বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
রঙ্গভূমি
 

এনএসডি-র আদিরঙ মাতিয়ে দিল দ্বারোন্দা 

ইউক্যালিপটাসের সুউচ্চ গাছগুলোর মাথায় মেঘমুক্ত পশ্চিমাকাশে ধ্রুবতারাটা জ্বলজ্বল করছিল। শেষ লগ্নে এসেও শীত তার দাপট জানান দিচ্ছে তীব্র হিমেল হাওয়ায়। তবু বোলপুরের দ্বারোন্দা গ্রামের মুক্ত প্রান্তরে মানুষের ভিড় কম নয়। চলছে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা (এনএসডি) আয়োজিত ‘আদিরঙ’ অর্থাৎ আদিবাসী রঙ্গোৎসব। তিনটি খোলা মঞ্চে নাচ-গান ও নাটকের আয়োজনে তিনদিন ধরে জমজমাট হয়ে রয়েছে দ্বারোন্দা। সঙ্গে রয়েছে আদিবাসীদের হস্তশিল্পের নমুনার প্রদর্শনী ও বিক্রির ব্যবস্থা। মূল অনুষ্ঠানস্থলের বাইরেও দোকানপাটের কমতি নেই। জিলিপি, তেলেভাজা, ঘুগনি, চা থেকে শুরু করে বেলমাখা, পেয়ারামাখা পর্যন্ত। সেখানেও প্রচুর ভিড়। গত ২৩-২৫ জানুয়ারি এই পরিবেশেই হই হই করে হয়ে গেল আদিরঙ্গ উৎসব।
সভ্যতার আদিযুগে মানুষ ভাব প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছিল নাচ ও ছবিআঁকা। সেই নাচ থেকেই ক্রমে অভিনয়ের উৎপত্তি। অর্থাৎ অভিনয়ের আদিরূপ হল নাচ। ফলে আদিবাসী ও লোকশিল্পে নাচের প্রাধান্যই ছিল বেশি। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ১৫টি অন্য রাজ্য থেকে এসেছিল লোকশিল্পী ও আদিবাসী শিল্পীদল। তাদের রংবেরঙের পোশাক, উচ্ছল নাচ, রিদম বেসড নাচ তিনদিন ধরে মাতিয়ে রেখেছিল দ্বারোন্দাকে।
গুজরাতের জুনাগড়ের মহারাজা সুদূর আফ্রিকা থেকে অনেক ক্রীতদাস নিয়ে এসেছিলেন। পরবর্তীকালে সেইসব ক্রীতদাসের বংশধররা ছড়িয়ে পড়ে গোটা গুজরাত জুড়ে। গুজরাতের নানা স্থানে এখনও সেই সব আফ্রিকান মানুষরা বসবাস করে। পুরনো দেশের নাচ, গান, উৎসব এখনও তারা পালন করেন এখানে। সেই আদিবাসীরাই নিয়ে এসেছিলেন তাদের আফ্রিকান নৃত্যানুষ্ঠান ‘সিদ্ধি ধামাল’। বিভিন্ন প্রাণীদের হাঁটাচলা, ডাক নকল করে নাচ এবং শেষে মাথা দিয়ে নারকেল ফাটিয়ে উপজাতি দেবতাকে পুজো দেওয়ার সেই নাচ প্রবল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল আদিরঙ্গ মহোৎসবে।
এসেছিল কাশ্মীরের মানুষরা ‘রউফ’ লোকশিল্প নিয়ে। ‘ভুম্বরো ভুম্বরো শাম রঙ্গ ভুম্বরো’— মিশন কাশ্মীর সিনেমার এই গানটির সঙ্গে আমরা বহুল পরিচিত। কিন্তু ক’জন জানে যে কাশ্মীরি লোকনৃত্য ‘রউফ’-এর সঙ্গে গাওয়া হয় এটি। তবে মূল গানটির কথার সঙ্গে সিনেমার গানের কথার আকাশপাতাল ফারাক। উপত্যকার সুন্দরীরা সেই গানের সঙ্গেই হাত ঘুরিয়ে যা নাচলেন তাতে ‘রউফ’ সঙ্গে সঙ্গে মন কাড়ল উপস্থিত দর্শকের।
এরকমভাবেই হরিয়ানার ‘বিনযোগী’, মধ্যপ্রদেশের ‘গুদুমবাজা’, রাজস্থানের ‘চক্রী’, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের ‘ছৌ’, অসমের ‘বিহু’, উত্তর-পূর্ব ভারতের ‘সাতবোন’-এর বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের নৃত্যশৈলী, আমাদের রাজ্যের সাঁওতালি নৃত্য তিনদিন ধরে মজিয়ে রেখেছিল দর্শককে।
দ্বিতীয় দিন ছিল সাঁওতালি ভাষার নাটক ‘ফুরগাল দিশম ঋণ বীর কা’। ঝাড়খণ্ডের মাইদি’জ আর্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশন প্রযোজিত নাটকটির পরিচালনা করেন জিৎ রাই হাঁসদা। নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র তিলকা মাঝি। সে ভাগলপুরের এক শিল্পী এবং দার্শনিক। ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতার সংগ্রামে আদিবাসী সমাজকে নেতৃত্ব দিয়েছিল। আগাগোড়া সাঁওতালি লোকনৃত্য ও গানে ভরা এই নাটকটি যথেষ্ট সমাদৃত হয় দর্শকমহলে।
শেষদিন এক অসাধারণ দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে রইল দ্বারোন্দা। সবকটি রাজ্যের লোকশিল্পীরা পরপর প্রদর্শন করলেন তাঁদের শিল্পশৈলী এবং শেষে একযোগে প্রতিটি রাজ্যের বাদ্যযন্ত্র সহযোগে পরিবেশিত হল অখণ্ড ভারতের এক মহান রূপ। গোটাটাই রবীন্দ্রভারতীর শিক্ষক তরুণ প্রধানের মস্তিষ্কপ্রসূত। কোরিওগ্রাফার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন তিনিই। তাঁকে উপযুক্ত সহযোগিতা করেছিলেন প্রবুদ্ধ পাণ্ডে। তারপ হল ক্যাম্প ফায়ার। ধ্রুবতারার নীচে আগুনকে সাক্ষী রেখে প্রতিটি শিল্পী ফিরেআসার কথা বললেন এই দ্বারোন্দায়।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে হাজির ছিলেন এনএসডি-র ডিরেকটর সুরেশ শর্মা। প্রধান অতিথির আসন অলঙ্কৃত করেছিলেন বিখ্যাত সাঁওতালি বুদ্ধিজীবী বরকা সোরেন। তিনিই প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। অনুষ্ঠানের শেষদিন হাজির ছিলেন এনএসডি-র রেজিস্ট্রার প্রদীপ মোহান্তি।
স্বস্তিনাথ শাস্ত্রী 

22nd     February,   2020
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ