান না। তাঁর দর্শনই হল, ‘হকারি থেকে যা আয় হয় তাতেই চলে যায়। পরিবেশ বাঁচানোর বার্তা দিয়ে আমি কোনও আয় করতে চাই না। আমার চাওয়া একটাই—প্রত্যেকে দু’টি করে গাছ লাগান। তাতেই আমি খুশি। আমার পরিশ্রম সার্থক।’ আবার শঙ্করের আক্ষেপও একটাই—‘জানেন তো আমার কথা শোনার লোকের বড় অভাব। আমি আমার মতো চেঁচিয়ে যাই। কেন চেঁচাবো না বলুন, গাছের থেকে আমরা অক্সিজেন নিই। বেঁচে থাকি। অথচ, সেই গাছকেই আমরা নির্বিচারে হত্যা করি। তবে আমি আশাবাদী, দেওয়ালে পিঠ ঠেকলে একদিন মানুষের হুঁশ ফিরবে। আমি সে দিনের অপেক্ষায়। আমার লড়াই জারি থাকবে।’
শঙ্করের দুই মেয়ে। সাধ্যমতো লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বিয়েও দিয়ে দিয়েছেন। এখন স্বামী-স্ত্রীর সংসার। হাসতে হাসতে শঙ্করবাবু বলছিলেন, ‘প্রথমের দিকে স্ত্রী প্রমিলা এভাবে মোষ তাড়ানোর বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু আমার দুই মেয়ে পাশে এসে দাঁড়ায়। সাহস-শক্তি জোগায়। বেগতিক বুঝে স্ত্রী সাহা সব মেনে নেয়। এখন প্রমিলাই আমার পরিবেশ বাঁচানোর লড়াইয়ে শক্তির আধার।’ শঙ্করের কথার পিঠে প্রমিলাদেবীর সংযোজন, ‘এখন দেখছি অনেকেই ওঁর ডাকে সাড়া দিচ্ছেন। বুঝতে পারছি, বনের মোষ তাড়ানোর মধ্যেই সার্থকতা রয়েছে। তবে, লক্ষ্যকে স্থির রাখতে হবে।’
আজও লক্ষ্যে স্থির শঙ্কর। ঘুমোলে স্বপ্ন দেখেন সবুজ বিপ্লবের। - নিজস্ব চিত্র