সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: ভোটের দু’দিন আগে শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য বাম সমর্থকদের কাছে আবেদন জানালেন। এনিয়ে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, জয় অনিশ্চিত বুঝতে পেরে বিজেপি এখন বামেদের ভোট চাইছে। অনেকে আবার এর মধ্যে বাম-রাম সমঝোতার দিকটিও দেখতে পাচ্ছেন। 
দার্জিলিং  জেলা তৃণমূলের (সমতল) সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষ বলেন, আমরা এতদিন যে বাম-রাম সমঝোতার কথা বলে এসেছি, এদিন  তাতে সিলমোহর দিলেন শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। অনেকদিন ধরে বাম-রাম এক হয়ে লড়ছে তৃণমূলকে হারাতে। বামেদের ভোটেই এ রাজ্যে বিজেপির শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে। এবার বামেদের ভোটেও বিজেপি জিততে পারবে না। দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল জেতার মতো জায়গায় রয়েছে। 
যদিও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা অশোক ভট্টাচার্য বিজেপি বিধায়কের এই আবেদনকে ধিক্কার জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিজেপি সর্বত্র চাপে রয়েছে। দার্জিলিং আসনেও তারা জেতার মতো জায়গায় নেই। তাই ভোটের দু’দিন আগে শিলিগুড়ির বিধায়ককে বামেদের ভোটের জন্য আবেদন জানাতে হচ্ছে। কিন্তু বামপন্থী মনোভাবাপন্ন ভোটাররা বিজেপি বিধায়কের আবেদন প্রত্যাখ্যান করবেন। কারণ, তাঁরা জানেন, দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে একমাত্র সিপিএম-কংগ্রেস লড়াই করতে পারে। 
বুধবার শিলিগুড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, গত লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে সিপিএম চতুর্থ স্থান পেয়েছিল। বামেদের ভোট খুবই সামান্য। কিন্তু নীতি বিসর্জন দিয়ে কংগ্রেসের হাতে তামাক খেয়ে বামেরা জোট করেছে। তাই তৃণমূল বিরোধী জোট শক্তিশালী করতে বাম মনোভাবাপন্ন ভোটারদের বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। 
বিজেপি বিধায়কের এই আবেদনে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা, কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীদের প্রচারে এনেও দার্জিলিং লোকসভা আসনে জেতার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছে না বিজেপি। অন্যদিকে, ভূমিপুত্রকে প্রার্থী করে তৃণমূল পাহাড়-সমতলে প্রচারে ঝড় তোলার চেষ্টা করেছে। সবমিলিয়ে এবার এই আসনে জেতা যে কঠিন তা বুঝতে পেরেছে বিজেপি। সেকারণেই বামেদের ভোটের দিকে তাকিয়ে বিজেপি। 
গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জেতার পরও শিলিগুড়ি পুরসভা ও মহকুমা পরিষদের নির্বাচনে বিজেপি মুখ থুবড়ে পড়ে। বিধানসভা নির্বাচনের পর বিজেপির পাশ থেকে সাধারণ মানুষ সরে আসতে শুরু করেছে। 
এদিন শঙ্কর ঘোষের কথাতেও সেই ইঙ্গিত মিলেছে। তিনি বলেন, বামেদের চার শতাংশ ভোট যেকোনও আসনের ভাগ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। গত বিধানসভা নির্বাচনে দেখা গিয়েছে, তৃণমূল সামান্য ব্যবধানে জিতেছে। সেক্ষেত্রে বামেদের ভোট পেলে  বিজেপি জিততে পারত। লোকসভা নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জেতার জন্য আমরা বামেদেরও ভোট চাইছি। 
এদিকে, বিতর্ক এড়াতে সরাসরি বামেদের ভোট চাওয়ার প্রসঙ্গ অস্বীকার করছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অরুণ মণ্ডল বলেন, কাউকে নির্দিষ্ট বা আলাদা করে নয়, আমরা সকলের ভোট চাইছি।