বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর

এ নাটক এক সমকালীন দলিল যা দর্শককে ভাবায় 

সময়টা বড়ই ভয়ঙ্কর। ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে রাজনীতির কারবারিরা যে যার মত করে ঘুঁটি সাজাতে তৎপর। ধর্ম নামক বস্তুটিকে সামনে রেখে চলছে গরিব-বড়লোকের শ্রেণীবিন্যাস আর চিরকালীন সংঘাত। ঠিক এই সময়ে দাঁড়িয়ে ‘কালিন্দী নাট্যসৃজন’-এর নতুন প্রযোজনা ‘মন সারানি’ চমকে দেয়। রমাপ্রসাদ বণিকের বলিষ্ঠ রচনা ভীষণরকম প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।
একটি দেবালয় এবং তাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জীবিকার মানুষের জীবনযাপন। ধনী-দরিদ্র, উচ্চ-নীচ, সৎ-অসতের বিভাজন, বৈষম্য। দেবতার সামনেই তাঁর সৃষ্ট শ্রেষ্ঠ জীব, মানুষের স্বার্থপরতা, নীচতা, হিংসার এক পরিচিত চিত্র উঠে আসে এই নাটকের দৃশ্য থেকে দৃশ্যে। হয়ে ওঠে এক সমকালীন দলিল।
একদা শ্মশানে কাজ করা সাঁওতাল রমণী মনোমায়া সোরেন এই মন্দিরে এসে ঠাঁই নিয়েছে। নিত্যদিন মৃত্যু, দুঃখ, বেদনা, কান্না দেখতে দেখতে জীবনের প্রতি বিরূপ হয়ে শ্মশানের কাজটি ছেড়ে সে দিয়েছে। মনোমায়া হাসি, আশায় উজ্জল ঝলমলে মুখ দেখতে চায়, তাই সে এই মন্দির চত্বরে এসে হাজির হয়। মানুষ তার মনস্কামনা নিয়ে ঠাকুরের কাছে পুজো দেয়। আশার আলোয় মুখগুলো উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। মনস্কামনা পূরণ হলে আবার হাসি মুখ নিয়ে পুজো দিতে আসে। মনোমায়া এই হাসিভরা প্রফুল্ল মুখগুলো দেখে ভারি খুশি হয়। সে চায় সকলের মন সারিয়ে দিতে। কিন্তু সত্যি কি দেবতার ঘরে সুখ আছে? শান্তি আছে? যাদের সে স্নেহ, ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে রাখতে চায়, সেই মাধবী, মালতী, সন্ধ্যা, খাওয়া, ধুলিয়া, চাদু, বাদুরা কি সত্যি মনসারানি মনোমায়ার স্নেহের ছোঁয়ায় দুঃখ ভুলে এগিয়ে যেতে পারে?
মন্দিরের প্রধান পুরোহিত চায় নিজের একনায়কত্ব কায়েম করতে। একমাত্র বাধা মনোমায়া। একদিকে উচ্চ কূলশীল, অন্যদিকে নীচ সাঁওতাল রমণী —এক অসম লড়াই। চিরন্তন লড়াই। এই লড়াই থেকে কি অন্য এক উত্তরণের পথ খুঁজে পায় মনোমায়া? যে বিনা পারিশ্রমিকে পুণ্যার্থীদের জুতো আগলায়, তাদের হাতে জল দেয়। যে অনায়াসে কত গভীর কথা, কত সহজে বলতে পারে — ‘পুজো নয়, ওদের যে জুতোর দিকে মন পড়ে থাকবে। তাই ওদের জুতো সামলাই।’ যে নির্দ্ধিধায় ভগবানকে উদ্দেশ্য করে বলতে পারে— ‘যে কিছু দেয় না আমি তার কাছে কিছু চাই না।’ মাটির কাছাকাছি থাকা দরিদ্র এই মানুষগুলোর সংঘবদ্ধতার কাছে মাথা নোয়ায় কি স্বঘোষিত দেবতার বরপুত্ররা? অবশ্যই দেখা দরকার বিল্বদল চট্টোপাধ্যায় নির্দেশিত নাটক ‘মন সারানি’।
সামগ্রিকতার নিরিখে বেশ বলিষ্ঠ দলগত অভিনয়। তবুও কিছু কিছু চরিত্রের অভিনয়ে যান্ত্রিকতা নজর এড়ায় না। মনোমায়া চরিত্রটির আরও একটু বিস্তারের প্রয়োজন ছিল। সারল্য, সহজিয়া ব্যাপারটা সঠিকভাবে ফুটে ওঠে না মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের অভিনয়ে। মনোমায়ার অধিকাংশ সংলাপের মধ্যে রয়েছে যে দার্শনিক গভীরতা, গূঢ় অর্থ তা মীনাক্ষীর স্বরক্ষেপণের বিভ্রাটেই হোক বা উচ্চারণের অস্পষ্টতার কারণেই হোক অথবা অভিনয়ে আবেগের স্বল্পতার জন্যই হোক দর্শক মনে রেখাপাত করতে পারে না। সংলাপের যথার্থতা দর্শক ঠিকঠাক অনুধাবন করতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে উচ্চকিত আবহ সঙ্গীতের কারণে চরিত্রদের সংলাপের শুরুর অংশ পরিষ্কার শোনা যায় না।
তবে বহুদিন বাদে গোটা মঞ্চের এমন সুন্দর ব্যবহার দেখা গেল যা অবশ্যই তারিফযোগ্য। বেশিরভাগ দৃশ্যে একসঙ্গে ৭-১০জন কুশীলবকে মঞ্চে দেখা যায়। এতজন মঞ্চে একত্রিত হয়ে অভিনয় বেশ শক্ত। সেই দিক থেকে নির্দেশকের প্রয়াস সার্থক। অনেকগুলি চরিত্র, প্রত্যেকের নিজ নিজ বেদনা, বক্তব্য রয়েছে। এত বিভিন্নতার মধ্যে মাঝে মাঝেই মূল বক্তব্য গৌণ হয়ে পড়েছে। নাটকটির দৈর্ঘ কমলে আরও টানটান হতে পারত। সেই সুযোগও ছিল।
তাদের ২০তম জন্মদিবসে ‘কালিন্দী নাট্যসৃজন’-এর নবতম নাটক ‘মন সারানি’, ভাবায়, মননে ধাক্কা দেয়। এখানেই নাটকটির সার্থকতা।
অজয় মুখোপাধ্যায় 

14th     March,   2020
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ