সংবাদদাতা, বোলপুর: বীরভূম জেলায় আগামী ছয় দিনের মধ্যে ভোটার তালিকার ‘স্ক্রুটিনি’ করা হবে। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে জেলার বিধায়ক ও ব্লক সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক করে ফের স্ক্রুটিনি করে রিপোর্ট রাজ্য নেতৃত্বের হাতে তুলে দেব। শনিবার আয়োজিত ভুয়ো ভোটার নিয়ে জেলা কমিটির বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ভুয়ো ভোটার রুখতে বীরভূমে তৃণমূলের জেলা কমিটির এই বৈঠক আয়োজন করা হয়েছিল। এদিনের বৈঠকে জেলার শীর্ষ নেতৃত্ব ছাড়াও ব্লক, পঞ্চায়েত সমিতি, শহর ও অঞ্চল সভাপতিদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে এদিনের বৈঠকের আগে কোর কমিটির বৈঠক করা উচিত ছিল বলে দাবি করেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ। প্রসঙ্গত গত বৃহস্পতিবার, কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বৈঠকে ভুয়ো ভোটার তালিকা নিয়ে সরব হয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তার প্রেক্ষিতে প্রতিটি জেলাকে সেই তালিকা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই মোতাবেক এদিন জেলা কমিটির বৈঠক আয়োজন করা হয় বোলপুরে। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার তথা রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ, সিউড়ির বিধায়ক তথা কোর কমিটির আহবায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ সহ জেলার সর্বস্তরের তৃণমূল নেতারা। বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘ভোটার তালিকা নিয়ে মূলত আলোচনা হয়েছে। আগামী ছয় দিনের মধ্যে ভোটার তালিকার ‘স্ক্রুটিনি’ করা হবে। এরপর ফের আগামী ৮ মার্চ জেলার বিধায়ক ও ব্লক সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক করা হবে। দ্বিতীয় দফার সেই বৈঠকে ফের স্ক্রুটিনি করে রিপোর্ট রাজ্য নেতৃত্বের হাতে তুলে দেব। বীরভূম জেলায় ভুয়ো ভোটার রয়েছে কি না, তা দেখতেই এই বৈঠক আয়োজন করা হয়েছিল। কারণ বর্তমান যে তালিকা রয়েছে, সেটি ২০২৪-২৫ সালের। ২০২৫-২৬ সালের নতুন করে যে তালিকা বের হবে, সেখানেই সব মিলিয়ে দেখে নেওয়া হবে, কোনও ত্রুটি থাকলে ‘অবজেকশন’ দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের যে ৮৫টি জনমুখী প্রকল্প রয়েছে, তার একটি তালিকা তৈরি করে বাড়ি বাড়ি যাওয়া হবে। এক একটি বাড়িতে কতগুলো করে প্রকল্প পেয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। উদ্দেশ্য একটাই, ২০২৬ সালের নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীকে যাতে ভোট দেওয়া হয়, তা ভোটারদের বোঝানো হবে। তবে এই বৈঠকের আগে কোর কমিটির বৈঠক ডাকা উচিত ছিল বলে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর কথাই শেষ কথা। তিনি বলেছিলেন, কোর কমিটি বীরভূম জেলা চালাবে। তাই আগে কোর কমিটির বৈঠকে আলাপ আলোচনা করার পরেই দলীয় বৈঠক ডাকা উচিত ছিল বলে আমি মনে করি। এরপর তিনি বলেন, আমি মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী। আর কাউকেই আমি চিনি না, চিনতেও চাই না। এই দু’জনের হাত যাঁদের মাথায় থাকবে, তিনিই নেতা। বাকি কথা সময় বলবে। কেউ যদি বলে আমি এর অনুগামী ওর অনুগামী, তাহলে তার তৃণমূল দলে থাকা উচিত নয়। প্রসঙ্গত, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী অনুব্রত মণ্ডলকে উদ্দেশ্য করে বলেন কেষ্ট কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না, কাজলকেও কনফিডেন্সে নিতে হবে। আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও শতাব্দী রায়কেও মাঝে মাঝে ডেকে নেবে। কিন্তু এদিনের বৈঠকে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা ও বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়কে দেখা যায়নি। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আসানসোলে রাজ্য হস্তশিল্প মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থাকার কারণে বৈঠক যোগদান করতে পারেনি।’ তবে শতাব্দী রায়কে ফোন ও মেসেজ করা হলেও তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।
(ভুয়ো ভোটার তালিকা নিয়ে বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস আয়োজিত জেলা কমিটির বৈঠকে অনুব্রত মণ্ডল সহ অন্যান্যরা। বোলপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।)