প্রাচীন কলাকেন্দ্র নিবেদিত দু’দিন ব্যাপী সুনীল ও নিবেদিতা কোশার সঙ্গীত মহোৎসব হয়ে গেল অবন মহল প্রেক্ষাগৃহে। প্রথম দিন কলাকেন্দ্রের প্রবীণ পাঁচজন সঙ্গীতগুরুকে সংস্থার তরফে সম্মাননা প্রদান করা হয়। মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় কিশোর প্রতিভা রাজদীপ দেবের তবলা লহরা বাদনের মাধ্যমে। শিল্পী তিনতালে অনায়াস দক্ষতায় সুনিপুণভাবে তাঁর তালিমের স্বাক্ষর রাখেন। সারেঙ্গিতে শিল্পীকে সহযোগিতা করেন বিজয় মিশ্র। নবীন শিল্পী সরজিৎ গোপাল গুহ বাঁশিতে ইমন রাগে বিলম্বিত একতাল ও পরে দ্রুত তিনতালে চমৎকার দুটি গৎ বাজিয়ে শোনান। স্বল্প পরিসরে শিল্পীকে যথাযথ ও প্রাণবন্ত তবলা সঙ্গত করেন বিশিষ্ট তবলিয়া কিংশুক মুখোপাধ্যায়। প্রথম দিনের অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি হয় পারমিতা মিত্রের পরিচালনায় নৃত্যাঙ্গন সংস্থার সমবেত নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে। মোট সাতটি ভিন্ন কম্পোজিশনের ওপর আধারিত এই নৃত্যানুষ্ঠানে সংস্থার ছাত্র-ছাত্রীরা মুন্সিয়ানার পরিচয় রাখেন। দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানের সূচনায় তিনতালে যৌথ তবলা লহরা পরিবেশন করেন ফারুক্কাবাদ ঘরানার দুই প্রথিতযশা শিল্পী অরূপ চট্টোপাধ্যায় এবং পরিমল চক্রবর্তী। পেশকার, রেলা, পণ্ডিত শঙ্কর ঘোষ, সঙ্গীতাচার্য জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, হাবিবুদ্দিন খাঁ সাহেবের আরজাদা ঘরানা প্রভৃতি নানা রঙের কম্পোজিশন বাজিয়ে শ্রোতাদের মাতিয়ে দেন। শিল্পীদ্বয়কে হারমোনিয়ামে বিশ্বস্ত সঙ্গত করেন হিরণ্ময় মিত্র। এরপর ‘ঘুঙরু কালচারাল ফোরাম’ এবং ‘মধুশ্রী’র যৌথ নিবেদনে কিছু সৃজনশীল নৃত্য এবং নারীশক্তির একাল ও সেকাল শীর্ষক এক নৃত্যালেখ্য উপস্থাপিত হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন চন্দ্রা মুখোপাধ্যায় ও মালঞ্চ দে।
সম্মেলনের শেষ পর্বে অর্কদেব ভট্টাচার্য ও মৃত্তিকা ভট্টাচার্যের পরিবেশনায় ‘নীহারিকা সেন্টার ফর পারফর্মিং আর্টস’-এর ২৪ জন নৃত্যশিল্পী ভরতনাট্যম ও ওড়িশি নৃত্যের সমন্বয়ে দুটি এবং ক্রমান্বয়ে আরও পাঁচটি নৃত্যরূপ মঞ্চস্থ করেন। বন্দেমাতরম সঙ্গীতে ভরতনাট্যম ও ওড়িশি একসঙ্গে পরিবেশিত হয়। এরপর ছোট ছোট শিল্পীরা ভরতনাট্যমে পুষ্পাঞ্জলি, ওড়িশিতে বক্রতুণ্ড মহাকায় গণেশ বন্দনা, ভরতনাট্যমে কপালিনী কীর্তনম, বসন্ত রাগে ওড়িশি পল্লবী, শিবায়নম শ্লোক এবং সবশেষে আবার ওড়িশি ও ভরতনাট্যমের মেলবন্ধনে রামচন্দ্র কৃপালু ভজনম নৃত্য পরিবেশন করেন।
—অমিত চক্রবর্তী
ছবি : প্রতিবেদক