বলরাম দত্তবণিক, নলহাটি: ‘আদালতের রায় অসম্পূর্ণ। যাঁরা অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তাঁরা এখনও অধিকার ফিরে পাননি। সহযোদ্ধারা যেদিন সসম্মানে অধিকার পেয়ে স্কুলে ফিরে যাবেন, সেদিনই খুশি হব।’ সোমবার আদালতের রায়ের পর এমনই প্রতিক্রিয়া নলহাটির সোমা দাসের। সোমা দাসই একমাত্র ব্যক্তি আদালতের রায়ে যাঁর চাকরি যায়নি। ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় বসেছিলেন সোমা। মেধা তালিকায় তাঁর নাম থাকা সত্ত্বেও তিনি চাকরি পাননি বলে অভিযোগ। যার জেরে হাইকোর্টে মামলা হয়। চাকরির দাবিতে অন্যান্যদের সঙ্গে তিনিও কলকাতার রাজপথে অবস্থান বিক্ষোভে শামিল হন। ২০১৯ সালে তাঁর শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। বিষয়টি জানতে পারেন এই মামলার তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি সোমাকে অন্য কোনও দপ্তরে চাকরি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সোমা স্কুলেই চাকরি করবেন বলে জানিয়ে দেন। সেই মতো সরকারকে সুপারিশ করেন বিচারপতি। অবশেষে কমিশন ২০২২ সালের ৪ জুন সোমাকে নিয়োগপত্র দেয়। তিনি বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে মধুরা হাইস্কুলে বাংলার শিক্ষিকা হিসাবে কাজে যোগ দেন। চাকরি পাওয়ার পরও অসুস্থ শরীরে তিনি একাধিকবার ধর্নামঞ্চে এসে সহযোদ্ধাদের চাকরির দাবিতে সোচ্চার হন।
সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট এসএসসির ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে। শুধু মানবিক কারণে নলহাটির আশ্রমপাড়ার সোমা দাসের চাকরি বহাল রেখেছে। যদিও এই রায় ‘সম্পূর্ণ নয়’ বলে প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন সোমা দাস। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে বলেই নিয়োগ বাতিল হয়েছে। প্যানেলে যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা এখনও বঞ্চিতই রয়েছেন। আমি সেদিনই খুশি হব, যেদিন সমস্ত যোগ্য ও প্রকৃতরা চাকরি পাবেন।’ সোমার বাড়িতে তিনি ছাড়াও রয়েছেন তাঁর বাবা, মা ও ভাই। প্রায় ২৪ হাজার চাকরি বাতিলের মধ্যে একমাত্র মেয়ের চাকরি থেকে যাওয়াতে সেই বাড়িতে নেই কোনও উচ্ছ্বাস। পরিবারের অন্যদেরও বক্তব্য, ‘যেদিন বঞ্চিত সকলে স্কুলের চাকরিতে যোগ দেবেন, সেদিনই আমরা উচ্ছ্বসিত হব।’