গা ছমছম কী হয় কী হয়!
রহস্য নাটকের সার্থক মঞ্চায়ন

নাটক: ইঁদুরকল
প্রযোজনা: শৌভনিক
পরিচালনা: চন্দন দাশ

সময়টা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পশ্চিমবঙ্গ। প্রচণ্ড ঝড়জলের এক রাত। কার্শিয়াংয়ের এক সদ্য চালু হওয়া হোটেল ড্রিমল্যান্ডে একে একে জড়ো হয় রহস্যময় কয়েকজন বোর্ডার। একজন নাকউঁচু মহিলা মিস কাজল দত্ত, যিনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি অফিসার। এক সাংবাদিক গোপাল বোস এবং ওএনজিসি’র কর্মচারী মিস্টার জ্যোতির্ময় ব্যানার্জি। হোটেলটির মালিক শিল্পী চৌধুরী এবং তাঁর স্বামী অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার সুরজিৎ চৌধুরী। ঝড়ের তাণ্ডব যখন সকলের মনে ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে তখনই হঠাৎ সেই হোটেলে এসে হাজির হয় এক আগন্তুক, অমর চ্যাটার্জি। চোখে সারাক্ষণ কালো চশমা পরে থাকা অমর বলে, দার্জিলিং যাওয়ার পথে তার গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে এখানে এসে উঠেছে। এরপর আসে একটি ফোন কল। দার্জিলিং জেলার পুলিস সুপারের ফোন। তিনি বলেন, একটি খুনের মামলার তদন্ত করতে এক পুলিস অফিসারকে পাঠানো হচ্ছে হোটেল ড্রিমল্যান্ডে। তাঁকে যেন সর্বতোভাবে সাহায্য করা হয়। এই বলেই লাইনটা কেটে দেন। এই ফোনের খানিকক্ষণ পর হোটেলে এসে ওঠেন স্পেশাল ব্রাঞ্চের অফিসার অসিত ঘোষ।
অসিত ঘোষ জানান, দার্জিলিংয়ের একটি হোটেলে এক মহিলাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি নোটবুক। তাতে দার্জিলিংয়ের ওই হোটেলের নাম ছাড়াও কার্শিয়াংয়ের হোটেল ড্রিমল্যান্ডের নামও রয়েছে। তাছাড়া নিহত মহিলার শরীরে মিলেছে একটি কাগজ। তাতে লেখা, এক নম্বর, বাকি আরও দুই। যে মহিলাকে খুন করা হয়েছে তিনি সদ্য জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন। তিনটি অনাথ শিশুর সঙ্গে নিষ্ঠুর অত্যাচার করেছিলেন ওই মহিলা ও তাঁর স্বামী। তাঁদের অত্যাচারে ছোট দুটি শিশুর মৃত্যু হয়। সেই অপরাধেই জেল হয়েছিল তাঁদের মহিলার স্বামী জেলে থাকাকালীনই মারা যান। আর মহিলা খুন হলেন জেল থেকে ছাড়া পেয়ে হোটেলে এসে উঠে। অসিত ঘোষের ধারণা, হোটেল ড্রিমল্যান্ডেই রয়েছে বাকি দু’জন যাঁদের ওপর প্রাণঘাতী হামলা চালাতে পারে খুনি। কিন্তু কারা সেই দু’জন? খুনিই বা কে? অসিত ঘোষ হোটেলে আসার পরই সব ফোন বিকল হয়ে যায়। সামনের ব্রিজটিও ভেঙে পড়ে। অর্থাৎ হোটেল ড্রিমল্যান্ড মূল ভুখণ্ড থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। গা ছমছমে গোয়েন্দা গল্পের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়ে যায় মঞ্চে।
নাটকের নাম ‘ইঁদুরকল’। বিশ্বের সেরা গোয়েন্দা কাহিনীকার আগাথা ক্রিস্টির লেখা ‘মাউসট্র্যাপ’ অবলম্বনে এই নাটক লিখেছিলেন অসিত ঘোষ। ৪০০ রজনী অতিক্রম করেও রমরম করে চলছে এই নাটক মুক্ত অঙ্গন রঙ্গালয়ে। অবশ্য এখন আর নিয়মিত শো হয় না এই নাটকের। মূলত শীতকালে এই নাটকের কিছু শো প্রতিবছরই করে থাকে শৌভনিক নাট্যদল। এই বছরও যা করেছিল। সেরকমই একটি দেখার সুযোগ মিলেছিল সম্প্রতি।
পাঠকের অবগতির জন্য জানিয়ে দিই, আগাথা ক্রিস্টির মূল লেখাটি নিয়ে ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে লন্ডনের বিখ্যাত ওয়েস্ট এন্ডের সেন্ট মার্টিনস থিয়েটারে রমরম করে চলছে ‘মাউসট্র্যাপ’ নাটকটি। ১৯৫২ সালে নাটকটির প্রথম শো হয়েছিল। আগাথা ক্রিস্টি সরাসরি নাটক হিসেবেই লিখেছিলেন এটি। তবে সেটি ছিল রেডিও নাটক। নাম ছিল ‘থ্রি ব্লাইন্ড মাইস’। পরে এটি মঞ্চায়িত হয়। প্রযোজকের সঙ্গে আগাথা ক্রিস্টির চুক্তি হয়, যতদিন নাটকটি চলবে ততদিন এটিকে গল্প আকারে প্রকাশ করা চলবে না এবং এর সিনেমা সত্ত্বও বিক্রি করা চলবে না। ফলে মার্কিন মুলুক ছাড়া কোথাও এই কাহিনীর গল্পরূপ মেলে না এবং এখনও পর্যন্ত মূল লেখাটি থেকে কোনওরকম সিনেমা নির্মিত হয়নি। ব্যতিক্রম প্রেমেন্দ্র মিত্র পরিচালিত বাংলা সিনেমা ‘চুপি চুপি আসে’। যেটি সরাসরি এই কাহিনী অবলম্বনেই তৈরি। আমাদের দুর্ভাগ্য যে লন্ডনের ওয়েস্ট এন্ড ডিস্ট্রিক্ট কিংবা আমেরিকার ব্রডওয়ে রমরম করে চললেও কলকাতার ব্যবসায়িক থিয়েটারের কেন্দ্র হাতিবাগান থিয়েটার পাড়া কবেই চাটিবাটি গুটিয়ে ফেলেছে। না হলে, হয়তো এখানেও রেকর্ড সৃষ্টি করে চলতে পারত ‘ইঁদুরকল’-এর মতো নাটক।
যাই হোক ফিরে আসি নাটকের আলোচনায়। ‘ইঁদুরকল’-এর প্রথমদিকের পরিচালক ছিলেন নাটককার অসিত ঘোষ স্বয়ং। সেটা ১৯৮০ সাল। ২০১১ সালে এই নাটকটির পুনর্মঞ্চায়ন হয়। তখন নির্দেশকের দায়িত্ব নেন চন্দন দাশ। মুখ্য ভূমিকাভিনেতাও তিনিই। এই নাটকটি যখন ১৯৮০ সালে প্রথম মঞ্চায়িত হয় তখন এর আলোক পরিকল্পনা গোটা বাংলায় সাড়া ফেলে দিয়েছিল। নাটকের খুনের দৃশ্যগুলিতে খুনির শুধুমাত্র জুতো, গ্লাভস, টুপি আর মাফলার দৃশ্যমান হতো। বাকি সবকিছু হয়ে যেত অদৃশ্য। সেই অলোক পরিকল্পনা করেছিলেন স্বরূপ মুখোপাধ্যায়। নবপর্যায়ে আলোক পরিকল্পনা করেছেন বাবলু সরকার। তবে স্বরূপবাবুর আলোর মায়ায় রচনা করা বিখ্যাত সেই দৃশ্যগুলি এখনও দেখা যায়। অভিনয়ে পুলিস অফিসারের ভূমিকায় চন্দন দাশ তাঁর সংলাপক্ষেপণ, বাচনভঙ্গি, ম্যানারিজম সব দিয়ে একেবারে জমিয়ে দিয়েছেন। সাংবাদিক গোপাল বোসের ভূমিকায় শিবাজী দাশগুপ্তও খুব ভালো। তাঁর বাঙাল ডায়লেক্ট, সামান্য অতি অভিনয়, নিখুঁত টাইমিং দিয়ে হাসির হররা ছুটিয়ে গোয়েন্দা গল্পের দমচাপা উৎকণ্ঠা কাটিয়ে দিয়েছেন। করবী সেনগুপ্তের ভূমিকায় মৈত্রেয়ী মুখোপাধ্যায়, সুরজিৎ চৌধুরীর ভূমিকায় প্রেমাঙ্কুর চক্রবর্তী, অমর চ্যাটার্জির ভূমিকায় অনির্বাণ পারিয়া, জ্যোতির্ময় ব্যানার্জির ভূমিকায় স্বপন চক্রবর্তী সবাই যথাযথ। শিল্পী চৌধুরীর ভূমিকায় সুতপা চক্রবর্তী সামান্য উচ্চকিত অভিনয় করেছেন তবে তা খুব খারাপ লাগেনি। কিন্তু যথেষ্ট হতাশ করেছেন পুলিস অফিসারের চরিত্রে দেবব্রত মজুমদার এবং সহকারী পুলিস অফিসারের চরিত্রে অনুপ খান। তাঁদের অভিনয়ের মান দলের বাকিদের তুলনায় বেশ নীচের দিকেই। তার ফলে নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যটি বেশ জোলো লাগে।
নাটকের শেষটা বলা যাবে না। তবে বলে রাখি, নাটকের শুরুটাই বেশ রহস্যময়, গা ছমছমে। দর্শককে বাধ্য করে দম বন্ধ করে গোটা নাটকটা দেখতে। এর কৃতিত্ব অবশ্যই পরিচালকের প্রাপ্য। মুক্ত অঙ্গন রঙ্গালয়ের মতো ছোট মঞ্চে একটি দোতলা বাড়ির সেট বানানো মুখের কথা নয়। এই মঞ্চ পরিকল্পনা সেই ৮০ সাল থেকে একই আছে। যার পরিকল্পনা করেছিলেন পান্নালাল মৈত্র। বানিয়েছেন অজিত রায়। বাবলু সরকারে আলো প্রায় মাখনের মতো। যেখানে যেমন হলে ভালো হবে সেটাই করেছেন নিখুঁতভাবে। আবহতে প্রচুর স্টক ব্যবহার করা হয়েছে, তবে সেগুলি সুপ্রযুক্ত। আবহভাবনা চন্দন দাশের। শব্দ প্রক্ষেপনের কাজটিও নিখ্মুতভাবে সেরেছেন সৌমেন দত্ত। সব মিলিয়ে ‘ইঁদুরকল’ গোয়েন্দাগল্পের সার্থক মঞ্চায়ন।
স্বস্তিনাথ শাস্ত্রী 
53Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা