মুম্বই: সিরিজ হেরে মুখ পুড়েছিল আগেই। এবার নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশের কলঙ্কও গায়ে লাগল রোহিত-ব্রিগেডের। মাত্র ১৪৭-এর টার্গেট তাড়া করতে নেমে তাসের ঘরের মতো ১২১ রানে গুটিয়ে গেল টিম ইন্ডিয়া। ঋষভ পন্থ ছাড়া আর কাউকে খুঁজেই পাওয়া গেল না কিউয়িদের বিরুদ্ধে সম্মান বাঁচানোর লড়াইয়ে। ব্যর্থতার মিছিলে সবার যেন এক ক্ষুরে মাথা কামানো। পরিসংখ্যান বলছে, এর আগে ঘরের মাঠে ২০০০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্টে ‘চুনকাম’ হয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। সেটা ছিল দুই ম্যাচের সিরিজ। কিন্তু তিন বা তার বেশি টেস্টের সিরিজে এটাই ভারতীয় দলের একমাত্র হোয়াইটওয়াশ হওয়ার লজ্জা। রবিবার, ম্যাচের তৃতীয় দিন সকালে আজাজ প্যাটেল যখন ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়লেন, তখন নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস থামল ১৭৪ রানে। অর্থাৎ জয়ের জন্য ভারতের দরকার ১৪৭ রান। হাতে দশ উইকেট। সঙ্গে অফুরন্ত সময়। রোহিত শর্মা ও যশস্বী জয়সওয়াল ড্রেসিংরুম থেকে বেরোতেই নড়ে বসল গ্যালারি। জয়ের প্রহর গোনা শুরু করে দেন ভারতীয় সমর্থকরা। কিন্তু কে জানত রোদ ঝলমলে ওয়াংখেড়ে আচমকা ডুববে আঁধারে! গাভাসকর, দ্রাবিড় না হোক, রাহানে-পূজারার মতো কাউকেও খুঁজে পাওয়া গেল না। বিনা বাধায় ২৫ রানের দুরন্ত জয়ে সিরিজ ৩-০ করল নিউজিল্যান্ড। সেই সঙ্গে গড়ল অনন্য নজিরও।
ভারতের এই চরম বিপর্যয়ের পিছনে রয়েছে একাধিক কারণ। দলের অধিকাংশ ক্রিকেটারেরই টেস্ট খেলার মানসিকতা নেই। খোদ রোহিত শর্মা যেভাবে টি-২০ স্টাইলে শট খেলে আউট হলেন, তা ক্ষমার অযোগ্য। চাপের মুখে দাঁড়াতে পারেননি যশস্বীও। প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর গিলকে নিয়ে অনেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তিনিও জাজমেন্ট দিতে গিয়ে বোল্ড হলেন। আর বিরাট কোহলিকে নিয়ে যত কম বলা যায় ততই ভালো। তিনি মহাতারকা। বহু কঠিন লড়াই একার কাঁধে উতরে দিয়েছেন অতীতে। এখন তিনি সত্যিই দলের বোঝা। এই সিরিজে চূড়ান্ত ব্যর্থ ভিকে। তিন ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ মাত্র ৯২ রান। আর রোহিত করেছেন ৮০। দলের দুই স্তম্ভই যখন নড়বড়ে, তখন সাফল্য প্রত্যাশা করাই অমূলক। কোহলি ১ রানে প্যাটেলের বলে লেগ বিফোর হতেই ম্যাচের রাশ চলে যায় নিউজিল্যান্ডের হাতে। কয়েক বলের মধ্যেই ফুলটস বলে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সরফরাজ। একটা সময় ভারতের স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ২৯। প্রবল চাপের মুখে একা কুম্ভের মতো গড় রক্ষায় ব্রতী শুধুই ঋষভ পন্থ। তাঁর লড়াই মনে করিয়ে দিচ্ছিল গাব্বার রূপকথার জয়। কিন্তু উল্টো দিক থেকে দরকার ছিল একটু সাপোর্ট। সেটা আর পেলেন কোথায়! লাঞ্চের আগে ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ঋষভ হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর মনে হয়েছিল হোয়াইটওয়াশ হয়তো এড়াতে সফল হবে ভারত। কিন্তু বিরতির পর একটা বিতর্কিত আউট সব কিছু ওলটপালট করে দিল। ঋষভকে ৬৪ রানে কট বিহাইন্ড দেন থার্ড আম্পায়ার। কিন্তু রিপ্লেতে তা স্পষ্ট বোঝা যায়নি। কারণ, বল ক্রস করার মুহূর্তেই ব্যাট ও প্যাডের সংযোগ ঘটেছিল। স্নিকো মিটারে তা স্পষ্ট। তবুও আম্পায়ার আউট দেন। হতাশা ও ক্ষোভ উগরে মাঠ ছাড়েন ঋষভ। তার পরেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ভারতের ব্যাটিং। এমন একটা মধ্যমানের দলের কাছে হেরে টিম ইন্ডিয়ার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার পথও কঠিন হল। রোহিতরা পয়েন্ট তালিকায় সিংহাসনচ্যুত হলেন অস্ট্রেলিয়ার কাছে। এরপর সফর ডনের দেশে। কিউয়িদের লেপটে দেওয়া কলঙ্ক দ্রুত ঝেড়ে ফেলতে না পারলে তৃতীয়বার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে খেলার আশা দিবাস্বপ্ন হয়ে থাকবে রোহিতদের কাছে।
স্কোরবোর্ড: নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস ২৩৫। ভারত প্রথম ইনিংস ২৬৩।
নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস (১৭১-৯ এর পর)- আজাজ ক আকাশ বো জাদেজা ৮, ও’রৌরকি অপরাজিত ২, অতিরিক্ত ১৭, মোট (৪৫.৫ ওভারে) ১৭৪। উইকেট পতন: ১০- ১৭৪। বোলিং: আকাশ ৫-০-১০-১, সুন্দর ১০-০-৩০-১, অশ্বিন ১৭-১-৬৩-৩, জাদেজা ১৩.৫-৩-৫৫-৫।
ভারত দ্বিতীয় ইনিংস (টার্গেট ১৪৭ রান)- যশস্বী এলবিডব্লু বো ফিলিপস ৫, রোহিত ক ফিলিপস বো হেনরি ১১, গিল বো আজাজ ১, কোহলি ক মিচেল বো আজাজ১, পন্থ ক ব্লান্ডেল বো আজাজ ৬৪, সরফরাজ ক রাচীন বো আজাজ ১, জাদেজা ক ইয়ং বো আজাজ ৬, সুন্দর বো আজাজ ১২, অশ্বিন ক ব্লান্ডেল বো ফিলিপস ৮, আকাশ বো ফিলিপস ০, সিরাজ অপরাজিত ০, অতিরিক্ত ১২, মোট (২৯.১ ওভারে) ১২১। উইকেট পতন: ১-১৩, ২-১৬, ৩-১৮, ৪-২৮, ৫-২৯, ৬-৭১, ৭-১০৬, ৮-১২১, ৯-১২১, ১০-১২১। বোলিং: হেনরি ৩-০-১০-১, আজাজ ১৪.১-১-৫৭-৬, ফিলিপস ১২-০-৪২-৩।
- নিউজিল্যান্ড ২৫ রানে জয়ী।
- ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ কিউয়িদের।
- ম্যাচের সেরা আজাজ প্যাটেল।
- সিরিজের সেরা উইল ইয়ং।