বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
রঙ্গভূমি
 

আনন্দজীবন নাট্যোৎসব

দিনাজপুর কৃষ্টি আয়োজিত সাতদিনের আনন্দজীবন নাট্যোৎসব হয়ে গেল কুশমন্ডিতে। ২০ থেকে ২৬ জানুয়ারি এই উৎসবে মোট আটটি দল অংশগ্রহণ করে। প্রতিদিনই দিনাজপুরের পাশাপাশি অন্যান্য জেলা থেকে আগত দলগুলির একটি করে নাটক মঞ্চস্থ হয়। উৎসবের প্রথমদিনে স্থানীয় বিধায়ক নর্মদা রায় প্রদীপ জ্বালিয়ে শুভ সূচনা করেন। মনোরমা নৃত্য বিদ্যালয়ের শিশুদের নৃত্যগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়। এবারের এই উৎসবে এলাকাবাসীর স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া। শীতের ঠান্ডা আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে প্রেক্ষাগৃহ উপচে পড়া ভিড়ে তৃতীয় বর্ষের নাট্যমেলার প্রতিটি নাটকই ছিল আকর্ষণীয়। নাট্য উৎসবে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুনন্দা বিশ্বাস (সভাপতি কুশমন্ডি পঞ্চায়েত সমিতি), সৈপা লামা (বিডিও কুশমন্ডি), সুরজিৎ ঘোষ (সভাপতি, পরিচালক কৃষ্টি দিনাজপুর)।
প্রথম দিনে উত্তর দিনাজপুর বিচিত্রা নিবেদিত অয়ন জোয়ারদারের নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হয় ‘কারু’। নাটকটিতে নমতি নামের একটি ছোট্ট কিশোরী মেয়ের জবানীতে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। নমতি স্কুলে পড়ে। খুব গরিব পরিবারে মেয়ে। কিন্তু পড়াশুনোয় ভালো। সে যখন পড়তে বসে তখন ইতিহাস বইয়ের পাতা থেকে চরিত্রগুলো তার সামনে এসে ভিড় করে। প্রত্যেকে তাকে প্রশ্ন করে। নমতি সকলের প্রশ্নের উত্তর দেয়। স্কুলের দিদিমণি তাকে খুব ভালোবাসে। সে দিদিমণির কাছ থেকেই জানতে পারে শিক্ষা বোবার মুখেও বোল ফোটাতে পারে। দিদিমণির কথা শুনে সে ভাবে, তাহলে তার বন্ধু কাকতাড়ুয়াও কথা বলতে পারবে। কারণ তার বন্ধু কাকতাড়ুয়া ওরফে কাড়ু মাঠে সবসময় দাঁড়িয়ে থাকে। নমতি তার সঙ্গে সব কথা বলে। তার ভালো লাগা খারাপ লাগা সবকিছু সে কাড়ুর সঙ্গে ভাগ করে নেয়। তাকে লেখাপড়া শেখানোর জন্য স্কুলে নিয়ে যায় নমতি। শিক্ষিকারা সকলে না চাইলেও অনেকে এটাকে সমর্থন করে।
ছ’মাসের কর্মশালায় তৈরি এই নাটকটিতে কালিয়াগঞ্জের শিশু-কিশোররা অংশগ্রহণ করে। অভিনয়ে কাড়ু-র ভূমিকায় অনন্ময় ঘোষ, নমতির চরিত্রে অনিন্দিতা সাহা, শিক্ষিকার ভূমিকায় রিয়া রায় এক কথায় অনবদ্য। দ্বিতীয় নাটক ‘এক যে ছিল রাজা’। এই নাটকে সাম্প্রতিককালের রাজ্য-রাজনীতির ছায়া দেখতে পাওয়া যায়। রাজা খুব বোকা সাধাসিধে মানুষ। কিন্তু তার স্ত্রী পদ্মিনী খুব চালাক ও বুদ্ধিমান। সে রাজাকে সরিয়ে নিজে সিংহাসনে বসে রাজ্য চালাতে চায়। রাজ্য চালানোর মতো কোনও দক্ষতা না থাকা সত্ত্বেও রানির আবদার বাধ্য হয়েই রাজা মেনে নেয়। সেইমতো রানি সিংহাসনে বসে এবং তার ইচ্ছামতোই রাজাকে কারাগারে বন্দি করা হয়। এরপর অপারদর্শী, অদক্ষ রানি রাজ্যে সব ভুলভাল নীতি-নিয়ম চালু করে। মহামন্ত্রীকে সরিয়ে নিজের ভাইকে সেই পদে বসিয়ে দেয়। কালা নির্বোধ ভাইটি রাজ্যের মন্ত্রী হয়ে একেবারে বেসামাল হয়ে পড়ে।
বিশান গাজন দলের উপস্থাপনায় নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় ঋষি মুখোপাধ্যায়। বোকা বোকা রাজার ভূমিকায় সুবীর ঠাকুর অসাধারণ। রানির চরিত্রে শ্যামলী বন্দ্যোপাধ্যায় ও মহামন্ত্রীর ভূমিকায় তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় যথাযথ।
মালদা মালঞ্চ-র ‘এবং বিদ্যাসাগর’ ছিল পরের দিনের নাটক। বাংলাদেশের লেখক মান্নান হীরা রচিত নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন পরিমল ত্রিবেদী। নির্দেশনা ছাড়াও তিনি নিজেও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন। পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অমর কর্মকাণ্ডের মূল কয়েকটি ঝলক তুলে ধরা হয় নাটকে। ঘটনাগুলি প্রায় সকলেই জানেন, তবে গল্পের বাঁধনে উপস্থাপনার মুন্সিয়ানা অবশ্যই নির্দেশকের। বাল্যবিবাহ প্রথা, বিধবা বিবাহ, নারীশিক্ষা ও তাদের জাগরণ, সর্বোপরি নবজাগরণের মতো কাজ তাঁর হাত ধরেই এসেছিল এদেশে। সেই সব কিছুই উঠে আসে কাহিনীতে। ছোট্ট একটি বালিকার এক বুড়ো কুলীন ব্রাহ্মণের সঙ্গে বিয়ের দৃশ্য নিয়ে নাটকের সূচনা হয়। নিজের ছেলেকে বিধবা মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে বহু সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হন। বিধবা বিবাহ আইনসিদ্ধ করতে গিয়ে তদানীন্তন উচ্চ শ্রেণীর ব্রাহ্মণ, জমিদারদের রোষের মুখে পড়েন। আবার মাইকেল মধুসূদন দত্তের দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করেন। গল্পাকারে এইসব ঘটনাই উঠে আসে নাটকে।
নাটকের কিছু দৃশ্য বর্ণনায় অসামঞ্জস্য থাকলেও উপস্থাপনার অভিনবত্বে দেখতে মন্দ লাগে না। বিশেষত কাহিনীর তাৎপর্যপূর্ণ বিন্যাসে নাটকটি উপভোগ্য হয়। নির্দেশনা ও বাঁকুড়ার জমিদার ধনীরাম বাচস্পতির ভূমিকায় পরিমল ত্রিবেদীর অভিনয় দীর্ঘদিন দর্শক মনে রাখবেন। অন্যান্য চরিত্রগুলোর মধ্যে মাইকেলের চরিত্রে সৌমেন ভৌমিক, হেনরিয়েটার ভূমিকায় সুকৃতি রাউত, বিদ্যাসাগরের চরিত্রে জয়রাজ ত্রিবেদী এবং তার সঙ্গে মালা দে, বনানী ত্রিবেদী, গোলক সরকার, কেশব দাস, পুনম ত্রিবেদীর অভিনয় নাটকটিকে সমৃদ্ধ করে।
এগুলি ছাড়াও বালুরঘাট সমবেত নাট্যকর্মী প্রযোজিত এবং প্রদোষ মিত্র পরিচালিত ‘নাটের গুরু’, শিলিগুড়ি ঋত্বিক প্রযোজিত ও শুভঙ্কর গোস্বামী পরিচালিত ‘হাত বদল’, কালিয়াগঞ্জ অনন্য থিয়েটার প্রযোজিত ও শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত ‘লাশের উপাখ্যান’, বহরমপুর প্রান্তিক গোষ্ঠী প্রযোজিত ও প্রিয়ঙ্কশেখর দাস পরিচালিত ‘মাই নেম ইজ গহরজান’, রায়গঞ্জ ছন্দম প্রযোজিত ও সুধাংশু দে পরিচালিত ‘কাল প্রধানমন্ত্রী আসছে’ নাটকগুলি এই উৎসবে পরিবেশিত হয়।
প্রতিটি নাটকেই আয়োজকদের এক সামাজিক বার্তা ও সচেতনতা গড়ে তোলার প্রয়াস দেখা যায়। মঞ্চ, আলোকসজ্জা যথাযোগ্য হওয়ায় নাটকগুলি দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে।
কলি ঘোষ 

14th     March,   2020
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ