যুগযুগান্তর ধরে চলে আসছে মানুষের অনন্ত যৌবন লাভের বাসনা। শাশ্বত যৌবন বলতে বার্ধক্যমুক্ত মানুষের শারীরিক অমরত্বের ধারণাকেই বোঝায়। সেই পৌরাণিক কাহিনি থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিল্প, সাহিত্য, গল্প, কবিতা, গান— সবেতেই উঠে আসছে অনন্ত যৌবন লাভের অদম্য ইচ্ছে। চিরস্থায়ী যৌবন অর্জন সম্ভব না হলেও তারুণ্যকে দীর্ঘায়িত করা সম্ভব হলেই বা মন্দ কী! সেই প্রাচীনকালের মুনি ঋষি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সকলেরই অনন্ত যৌবন লাভের বাসনা চিরাচরিত। কিন্তু কালের নিয়মে শৈশব, যৌবনের পর জ্বরা, বার্ধক্য ও মৃত্যু আসবেই। কিন্তু জরা, বার্ধক্য, মৃত্যুকে যদি ঠেকানো যায় তাহলে যৌবনের মেয়াদ হয় প্রলম্বিত। বিজ্ঞানীরা মানুষের যৌবনকে দীর্ঘমেয়াদি করার জন্য নিরন্তর গবেষণায় রত। মানুষের স্টেমসেল সংরক্ষণ করে রেখে জিন প্রকৌশল বিদ্যাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা চলছে। এর ফলে শিশুরা হবে বিদ্যায় বুদ্ধিতে পারদর্শী, শক্তিতে বলীয়ান।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কী এই চিরযৌবন? জরা-ব্যাধি-বার্ধক্যকে দূরে রেখে সুস্থ সবল নীরোগ দীর্ঘজীবন উপভোগ করাই যৌবনের লক্ষণ। দীর্ঘদিন কালো চুল, দাগছোপবিহীন উজ্জ্বল ঝলমলে ত্বক, মুক্তোর মতো ঝকঝকে দাঁতের সারি, প্রখর দৃষ্টিশক্তি ইত্যাদি বাহ্যিক লক্ষণ সমূহ যেমন তারুণ্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়, তেমনই দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক সক্রিয়তাও যৌবনেরই আর এক নাম। মজবুত হাড়ের গঠন, হৃৎপিণ্ডের ছন্দময়তা, স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি, শক্তিশালী হজমক্রিয়া, সুস্থ-স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে মস্তিষ্ক, লিভার, কিডনি, চোখ, স্নায়ুতন্ত্র ইত্যাদি দেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সাধারণত যৌবনকালেই সঠিকভাবে কর্মক্ষম থাকে।
সামগ্রিকভাবে তারুণ্য বলতে দেহের শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও নীরোগ সুস্থ জীবনকেই
বোঝায়। পাকা চুল, কুঞ্চিত ত্বক, ঝাপসা দৃষ্টিশক্তি, স্মৃতি বিভ্রম, দন্তবিহীন মাড়ি, চলাফেরায় শ্লথগতি—এসবই বার্ধক্যের প্রতিচ্ছবি।
তবে এক্ষেত্রে মনের কথাকে অবহেলা করলে চলবে না। বিশেষজ্ঞরা অনেক আগেই যেমন বলে গেছেন ‘মনের বয়স বাড়তে দিও না’ তেমনই আবার বলেছেন ‘আপনি নিজেকে যেমন মনে করেন আপনার বয়সও তাই।’ অর্থাৎ আপনার মন যদি সবুজ থাকে তাহলে আপনিও অবশ্যই চিরসবুজ।
যৌবন ধরে রাখার জন্য অনেক সময়ই নানারকম প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম ওষুধ-বিষুধ, ক্রিম, তেল, প্রসাধনী থেকে শুরু করে কসমেটিক্স সার্জারি, বোটক্স ইত্যাদি বিভিন্ন কিছুর দ্বারস্থ হলেও সত্যি করে বলতে হলে বাইরে থেকে ঘষা মাজা যতই হোক না কেন তা মোটেই দীর্ঘস্থায়ী ফলপ্রসূ হয় না।
খেয়াল করলে দেখবেন, যাদের বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন অনেকটাই বেশি তাদের স্বভাবতই একটু বয়স্ক দেখায়। তাই যৌবন ধরে রাখার প্রাথমিক শর্ত হিসেবে দেহের উচ্চতা, বয়স ও কর্মক্ষমতা অনুযায়ী সঠিক ওজন ধরে রাখুন। এতে যেমন ইয়ং লুক আসবে, তেমনই বিভিন্ন অসুখ-বিসুখও দূরে রাখা যাবে। এক্ষেত্রে দৈনিক প্রয়োজনীয় ক্যালরির মাত্রা আপনার বয়স শারীরিক অবস্থা ও উচ্চতা অনুযায়ী কতটা হওয়া উচিত, তা অবশ্যই ডায়েটিশিয়ানের কাছ থেকে জেনে নিন।
জোর দিতে হবে ব্যালেন্সড ডায়েটে। নিয়মিত যোগাভ্যাস ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের ওপর। ধূমপান, মদ্যপান, অতিরিক্ত তেল, চিনি, ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুডের অভ্যাস এড়িয়ে চলুন। দিনে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম ও ৩ লিটার জল পান প্রয়োজন যৌবন ধরে রাখার জন্য।
আজকের আলোচনা অবশ্য কী কী ফল খেলে যৌবন ধরে রাখা যায় সেই নিয়ে। এখন দেখা যাক কী কী সেই ফল আর কীভাবেই তা যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্রথমেই আসা যাক বেরি জাতীয় ফলের কথায়।
বেরি জাতীয় ফল: ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি, স্ট্রবেরি, আকাইবেরি, রাস্পবেরি ইত্যাদি বেরি জাতীয় ফলে অন্যান্য যে কোনও ফলের চেয়ে বহুগুণ বেশি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস থাকে। এইসব অ্যান্টি অক্সিড্যান্টের উপস্থিতির কারণে নিয়মিত কিছু পরিমাণ বেরি জাতীয় ফল খাওয়া গেলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কম থাকে ফ্রি র্যাডিক্যাল ড্যামেজ কম হয়। ত্বকের কোলাজেনের গঠন সুরক্ষিত হওয়ায় ত্বক উজ্জ্বল ও টানটান থাকে। বলিরেখা বা অকাল বার্ধক্যের ছাপ দূরে থাকে। এছাড়াও ডায়াবেটিস থেকে হাইপারলিপিডেমিয়া, ক্যান্সার, অ্যানেমিয়া, সর্দিকাশি, হৃদরোগ, অ্যাজমা, অ্যালার্জি এবং স্থূলত্ব প্রতিরোধে সাহায্য করে। অ্যান্থোসায়ানিন, লিউটিন, লাইকোপিন, ইলাজিক অ্যাসিড, ভিটামিন-সি ইত্যাদি অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের উপস্থিতির কারণে বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধ করে অকাল বার্ধক্য দূরে রাখতে সাহায্য করে বিভিন্ন বেরি জাতীয় ফল। আমাদের পরিচিত দেশীয় বেরি জাতীয় ফল হিসেবে আঙুর, জাম, আমলকী ইত্যাদি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
সাইট্রাস ফ্রুট: ত্বকের তারুণ্য ধরে রেখে অনন্ত যৌবন লাভের জন্য সবচেয়ে উপকারী ফল হিসেবে বেরির পরেই আসে বিভিন্ন সাইট্রাস ফলের নাম। কমলালেবু, মোসাম্বি, বাতাবিলেবু, পাতিলেবু ইত্যাদি সাইট্রাস ফল একদিকে যেমন রসে টইটম্বুর, সুস্বাদু তেমনই প্রচুর পরিমাণে থাকে ভিটামিন সি, বি-ভিটামিনস, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, কপার, ডায়েটারি ফাইবার এবং সর্বোপরি বিভিন্ন ধরনের ফ্ল্যাভোনয়েডস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস ধর্মী যৌগ বা বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের শুধু প্রতিরোধ নয়, প্রতিকারেও দারুণ সাহায্য করে। এইসব ভিটামিন সি যুক্ত ফল কোলাজেন সিন্থেসিস বাড়িয়ে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখে, বলিরেখা দূর করে, সান ড্যামেজ ও দাগছোপ দূর করে, ত্বকের ব্রণ, ফুসকুড়ি ও র্যাশ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এইসব ফল মাংসপেশির দুর্বলতা কমায়, রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায় এবং রুক্ষ শুষ্ক নির্জীব চুলকে করে তোলে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। অকালবার্ধক্য প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত ডায়েটে এই ধরনের সাইট্রাস ফ্রুট ১০০-১৫০ গ্রাম অন্তত থাকতে হবে। ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে এইসব রসাল-সাইট্রাস ফলের জুড়ি নেই। তবে খেতে হবে কিন্তু তাজা ফল। ফলের রসের গুণাগুণ তাজা ফলের চেয়ে অনেক কম। অনেকেই ব্রেকফাস্টের সঙ্গে এক গ্লাস মোসাম্বি বা কমলালেবুর রস পান করেন। এই অভ্যাস বদলে ফেলে তাজা ফল চিবিয়ে খান। তাতে বিভিন্ন ভিটামিনস, মিনারেলস, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস-এর পাশাপাশি শরীরে সুগারের পরিমাণ কম ঢুকবে, বাড়বে ডায়েটারি ফাইবারের পরিমাণ।
বিভিন্ন ধরনের লেবু জাতীয় সাইট্রাস ফ্রুটে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল ও বিভিন্ন এশেনশিয়াল নিউট্রিয়েন্টস-এর পাশাপাশি থাকে লিমোনিন, লিমোনিনয়েডস, ক্যুমারিন, সাইটোস্টেরল, গ্লাইকোসাইডস, ক্যারোটিনয়েডস, ফ্ল্যাভোনয়েডস ও ভিটামিন সি। এইসব অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস-এর গুণসমৃদ্ধ বিভিন্ন লেবু জাতীয় ফল অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দূর করে। ক্ষতিকর ফ্রি-র্যাডিক্যালসকে নিষ্ক্রিয় করে, দেহের সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখে, সর্দিকাশি, অ্যালার্জি, কনস্টিপেশন, অরুচি, বদহজম, ডিহাইড্রেশন থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস, হাই ব্লাডপ্রেশার, ডিপ্রেশন, আর্থ্রাইটিস, ক্যাটারাক্ট, অ্যানেমিয়া, ওবেসিটি ও অকালবার্ধক্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। সম্ভবত ভিটামিন সি যুক্ত বিভিন্ন ফলের অসামান্য গুণাগুণের জন্যই বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীতেও এইসব ফলের প্রভূত ব্যবহার হয়।
ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য যে কোনও ধরনের লেবু জাতীয় সাইট্রাস ফ্রুট অত্যন্ত উপকারী।
বেদানা বা আনার: অসাধারণ পুষ্টিগুণ ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস সমৃদ্ধ উজ্জ্বল লাল বর্ণের বেদানার দানাকে রুবির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। ১০০ গ্রাম এই ফলে ১৪.৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৫.১ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার, ৬৫ কিলোক্যালরি শক্তির পাশাপাশি থাকে পিউনিক্যালাজিন ও পিউনিক অ্যাসিডের মতো অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস।
বিভিন্ন ভাইরাল, ব্যাকটেরিয়ান ও প্রদাহজনিত অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধে যেমন বেদানা বা আনার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তেমনই অকালবার্ধক্য প্রতিরোধে দারুণ সাহায্য করে সুন্দর সুমিষ্ট এই ফল। বেদানা কোলাজেনের গঠন ঠিক রেখে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা ও ঔজ্জ্বল্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই ফল অ্যানেমিয়া, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার, আর্থ্রাইটিস এবং ব্রেস্ট ও প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে দীর্ঘদিন সুস্থ সুন্দর জীবন উপহার দেয়। মাত্র ১টা মাঝারি সাইজের আনার থেকেই প্রায় ৩০ মিগ্রা ভিটামিন-সি পাওয়া যায়। যা ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
প্রতিদিন ব্রেকফাস্ট বা টিফিনে রাখতে পারেন অত্যন্ত উপকারী এই ফল।
টম্যাটো: অনেক রান্নাতেই লাল টুকটুকে টম্যাটো ছাড়া যেন মন ওঠে না। টম্যাটো ছাড়া তো স্যালাড সম্ভবই নয়। অন্যদিকে ওজন কমাতে চাইলে বা ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ এমনকী ক্যান্সারের ঝুঁকি কম রাখার জন্যও টম্যাটো চাই-ই চাই। সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব কমিয়ে ত্বকের দাগছোপ, চোখের তলার কালি, সানবার্ন, ড্রাইনেস ও বলিরেখা প্রতিরোধ করে তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে টম্যাটো। পাকা টম্যাটোর লাল টুককুটে রঙের কারণ মূলত ‘লাইকোপিন’ নামক এক বিশেষ অতিসক্রিয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস ধর্মী বায়োপিগমেন্টস যা বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধের পাশাপাশি কোষ ও কোষপর্দার অকাল ভাঙন প্রতিরোধ করে, বার্ধক্য বিলম্বিত হয়।
লাইকোপিন ছাড়াও টম্যাটোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-সি, ক্যারোটিনয়েডস, পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালশিয়াম ইত্যাদি থাকে। ১০০ গ্রাম পাকা টম্যাটোতে জলীয় অংশ প্রায় ৯৪ শতাংশ যা ত্বক, চুল ও চোখের শুষ্কতা দূর করে। টম্যাটোতে যথেষ্ট পরিমাণে পটাশিয়াম থাকলেও সোডিয়ামের পরিমাণ বেশ কম হওয়ায় হাই প্রেশারের রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী, টম্যাটোতে ক্যালরির পরিমাণ অত্যন্ত কম, ১০০ গ্রাম রান্না করা টম্যাটোতে মাত্র ২৭ কিলোক্যালরি থাকে। তাই ডায়েটাররা ওজন কমানোর জন্য অবশ্যই ডায়েটে রাখবেন টম্যাটো ও টম্যাটো জাত খাদ্য। মজার ব্যাপার টম্যাটোর বিশেষ গুণের জন্য অর্থাৎ ক্যান্সারসহ বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ ও অকালবার্ধক্য দূর করতে সাহায্যকারী উপাদান হিসেবে যে লাইকোপিন জাদুমন্ত্রের মতো কাজ করে, কাঁচা টম্যাটোর চেয়ে রান্না করা টম্যাটোতে সেই লাইকোপিনের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি, যেমন ১০০ গ্রাম কাঁচা টম্যাটোতে যদি মাত্র ২৯৩৭ মাইক্রোগ্রাম লাইকোপিন থাকে তবে রান্না করা টম্যাটোতে তার পরিমাণ হয় ৩৭০৩ মাইক্রোগ্রাম এবং টম্যাটো স্যস ও টম্যাটো কেচাপে এই লাইকোপিনের পরিমাণ যথাক্রমে ৬২০৫ মাইক্রোগ্রাম ও ৯৯০০ মাইক্রোগ্রাম।
এই লাইকোপিন আসলে প্রোভিটামিন-এ জাতীয় ক্যারোটিনয়েডস হওয়ায় ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য অত্যন্ত অপরিহার্য। বিশেষত আমাদের মতো গ্রীষ্ম প্রধান দেশে সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর UVA ও UVB এর প্রভাব থেকে ত্বককে মুক্ত রাখে। ত্বকের সানট্যান বা সান ড্যামেজ এমনকী স্কিন ক্যান্সারের আশঙ্কাও কমায় টম্যাটো। রান্নায় টম্যাটো ব্যবহারের পাশাপাশি টম্যাটো স্যুপ বা স্যালাড এক্ষেত্রে বেশ উপকারী।
আঙুর: রেসভেরাট্রাস, বায়োফ্ল্যাভোনয়েডস, লিউটিন ফেনলিক অ্যাসিড ইত্যাদি ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস সমৃদ্ধ আঙুর একদিকে যেমন বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে সাহায্য করে অন্যদিকে তেমনই অকালবার্ধক্য প্রতিরোধ করে যৌবনকালকে দীর্ঘায়িত করতে সাহায্য করে।
সবুজ, কালো, লালচে বেগুনি ইত্যাদি ধরনের আঙুরের গুণগত মান মোটামুটি একইরকমের হলেও কালচে বা লালচে রঙের আঙুরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতির মাত্রা কিছুটা বেশি।
১০০ গ্রাম আঙুর থেকে মোটামুটি ৭১ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায় এবং ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক ইত্যাদির পাশাপাশি প্রায় ২.৯ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার পাওয়া যায়। সর্দিকাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, অ্যাজমা, গাউট, কনস্টিপেশন, বদহজম, হৃদরোগ ও বিশেষ কয়েক ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে যেমন অত্যন্ত সক্রিয় এই সুস্বাদু ফল, তেমনই বয়সকালের মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের ডিজেনারেশন বিশেষত অ্যালঝেইমার্স ও ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে দারুণ সাহায্য করে আঙুর। অকালবার্ধক্য প্রতিরোধের জন্য ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য রক্ষায় অত্যন্ত কার্যকরী বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফেনলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ আঙুর।
তবে উপকার পেতে হলে জ্যুস করে নয়, খান সরাসরি ফল হিসেবে, নানারকম ফলের সঙ্গে মিশিয়ে ফ্রুট স্যালাড বা রায়তা হিসেবে।
পাকা পেঁপে: অনন্ত যৌবন রক্ষায় অমৃতসম অমৃততুম্বী বা পেঁপের ভূমিকা অসামান্য। ক্যারোটিনয়েডস সমৃদ্ধ এই ফল ত্বক, চুল ও চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। মাত্র ১০০ গ্রাম পাকা পেঁপের জলীয় ভাগ প্রায় ৯০.৮ শতাংশ ও শক্তিমাত্রা ৩২ কিলোক্যালরি মাত্র। ক্যারোটিনয়েডস ও ভিটামিন-সি এর মাত্রা অত্যন্ত বেশি, যথাক্রমে ৬৬৬ মাইক্রোগ্রাম ও ৫৭ মিগ্রা হওয়ায় ফ্রি-র্যাডিক্যালস ড্যামেজ প্রতিরোধ করে, ত্বকের দাগছোপ, সানবার্ন ও সানট্যান প্রতিরোধ থেকে শুরু করে ত্বকের হাইড্রেশন বজায় রাখে, ত্বকের বলিরেখা ও অকালবার্ধক্য প্রতিরোধ করে, ত্বক ও চুল উজ্জ্বল, মসৃণ ঝকমকে রাখতে সাহায্য করে এবং সর্বোপরি বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধে সাহায্য করে পাকা পেঁপে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন, ক্যাটারাক্ট, ক্যানিটিভ ডিসফাংশন বা ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করতে হলে অল্পবয়স থেকেই নিয়মিত ডায়েটে কিছু পরিমাণ পাকা পেঁপে রাখা উচিত। সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর UVA ও UVB-এর দরুন ত্বকের পিগমেন্টেশন, ব্রণ ফুসকুড়ি, হিটর্যাশ, অ্যালার্জি বা সোরিয়াসিস-এর মতো সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে পাকা পেঁপের লাইকোপিন ও বিটাক্রিপ্টোজ্যানথিন জাতীয় ক্যারেটিনয়েডস গ্রুপের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস। ত্বকের চুলকানি, র্যাশ, পিম্পলস, সানট্যান, রিংকলস ইত্যাদি সমস্যা দূর করার জন্যে ব্যবহৃত রেটিনল বা রেটিনয়েডস ক্রিম মূলত ক্যারোটিনয়েডস গোত্রীয়। অর্থাৎ পাকা পেঁপে খেলে তো উপকার পাবেনই, চটজলদি কিছু উপকার পেতে হলে পাকা পেঁপের মাস্ক ত্বকে ও চুলে লাগিয়ে দেখতে পারেন।
বিভিন্ন ধরনের বায়োফ্ল্যাভোনয়েডস ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস সমৃদ্ধ এই ফল ডায়াবেটিস, ওবেসিটি, আর্থ্রাইটিস, কনস্টিপেশান, নেফ্রাইটিস ও বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
নড়বড়ে দাঁত ও মাড়ির সমস্যা মূলত বয়সকালে হলেও সুন্দর, ঝকঝকে মজবুত দাঁত যা যৌবনের পরিচায়ক পেতে হলে সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন পাকা পেঁপে খান।
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য রক্ষার জন্যে ও অকালবার্ধক্য প্রতিরোধের জন্যে পাকা পেঁপেতে যে গুণাগুণ পাবেন, কাঁচা পেঁপেতে তা পাবেন না। ডায়াবেটিসেও মাত্রা মতো খেতে পারেন পাকা পেঁপে।
আমলকী: অকালবার্ধক্য প্রতিরোধ করে অনন্ত যৌবন ধরে রাখতে হলে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই সাইট্রাস ফ্রুটের ওপর ভরসা করতেই হবে। ১০০ গ্রাম কাঁচা আমলকীতে প্রায় ৬০০ মিগ্রা ভিটামিন সি থাকে যা সমপরিমাণ আপেলের চেয়ে প্রায় ১২০ গুণ বেশি। এছাড়াও আমলকীতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে। কোয়েরসেটিন, ইলাজিক অ্যাসিড, গ্যালিক অ্যাসিড, চেবুলিনিক অ্যাসিড, ট্যানিন ইত্যাদি অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস ধর্মী ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস-এর উপস্থিতির কারণে আমলকীকে বলা হয় সর্বরোগহর ওষুধি ফল।
বিভিন্ন ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে বদহজম, কনস্টিপেশান, ডায়াবেটিস, দাঁতের গোড়া থেকে রক্তপড়া, হাই ব্লাড প্রেশার, হার্টের অসুখ, অস্টিওপোরোসিস, অ্যানেমিয়া, ক্যান্সার, সর্দিকাশি, হাইপারলিপিডেমিয়া ইত্যাদি সমস্যার মোকাবিলায় সাহায্য করে আমলকী।
চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায় আমলকীর ব্যবহারের কথা অনেকেরই জানা। বিভিন্ন ক্রিম ও হেয়ার অয়েলে আমলকীর বার্ধক্য প্রতিরোধী গুণকে কাজে লাগানো হয়। ত্বকের দাগছোপ, ব্রণ, সানবার্ন, রিংকলস, ড্রাইনেস, চুল পড়ে যাওয়া, অসময়ে চুল পেকে যাওয়া এগজিমা, দাঁতের গোড়া আলগা হয়ে যাওয়া, ড্রাইনেস অফ আইস, রুক্ষ শুষ্ক ত্বক ও চুলের সমস্যা প্রতিরোধে দারুণ সাহায্য করে আমলকী।
আপেল: অসাধাণ স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণে ভরপুর আপেল শুধু যে শরীর, মন ও মস্তিষ্কের দেখভাল করে তাই-ই নয় দূরে রাখে অকালবার্ধক্য। ১০০ গ্রাম আপেলের খাদ্য শক্তির পরিমাণ প্রায় ৫৯ কিলোক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট ১৩.৪ গ্রাম, ডায়েটারি ফাইবার ১ গ্রাম এবং ক্যালশিয়াম ও জিঙ্কের মাত্রা যথাক্রমে ১০ মিগ্রা ও ৫৮.৮ মিগ্রা। সবচেয়ে বড় কথা আপেলে কোয়েরসেটিন, লিউটিন, জ্যানথিন ইত্যাদি ফ্ল্যাভোনয়েডস জাতীয় অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস ও টারপিনয়েডস থাকায় বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ বিশেষত বয়সকালীন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা যেমন আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস, হার্টের অসুখ, ডায়াবেটিস, ওবেসিটি, অ্যালঝেইমার্স, পারকিনসন্স কনস্টিপেশান এবং ব্রেস্ট, প্যাংক্রিয়াস ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কম রাখে। উজ্জ্বল ত্বক, চুল, প্রখর দৃষ্টিশক্তি ও স্মৃতিশক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে ‘One Apple a day’.
আম: অত্যন্ত সুস্বাদু, রসালো, সুমিষ্ট, সুবাসিত। পুষ্টিগুণে ভরপুর অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল আমকে বলা হয় রসরাজ। ভিটামিন সি, আলফা-ক্যারোটিন, পেকটিন, বিটা ক্যারোটিন, ফ্ল্যাভোনয়েডস, ল্যাকটোনস, এস্টার ইত্যাদি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস ধর্মী ফাইটোকেমিক্যালস-এর উপস্থিতির কারণে অকালবার্ধক্য প্রতিরোধ করে অনন্ত যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে এই ফল। কাঁচা বা পাকা উভয় অবস্থাতেই আম বেশ স্বাস্থ্যকর ও উপাদেয়। ১০০ গ্রাম পাকা আমের জলীয় অংশ প্রায় ৮১ শতাংশ, শক্তিমাত্রা ৭৪ কিলোক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট প্রায় ১৭ গ্রাম, ডায়েটারি ফাইবার ০.৭ গ্রাম এবং বিটাক্যারোটিনয়েডস-এর পরিমাণ অত্যন্ত বেশি প্রায় ২৭৪৩ মাইক্রোগ্রাম। পাকা আমে সোডিয়াম কম ও পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি হওয়ায় হাই ব্লাড প্রেশারের মানুষজনও খেতে পারবেন। কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ, হাইপারলিপিডেমিয়া, কনস্টিপেশান, অ্যানেমিয়া, লিভারের অসুখ থেকে শুরু করে অবসাদ, অপুষ্টি, অ্যালঝেইমার্স, পারকিনসন্স, এজ রিলেডেট ম্যাকুলার ডিজেনারেশন, ক্যাটারাক্ট, নাইট ব্লাইন্ডনেস, সানবার্ন ও প্রি-ম্যাচিওর এজিং-এর আশঙ্কা কমাতে পাকা আম দারুণ সাহায্য করে। খেতে পারেন ব্রেকফাস্ট বা টিফিনে বা স্ন্যাকস হিসেবে। অন্যদিকে ত্বকের কোমলতা, স্থিতিস্থাপকতা ও ব্রণ ফুসকুড়ির সমস্যা কমিয়ে দেহের সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় কাঁচা আম বা আমপোড়ার শরবত।
কালোজাম: গরমকালে ক্ষণিকের অতিথি হিসেবে কালোজামের দেখা মেলে। স্বভাবতই আমের পরেই জামের নাম আসলেও জামে ক্যালোরি ও কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ আমের তুলনায় বেশ কম এবং গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যথেষ্ট কম হওয়ায় ডায়াবেটিকদের জন্যে আদর্শ। নানান অত্যন্ত আবশ্যক নিউট্রিয়েন্টস ছাড়াও জামে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার, বিভিন্ন এসেনশিয়াল অয়েল ও ফেনলিক অ্যাসিডের গুণে সমৃদ্ধ হওয়ায় শুধু যে বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে সাহায্য করে তাই-ই নয়, ত্বকের দেখভালের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত উপকারী এই ফল।
জামে থাকে লিউটিন নামের অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস যা সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে মুক্ত রাখে, সানবার্ন ও সানট্যান প্রতিরোধ করে, ত্বকের কোলাজেনের গঠন ঠিক রাখে, ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে ও অকালে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। জামের বিশেষ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল প্রপার্টি থাকায় মরশুমে কিছুদিন পাকা কালোজাম খাওয়া গেলে অরুচি, অ্যানেমিয়া, জন্ডিস, বদহজম, অ্যাসিডিটি, গাউট ও বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধ করে যৌবনকে দীর্ঘায়িত করা সম্ভব হয়।
তরমুজ: স্নিগ্ধ, শীতল, উজ্জ্বল লাল রঙের শাঁসযুক্ত তরমুজের প্রায় ৯২ শতাংশই জল। আয়রন, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, ডায়েটারি ফাইবার ও ভিটামিন সি যুক্ত এই ফলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট লাইকোপিন থাকে। তরমুজের ১০০ গ্রাম রসালো শাঁসে প্রায় ৪১০০ মাইক্রোগ্রাম লাইকোপিন থাকে যা বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে খুব সাহায্য করে।
দেহের ইলেকট্রোলাইটস ব্যালান্স করা, ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ও স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখা, সানবার্ন ও দাগছোপ দূর করা ও অকালবার্ধক্য প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তরমুজ দুর্দান্ত কাজ দেয়।
তরমুজের বিশেষ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি প্রপার্টি আছে। আর্থ্রাইটিস, গ্যাসট্রাইটিস, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশান, টাইফয়েড, হাইপারটেনশান, হার্টের অসুখ, ক্যান্সার, অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস, অ্যানেমিয়া, ওবেসিটি, ডিহাইড্রেশান ইত্যাদি অসুখ-বিসুখের প্রতিরোধ করে তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে তরমুজ।
ত্বকের ন্যাচারাল সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করে তরমুজ। স্মুদি, স্যালাড, পরিজ ইত্যাদি নানাভাবেও খেতে পারেন তাজা রসালো তরমুজ, তবে দিনে ২০০-২৫০ গ্রামের বেশি খাওয়া উচিত হয়।
চেনা জানা ফলের বাইরে কিছু অচেনা বা কমজানা ফলের পরিধি আছে যা অত্যন্ত পুষ্টিকর হওয়ায় রোগবালাই দূর করার পাশাপাশি বার্ধক্যকে কাছে ঘেঁষতে দেয় না। এরকম কিছু ফলের হদিশ রইল পাঠকদের জন্যে।
ড্রাগন ফ্রুট: অসাধারণ সুন্দর দেখতে এই হালকা লালচে বা গোলাপি রঙের ফলগুলোর আদি বাসস্থান সেন্ট্রাল ও সাউথ আমেরিকা হলেও এখন আমাদের দেশের অনেক বাজারেই এই ছোট ছোট কাঁটাওলা ফলগুলোর দেখতে পাওয়া যায়।
১০০ গ্রাম ড্রাগন ফ্রুটের শাঁসে মাত্র ৫২ কিলোক্যালরি খাদ্য শক্তি ও ৩ গ্রাম মতো ডায়েটারি ফাইবার থাকে। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ এই ফলে বিটাক্যারোটিন, হাইড্রক্সিসিনামেট, বিটালেনস, ক্যাপটিন ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফ্ল্যাভোনয়েডস জাতীয় অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস থাকায় বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধে সক্ষম এই ফল। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখা, দাঁত ও হাড় মজবুত রাখা, ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা, অ্যানেমিয়া, আর্থ্রাইটিস, অ্যাজমা, সর্দিকাশি, হাইপ্রেশার থেকে জ্বরজারি বিভিন্ন রোগেই পথ্য হতে পারে এই ফল। ত্বকের অ্যালার্জি, সানবার্ন, ব্রন-ফুসকুড়ি, র্যাশ, রিংকলস ইত্যাদি প্রতিরোধ করে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে ড্রাগন ফলের জুড়ি নেই। স্মুদি, সালসা, স্যালাড বা তাজা ফল হিসেবেও খেতে পারেন ড্রাগন ফ্রুট।
পিচ: অনেকটা আপেলের মতো দেখতে টকমিষ্টি স্বাদের ফ্যাটবিহীন, পটাশিয়াম সমৃদ্ধ কম ক্যালরিযুক্ত এই ফল বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধের পাশাপাশি ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখতে দারুণ সাহায্য করে। তাজা পিচ ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যারোটিনয়েডস, ভিটামিন-সি, লিউটিন, জি-জ্যানথিন, বিটা-ক্রিপ্টোজ্যানথিন ইত্যাদি থাকায় সেলুলার ড্যামেজ প্রতিরোধ করে। সানবার্ন, রিংকলস, প্রিম্যাচিওর এজিং, শুষ্ক রুক্ষ ত্বক, অসময়ে চুল পেকে যাওয়া বা চুল পড়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যার মোকাবিলায় সাহায্য করে পিচ।
বার্ধক্য প্রতিরোধের আরও এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। ১০০ গ্রাম পিচে মাত্রা ৩৯ কিলোক্যালরি থাকে। তাই ডায়েটারদের জন্যে এই ফল খুব ভালো।
এছাড়াও এজ রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশান, ক্যাটারাক্ট, অস্টিওপোরোসিস, বদহজম, নিউরাল ডিসঅর্ডার এবং বয়সকালীন বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধ করে যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে এই ফল।
অ্যাভোকাডো: মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ হার্ট হেলদি, অত্যন্ত উপকারী মেক্সিকান এই ফল আমাদের দেশে এখনও খুব জনপ্রিয় না হলেও অনেকেই চেনেন এই ফল অ্যাভোকাডোকে। অনেকটা নাসপাতির মতো আকৃতির জন্যে এই ফলকে অ্যালিগেটর পিয়ার্সও বলা হয়। সম্ভবত অ্যাভোকাডোই একমাত্র ফল যাতে অত্যন্ত বেশি প্রায় ১৫ শতাংশ ফ্যাট থাকে, যার আবার ২/৩ ভাগই অত্যন্ত হার্টহেলদি মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড টাইপের।
বিভিন্ন অত্যাবশ্যক ভিটামিনস, মিনারেলস, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং লাইকোপিন ও বিটাক্যারোটিন জাতীয় শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস সমৃদ্ধ অ্যাভোকাডো ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্যে অপরিহার্য। ত্বকের দাগছোপ, বলিরেখা, সানবার্ন, পিগমেন্টেশান, ড্রাইনেস, পিম্পলস, অকালে চুল পড়ে যাওয়া, রুক্ষ, শুষ্ক চুল, চুল পেকে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যার মোকাবিলা করে যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে এই ফল।
লিউটিন ও জি-জ্যানথিন সমৃদ্ধ এই ফল সূর্যের ক্ষতিকর UV রশ্মি থেকে রেটিনাকে সুরক্ষিত রাখে এবং বয়সকালে ক্যাটারাক্ট ও ম্যাকুলার ডিজেনারেশানের আশঙ্কা কমায়।
এছাড়াও স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, ডিপ্রেশান থেকে শুরু করে দাঁতের গোড়ায় জীবাণুর সংক্রমণ, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ, কনস্টিপেশান বা DNA ড্যামেজের সম্ভাবনাও কম রাখতে সাহায্য করে এই মহার্ঘ ফল।
তাজা ফল হিসেবে যেমন খাওয়া যায়, তেমনই অ্যাভোকাডোর শাঁসের সঙ্গে বিভিন্ন পছন্দসই সিজনিং মিশিয়ে স্যান্ডউইচ স্প্রেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
বয়স ধরে রাখার সূত্রাবলি
কালের নিয়মে শৈশবের পরে আসে যৌবন, তারপর বার্ধক্য। ‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে...’ সমস্ত জীবের জন্যেই এটা চিরসত্য, চিরশাশ্বত। তবে সুস্থ নীরোগ দেহ ও মনের অধিকারীরা যৌবনকালকে দীর্ঘায়িত করতে পারেন, ঠেকিয়ে রাখতে পারেন অকালবার্ধক্যের আক্রমণকে। তবে এর জন্যে ডায়েট ও লাইফস্টাইলের ওপর যেমন বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে, তেমনই মেনে চলতে হবে কিছু সাবধানবাণী। আসা যাক সেসব কিছু নিয়মাবলির প্রসঙ্গে। যেমন—
১.কোনওভাবেই দেহের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বাড়তে দেওয়া যাবে না। প্রপার ডায়েট, যোগব্যায়াম বা নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে ব্যক্তি বিশেষের বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। বাড়তি ওজন মানেই কিন্তু অসুখ-বিসুখের হাতছানি এবং সেইসঙ্গে অকালে বুড়িয়ে যাওয়া।
২. চলবে না অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড, জাংক ফুড, চিনি, মিষ্টি ও মিষ্টিজাত খাবার। অতিরিক্ত লবণদার খাবার এবং অতিরিক্ত ফ্যাট ও ক্যালরিযুক্ত খাবার।
৩. ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস আছে? বাদ দেওয়ার চেষ্টা করুন।
৪. সারাদিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস জল এবং ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম অত্যন্ত জরুরি। এই দুয়ের অভাবে কিন্তু অকালবার্ধক্য হামলা করতে পারে।
৫. স্ট্রেস, স্ট্রেইন, রাগ, ক্রোধ, হিংসা ইত্যাদি সবার জীবনেই থাকে। কিন্তু এগুলো নিয়ন্ত্রণের কৌশল আপনার আয়ত্তে থাকলে যৌবনের আয়ুও বাড়বে। দরকারে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
৬. ফল খাওয়ার অভ্যাস নেই? রইল তো একগুচ্ছ ফলের হাল-হদিশ। তালিকা থেকে বেছে নিন পছন্দসই ফল নিজেরই স্বার্থে।
৭. কোনও বিশেষ অসুস্থতা থাকলে কোন কোন ফল খাওয়া চলবে বা চলবে না সে ব্যাপারে ডায়েটিশিয়ানের মতামত মেনে চলতে হবে।