কখনও হাড় হিম করা ভিলেন, তো কখনও দর্শকদের হাসাচ্ছেন। সিভিতে ‘স্ত্রী’, ‘বালা’র মতো ছবির পাশাপাশি ‘মির্জাপুর’, ‘পাতাললোক’-এর মতো ওয়েবসিরিজ। খড়্গপুরের ছেলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এখন বলিউডের পরিচিত মুখ। মুম্বই থেকে বর্তমানের সঙ্গে আড্ডা দিলেন তিনি। ফোনের এপারে অভিনন্দন দত্ত।
লকডাউনের মধ্যেই ‘পাতাললোক’ ওয়েব সিরিজের ‘হাতোড়া ত্যাগী’ চরিত্রটা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন আমূল বদলে দিয়েছে। ‘আমি জানি লকডাউনে অনেকেরই অসুবিধা হয়েছে। কিন্তু আমার তো জীবনই বদলে গেল। চারদিকে অর্থকষ্ট, দুশ্চিন্তা, টেনশন— সব মিলিয়ে প্রথম দু’মাস কী করব বুঝতে পারছিলাম না। তারপর ৫ মে আমার জন্মদিনের দিনই সিরিজটার ট্রেলার মুক্তি পেল। ব্যস, চারদিক থেকে প্রশংসা আর শুভেচ্ছাবার্তায় যেন মনোবল ফিরে পেলাম,’ বলছিলেন তিনি। যার ফলে এখন জীবনের ছোটখাট সমস্যাগুলো নিয়ে আর ভাবতে হয় না অভিষেককে। পরিবর্তে সেই সময়টা তিনি পুরোপুরি কাজে মনোনিবেশ করতে চাইছেন।
এর মধ্যেই শ্যুটিং শুরু করেছেন অভিষেক। বিজ্ঞাপন আর শর্ট ফিল্ম ছাড়াও তাঁকে কমেডি ওয়েব সিরিজ ‘পরি-ওয়ার’ এ দেখা যাবে। আর নেগেটিভ ও মজার চরিত্র ছেড়ে এই প্রথম অভিষেক এখানে রোমান্টিক অবতারে। বলছিলেন, ‘মুন্না চরিত্রটাকে নিয়ে সত্যি একটু নার্ভাস। আমি রোমান্স করছি, এটা দর্শক কীভাবে নেবেন সেটা দেখার অপেক্ষায় রয়েছি।’ খলনায়ক, কমেডির পর এবারে তালিকায় রোমান্সও যোগ হল। বিভিন্ন চরিত্রে নিজেকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে তুলে ধরার নেপথ্য রহস্যটা কী? ‘কিছুই নয়। আমার কাছে প্রতিটা চরিত্রই রান্নার এক একটা পদের মতো। নিজেকে সবসময় বলি, সবকটা পদ চেখে দেখতে হবে। সবসময় যে ভালো চরিত্র পাব তা নয়, কিন্তু অভিনয়কে উপভোগ করতে হবে,’ সহজভাবেই বললেন ‘বালা’ ছবির অজয়।
বলিউডে কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন অভিষেক। আজকের দিনটা দেখার জন্য অনেকটা পথ অতিক্রম করতে হয়েছে তাঁকে। কিছুটা সচেতনভাবেই ‘স্বজনপোষণ’ বিতর্ক এড়িয়ে বললেন, ‘কনফিডেন্স এবং অভিনয় ক্ষমতা—দুটোই থাকতে হবে। কারণ আজকে বুদ্ধিমান দর্শক একজন অভিনেতাকে ভুল করার সুযোগ খুবই কম দেন।’ তাই অল্প বয়স থেকেই প্রশিক্ষণের উপরে জোর দিতে বলছেন অভিষেক। মুম্বইয়ে ভাগ্যান্বেষণে আসা তরুণ তুর্কীদের প্রতি অভিষেকের জোরাল টিপস, ‘দয়া করে বাবা-মায়ের থেকে টাকা চেও না! বাড়ির টাকায় স্ট্রাগল করতে যাওয়াটা বোকামো। অভিনয় ছাড়াও ইন্ডাস্ট্রির আরও প্রচুর শাখা রয়েছে। সেখানে কাজ করতে করতে শেখো, তারপর স্বপ্নকে ধাওয়া কর।’
নভেম্বরে ‘কালী’ ওয়েব সিরিজের নতুন সিজনের শ্যুটিংয়ে কলকাতায় আসবেন অভিষেক। হাতে রয়েছে আকাশ খুরানার একটা ছবিও। তবে তাঁর প্রথম বাংলা ছবি ‘আবার বছর কুড়ি পরে’র শ্যুটিং কবে থেকে শুরু হবে তা এখনও জানেন না এই তরুণ অভিনেতা। কাজের মাঝে সময় পেলে নিয়ম করে খড়্গপুরে আসেন তিনি। পাড়ায় ঢুকলে তাঁকে নিয়ে প্রতিবেশীদের হইচই লেগেই থাকে। ‘ওঁদের সামনে আমি খুবই লজ্জায় পড়ে যাই। কিন্তু কাছের মানুষগুলোর থেকে ভালোবাসা পেতে কার না ভালো লাগে। ওঁদের সঙ্গে তো আমার দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক নয়। তা সত্ত্বেও ওঁদের চোখে আমাকে নিয়ে ওই গর্ববোধ করার মুহূর্তগুলো খুব উপভোগ করি।’ কলকাতার দুর্গাপুজো এখনও পুরোপুরি উপভোগ করার সুযোগ অভিষেক পাননি। ‘গত বছর ষষ্ঠীর দিন এয়ারপোর্টে যাওয়ার সময় ভিড় দেখে মনে হল ভিআইপি পাস না হলে আমার হয়তো কোনওদিন পুজো দেখা হবে না।’ তাহলে তো আরও বেশি করে বাংলায় কাজ করতে হবে। প্রশ্ন শুনে হাসতে হাসতে অভিনেতার উত্তর,‘কাজ তো করতেই চাই। তবে চিত্রনাট্য ভালো হতে হবে। সৃজিত মুখোপাধ্যায় ও কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। আমি বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ছবির গুণমুগ্ধ ভক্ত।’ তাই বাংলা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে অভিষেকের সম্পর্ক গাঢ় হওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।