বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
কলকাতা

পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে মৌলবাদী মুসলমানরা যত মাথাচাড়া দেবে, এ দেশেও হিন্দু মৌলবাদ ততই শক্তিশালী হবে

 (বেগম খালেদা জিয়ার আমলে বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থান নিয়ে সম্পাদকীয় প্রতিবেদন লিখেছিলেন বরুণ সেনগুপ্ত।  ২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের আজকের পরিস্থিতিতেও প্রাসঙ্গিক। প্রতিবেদনটি পুনর্মুদ্রণ করা হল।)

বরুণ সেনগুপ্ত: পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মৌলবাদী মুসলমানদের উগ্র মনোভাব ক্রমেই মারাত্মক হচ্ছে। তাদের শক্তিও দিন দিন বাড়ছে। পাকিস্তানের এবারের ‘নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনে’ মৌলবাদী মুসলিম সংগঠনগুলি বেশ ভালো আসন দখল করেছে। এবার তাদের নির্বাচনী স্লোগান ছিল প্রধানত মার্কিন-বিরোধী। সঙ্গে সঙ্গে তারা ‘লড়কে লেঙ্গে কাশ্মীর’ কথাটাও বেশ জোর দিয়ে বলেছিল। বরাবরই পাকিস্তানে ভারত-বিরোধী মনোভাব তীব্র। এখন তা আরও অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। আপাতত পাকিস্তানি মৌলবাদী দলগুলির প্রধান জেহাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। তারপরই তাদের টার্গেট ভারত। সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে ইজরায়েল। পাকিস্তানে এখন হিন্দুর সংখ্যা খুবই কম। তবু, সম্প্রতি পাকিস্তানের কয়েকটি এলাকায় হিন্দুদের মন্দির এবং ধর্মস্থানের ওপর হামলা হয়েছে। পাকিস্তানের মৌলবাদী মুসলমানদের হামলার হাত থেকে অবশ্য খ্রিস্টানরাও রেহাই পাচ্ছে না। হালে বেশ কয়েকবার পাকিস্তানের বিভিন্ন গির্জায় মৌলবাদী মুসলমানরা হামলা চালিয়েছে। বলা বাহুল্য, পাকিস্তানে এখন হিন্দুর চেয়ে খ্রিস্টানদের সংখ্যা অনেক বেশি। এবং, ও দেশের খ্রিস্টানদের মধ্যে একটা বড় অংশ বেশ সম্পন্ন গৃহস্থ। আর ও দেশে যে সামান্যসংখ্যক হিন্দু এখনও রয়েছে, তাদের অধিকাংশই দরিদ্র। কিন্তু, সেই দরিদ্র হিন্দুদের ওপরও মৌলবাদী মুসলমানরা হামলা চালাতে ছাড়ছে না।
বাংলাদেশেও মৌলবাদী মুসলমানদের শক্তি এবং হামলা সম্প্রতি বেশ কিছুটা বেড়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বামী একজন অগ্রণী স্বাধীনতা যোদ্ধা ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন। সেই সময় তরুণ সেনানায়ক জিয়া ভারতের বিভিন্ন শহরে বসবাস করেছেন। সে আমলে তাঁর মধ্যে কেউ ধর্মীয় উগ্রতা দেখেনি। কিন্তু, আজ তাঁর স্ত্রীর রাজত্বে বাংলাদেশে মৌলবাদী মুসলমানরা দ্রুত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে এখনও এক কোটির বেশি হিন্দু রয়েছে। বেগম জিয়ার রাজত্বে মৌলবাদী মুসলমানরা দেশের নানা প্রান্তে হিন্দুদের ওপর হামলা শুরু করে দিয়েছে। বেগম জিয়ার রাজত্ব শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশের কিছু এলাকায় হিন্দু বিতাড়ন শুরু হয়। বাংলাদেশের মৌলবাদী মুসলমানদের হিন্দু বিরোধিতা এবং হিন্দুদের ওপর হামলা সম্প্রতি আরও বেড়ে গিয়েছে। এবার পুজোয় সময় বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় হিন্দুদের পূজা মণ্ডপ এবং মন্দির আক্রান্ত হয়েছে। কতগুলি এলাকায় প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে কেউ কোনও দেবদেবীর মূর্তি পূজা করতে পারবে না। ...দুর্গাপুজোর সময় বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় মৌলবাদী মুসলমানরা যে হিন্দু-বিরোধী অভিযান শুরু করেছে ও দেশের সরকার যদি এখনই কঠোর হাতে তা দমন না করে তাহলে ভারতীয় উপমহাদেশের এই প্রান্তে পরিস্থিতি জটিল এবং বিপজ্জনক হতে বাধ্য।
সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের কথা হল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত নানাভাবে সাহায্য করা সত্ত্বেও বাংলাদেশে বেগম জিয়ার রাজত্বে ভারত-বিরোধী মনোভাব ক্রমেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। নতুন সরকারের বহু কর্তা এবং কর্ত্রী হয়তো মনে করেন যে, ভারত-বিরোধী মনোভাব যত তীব্র হবে, ততই তাঁরা তাঁদের নিজেদের নানা ব্যর্থতা ঢাকতে পারবেন। কিন্তু, কৃতজ্ঞতার কথা ছেড়ে দিলেও এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা লড়াইয়ে যে বহু সহস্র ভারতীয় জওয়ান প্রাণ দিয়েছে সে কথা বেমালুম ভোলা গেলেও, বাস্তব পরিস্থিতিকে অস্বীকার করা বাংলাদেশের বর্তমান শাসকদের পক্ষে মারাত্মক হতে পারে। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার চলতে থাকলে তার প্রতিক্রিয়া পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, অসম সর্বত্র দেখা দিতে বাধ্য। এবং, সেই প্রতিক্রিয়ার জোর ধাক্কা বাংলাদেশ সরকারের গায়ে গিয়েও লাগবেই। দেশভাগের পর থেকেই নানা কারণে পূর্ব বাংলায় ধর্মীয় মৌলবাদ ক্রমে দুর্বল হচ্ছিল। পরিবর্তে দ্রুত জোরদার হয়ে উঠেছিল ভাষা-ভিত্তিক আত্মপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন। এই আন্দোলনই ক্রমে স্বাধীনতা যুদ্ধের রূপ নেয়। সেই স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ছিলেন শেখ মুজিবর রহমান। আর, সেই যুদ্ধে অন্যতম প্রধান সেনানায়ক ছিলেন বেগম জিয়ার স্বামী। তাঁরই রাজত্বে বাংলাদেশে আবার ধর্মীয় মৌলবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে এর চেয়ে পরিতাপের বিষয় কী হতে পারে?
পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে মৌলবাদী মুসলমানদের দাপট এবং তাণ্ডব বাড়লে ভারতেও তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে বাধ্য। এখানকার মৌলবাদীরাও সেই সুযোগে মারাত্মকভাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করবেই। এবং, সাধারণ মানুষের একটা অংশও সেই হিন্দু মৌলবাদীদের সমর্থনে আসরে অবতীর্ণ হবে। ঠিকই, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে মৌলবাদী মুসলমানদের তাণ্ডব বাড়ার প্রতিক্রিয়ায় এখানে হিন্দু মৌলবাদীদের তাণ্ডব বাড়া উচিত নয়। এখানকার কেন্দ্রীয় এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকারকে যে কোনও উগ্র প্রতিক্রিয়া দমনের চেষ্টা করতেই হবে। কিন্তু, ব্যাপারটা বলা যত সহজ করা তত সহজ নয়। ধর্মীয় ভাবাবেগ যখন তীব্র হয়ে ওঠে এবং পঙ্কিল আকার ধরে, তখন তা দমন করা অত্যন্ত কঠিন। ব্রিটেনের কতগুলি এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে প্রোটেস্ট্যান্ট এবং রোমান ক্যাথলিক উগ্রপন্থীদের লড়াই চলছে। বহু চেষ্টা করেও উভয় সম্প্রদায়ের যুক্তিবাদী এবং সুস্থ মানসিকতার লোকজন তা থামাতে পারেননি। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে উগ্রপন্থী মৌলবাদী মুসলমানরা যত সক্রিয় হবে, আমাদের দেশের হিন্দু মৌলবাদীরাও ততই তাদের প্রভাব বাড়াবার সুযোগ পেয়ে যাবে।
তাছাড়া, মৌলবাদ কোনও দেশে বা এলাকায় বাড়লে এবং পঙ্কিল আকার ধারণ করলে সেই দেশের এবং সেই এলাকার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও অর্থনীতি নানাভাবে বিপর্যস্ত হতে বাধ্য। গুজরাতের গত কয়েক মাসের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় যে শুধু মুসলমানদেরই ক্ষতি হয়েছে তা নয়, ওখানের বহু হিন্দুও নানা বিপদে পড়েছে। এবং, সামগ্রিকভাবে গুজরাত রাজ্যের অর্থনীতি একটা বড় ধাক্কা খেয়েছে। বাংলাদেশেও আজ যদি হিন্দুদের ওপর মৌলবাদী মুসলমানদের হামলা বাড়তে থাকে তাহলে ও দেশের অর্থনীতিও বেশ কিছুটা বিপদে পড়বে। নানাভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও এই কথা অত্যন্ত খাঁটি। কিন্তু, পাকিস্তানের মুশকিল হল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ও দেশে ভারত-বিদ্বেষ এবং হিন্দু-বিদ্বেষ নতুন করে বেড়ে গিয়েছে। পাকিস্তানের বহু মানুষ এখনও মনে করে, পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি মুসলমানরা স্বাধীনতা চায়নি এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেনি, ‘হিন্দু ভারত’ তার নিজের স্বার্থে পাকিস্তানকে দু’টুকরো করে দিয়েছে। ১৯৭১ সনের পর থেকে পাকিস্তানের প্রায় সব রাষ্ট্রনায়ক কম বা বেশি এই ইস্যুতে দেশের মানুষকে খেপিয়ে গিয়েছেন। তাঁদের একটাই আওয়াজ, ‘এর বদলা নিতে হবে’। কাশ্মীর ইস্যুটা আগেও ছিল। কিন্তু, স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের পর পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশের মধ্যে ভারত ও হিন্দু বিরোধিতার তীব্রতা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। আপাতত অবশ্য পাকিস্তানের মৌলবাদী মুসলমানদের প্রধান টার্গেট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু, ও দেশের মৌলবাদীরা আপাতত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বেশি ক্ষিপ্ত হলেও তাদের ভারত এবং হিন্দু বিরোধিতার তীব্রতা কোনও অংশে কম নয়। ১৯৭১ সনের লড়াইয়ে পরাজিত হওয়ার পর ভুট্টোর মতো রাজনৈতিক নেতাও দেশের কর্তা হয়েই পাকিস্তানের সাধারণ মানুষকে খুশি করার জন্য ঘোষণা করেছিলেন: আমি অ্যাটম বোমা তৈরি করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। আমি বদলা নেবই। আমি প্রয়োজন হলে সহস্র বছরও হিন্দু ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব!
তবে, ভুট্টো রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। তাই একদিকে যেমন তিনি দেশের মানুষের ক্রোধ বিপথে চালিত করার জন্য ‘হিন্দু ভারতের’ বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করতেন, অন্যদিকে তেমনি বাস্তব পরিস্থিতিটাও বুঝতেন।...
আবার বলছি, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে উগ্রপন্থী মুসলমানদের কর্তৃত্ব এবং তাণ্ডব যত বাড়বে, ভারতেও ততই মৌলবাদী হিন্দু রাজনৈতিক নেতাদের সুবিধা হয়ে যাবে।...ভারতের হিন্দু-মুসলমান সকলেরই বোঝা উচিত, আজ যদি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে জঙ্গি মুসলমানদের হানা বাড়তে থাকে, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে মৌলবাদী মুসলমানদের হিন্দু-বিরোধী তাণ্ডব বৃদ্ধি পায় তাহলে শুধু গুজরাত নয়, ভারতের বহু রাজ্যে মোদিদের সমর্থকদের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকবে।
বহু বছর আগের একটি ঘটনা আমার মনে পড়ে। ‘স্টেটসম্যান’ কাগজে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক টয়েনবি’র একটা লেখা বেরিয়েছিল। সেই লেখার বিরুদ্ধে একদল মৌলবাদী মুসলমান ছাত্র কলকাতার ধর্মতলা অঞ্চলে হঠাৎ তাণ্ডব শুরু করে দেয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল গোটা এলাকায়। এমন কি, পুরসভা ভবন থেকে বহু প্রগতিশীল বামপন্থী হিন্দুও ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনি দিয়ে আসরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন!
যে কোনও ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া হতে বাধ্য। কোথাও দপ করে আগুন জ্বলে, কোথাও বা আস্তে আস্তে আগুন এগয়। কিন্তু, প্রতিক্রিয়া কেউ ঠেকাতে পারে না। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে মৌলবাদী মুসলমানদের তাণ্ডব এবং উগ্র মনোভাব যত বাড়বে, আমাদের দেশেও তার ততই তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে।
 
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

গৃহে শুভ অনুষ্ঠানের আয়োজন। সন্তানের আবদার মেটাতে অর্থব্যয় বাড়তে পারে। মনের অস্থিরতা-উত্তেজনা দমন করুন।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৬.০৮ টাকা৮৭.১৭ টাকা
পাউন্ড১০৫.৪২ টাকা১০৮.৩৩ টাকা
ইউরো৮৮.৮৮ টাকা৯১.৫৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা