সাপ্তাহিক বর্তমান

গঙ্গার উৎস কি কৈলাস?

শিবের জটা থেকে নির্গত গঙ্গার উত্সস্থল কৈলাস নয়, সেই ভূবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিলেন অধ্যাপক অলককৃষ্ণ গুপ্ত।
হিন্দু পুরাণে  কৈলাস  পর্বতকে বলা হয় শিব-শিবার আবাস। এই নিয়ে নানা কাহিনিও প্রচলিত আছে। শিব স্বয়ং মহাকাল। এই মহাকালের জটা থেকে ধরাধামে নেমে আসেন গঙ্গা। দেবী গঙ্গার প্রবল বেগ যেহেতু সরাসরি পৃথিবী ধারণ করতে পারবেন না তাই শিব জটায় আবদ্ধ করলেন জাহ্নবীকে। তাই অনেকেই মনে করেন কৈলাসই গঙ্গার উত্স। যদিও পরে বিজ্ঞান সেই ধারণাকে নস্যাত্ করেছে। 
ভারতের উত্তরে ২ হাজার ৩০০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত হিমালয় পর্বতমালাকে ভূতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করা যায়: ১) শিবালিক পাদদেশ অঞ্চল: ভারত, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং ভুটান এলাকা জুড়ে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কিমি দীর্ঘ এই অঞ্চলে অবস্থিত পর্বতমালা তিন হাজার ফুটের থেকে বেশি উঁচু নয়। এর প্রধান শৃঙ্গগুলির অন্যতম চুরিয়া, মহাভারত, অন্নপূর্ণা, ধৌলাগিরি, ল্যাংটাং ইত্যাদি। ২) শিবালিক পাদদেশ অঞ্চলের দক্ষিণে লেসার হিমালয় অঞ্চল পশ্চিমে সিন্ধু নদী থেকে পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদী পর্যন্ত ২ হাজার ৬০০ কিমি দীর্ঘ। অঞ্চলটি ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার চওড়া। এখানকার উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গগুলির নাম পীরপঞ্জাল, নাগটিব্বা এবং মহাভারত রেঞ্জ।  ৩) মধ্য কেন্দ্রীয় অঞ্চল: ভারত, নেপাল ও চীনের মধ্যে অবস্থিত এই অঞ্চলটি প্রায় ১ হাজার ৫০০ কিমি দীর্ঘ। এর প্রধান শৃঙ্গগুলির নাম মাউন্ট এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, মাকালু, লোৎসে ইত্যাদি। ৪) ট্রান্স হিমালয় অঞ্চল: এটি প্রধানত চীন এবং তিব্বত অঞ্চলের ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। এই অঞ্চলটি ৪০-৪২ কিলোমিটার চওড়া। এই ট্রান্স হিমালয় অঞ্চলেই কৈলাস পর্বত এবং মানস সরোবর অবস্থিত। কৈলাস পার্বত্য অঞ্চলে বহু শিখরের মধ্যে সর্বোচ্চ শিখর হল মাউন্ট কৈলাস, ২ হাজার ২০২ ফিট উঁচু। এই কৈলাস পর্বতমালার ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে মানস সরোবর অবস্থিত (চিত্র ২)। এই হ্রদটি সম্ভবত কৈলাস পর্বতের হিমবাহর জলে পুষ্ট। মানস সরোবরের ৩৬ কিলোমিটার দক্ষিণে গঙ্গোত্রী অবস্থিত। এই অঞ্চলের প্রধান পর্বতশৃঙ্গ হল গুল্লা মান্ধাতা, নন্দাদেবী, ক্যানেট ইত্যাদি। 
পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে গঙ্গা নদী কৈলাস পর্বত বা শিবের জটা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। কৈলাস, তিব্বত ও নেপালের সীমান্তে অবস্থিত। এটি হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মাবলম্বীদের একটি পবিত্র স্থান হিসাবে বিবেচিত হয়। এঁদের বিশ্বাস এখানে ভগবান শিব বাস করেন। ভূতাত্ত্বিক এবং টেকটনিক কারণে এটি অত্যন্ত সক্রিয়। পর্বত শ্রেণিটি পাললিক শিলা যথা শেল, বেলেপাথর এবং চুনাপাথর দ্বারা গঠিত। এটি ভারতীয় প্লেট এবং ইন্দো ইওরোপীয়ান প্লেটের সংঘর্ষে নির্মিত। এটি ভারতীয় প্লেটের সাবডাকশনের কারণে ভয়ঙ্করভাবে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকা এবং অতিরিক্ত শিলা­-ধ্বস কবলিত এলাকাও বটে। আমি যমুনা নদীর দক্ষিণে বিন্ধ্যপর্বত অঞ্চলে একটি সাসমোলজিক্যাল স্টেশনের স্থাপনা করেছিলাম। এই স্টেশন থেকে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে থাকা চারটি উপগ্রহে সংকেত পাঠিয়ে সেখান থেকে পুনরায় প্রতিফলিত সংকেত হতে স্টেশনটির যথাযথ অবস্থান সঠিকভাবে নির্ধারণ করি। তার থেকে বোঝা যায় ভারতীয় প্লেট বছরে ৫০ মিটার হারে ইউরেশিয়ান প্লেটের নীচে সাবডাক্টেড হয়ে নিম্নগামী হচ্ছে। 
সাম্প্রতিক ইতিহাসে কৈলাস-মানস সরোবর অঞ্চলে বেশ কয়েক বার ভূমিকম্প হয়েছে। উদাহরণ-স্বরূপ, ১৯৫০ সালে এই অঞ্চলে ৮.৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয় যা অসম-তিব্বত ভূমিকম্প নামে পরিচিত। এই ভূমিকম্পের জন্য ভূমিধস এবং হিমবাহর গলনে বহু গৃহ ও সম্পত্তির বিনাশ হয়েছে।
সাম্প্রতিক অতীতে ২০১৫ সালে রিখটার স্কেলে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে নেপাল বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ভূমিকম্পটি কাঠমাণ্ডু উপত্যকা এবং আশপাশের অঞ্চলে অভূত পরিমাণে ক্ষতি ঘটিয়েছিল। এই ধরনের প্রাকৃতিক গোলযোগ ছাড়াও ভারতীয় প্লেট এবং ইউরেশিয়ান প্লেটের মধ্যে নিয়ত সংঘর্ষের কারণে এই অঞ্চলে রিখটার স্কেলে প্রায় ৪ মাত্রার ভূমিকম্প মাসে বহুবার হয়ে থাকে। তাই উত্তর কাশী, তিব্বত, কৈলাস পার্বত্য অঞ্চল, গঙ্গোত্রী, বদ্রীনাথ, কেদারনাথ ইত্যাদি পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর সংখ্যায় ভূমিধস ছাড়াও ওখানের হিমবাহগুলি বিগলিত হয়ে এলাকাটি প্রচুর পরিমাণে বিধ্বস্ত হয়ে থাকে। 
গোমুখ অঞ্চলে যেখানে গঙ্গার উৎপত্তি হয়েছে সেটি ৪ হাজার মিটার উপরে অবস্থিত।  ড্রয়টেরিয়াম এবং অক্সিজেন আইসোটোপিক রাসায়নিক বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে যে কৈলাস পর্বত প্রসূত নদীনালা, মানস সরোবর একদিকে এবং গঙ্গোত্রী এলাকার অববাহিকা এরিয়া সম্পূর্ণ পৃথক। এদের মধ্যে কোনও যোগাযোগ নেই। তাই বলতে বাধা নেই পৌরাণিক কাহিনির সঙ্গে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের কোনও মিল নেই।  
লেখক এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড গ্ল্যানেটারি সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক। ছবি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে। 
12d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৫ টাকা১১১.৮০ টাকা
ইউরো৯০.৭১ টাকা৯৩.৮৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা