সোহম কর: বেশ অনেকগুলো ঘটনা বা সমস্যাকে এক জায়গায় করেছেন পরিচালক অলঙ্কৃতা শ্রীবাস্তব। ছবিটা দেখতে দেখতে তাই মনে হচ্ছিল, প্রতিটা সমস্যা নিয়ে তিনি আলাদা করে ছবি তৈরি করলেই পারতেন। এক ছবিতেই সবকিছু গুঁজে দেওয়ার কি খুব প্রয়োজন ছিল? আসলে অলঙ্কৃতার আগের ছবি ‘লিপস্টিক আন্ডার মাই বুরখা’ দেখে তাঁকে নিয়ে আলাদা প্রত্যাশা তৈরি হওয়ারই কথা। সেই প্রত্যাশা পূরণ না হলে হতাশা স্বাভাবিক। এই ছবিতে দুই তুতো বোনের গল্প বলেছেন তিনি। কিটি (ভূমি পেডনেকর) বিহারের ছোট শহর থেকে চাকরির জন্য নয়ডাতে দিদি ডলির (কঙ্কনা শেনশর্মা) বাড়িতে থাকতে আসে। ডলির যৌনজীবন সুখের নয়। তার স্বামী (আমির বসির) আবার পছন্দ কিটিকে। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে কিটি বাধ্য হয়ে অন্যত্র পেয়িং গেস্ট থাকতে শুরু করে। সেই সঙ্গে বেশি টাকা রোজগার করার জন্য একটি কল সেন্টারে যোগ দেয়। সেখানে ফোনে ছেলেদের সঙ্গে ভালোবাসার অভিনয় করাটাই তার কাজ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফোন কলগুলোয় শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। একদিন ডলির স্বামী সেই কল সেন্টারে ফোন করে বসে। অন্যদিকে ডলিও এক ডেলিভারি বয়ের (অমল পরাশর) প্রেমে পড়ে যায়। কিটিও কল সেন্টারে ফোনে কথা বলতে বলতে প্রদীপের (বিক্রান্ত ম্যাসি) প্রেমে পড়ে। আবার ডলির ছোট ছেলে নিজেকে মেয়ে হিসেবে কল্পনা করে আর সারাদিন পুতুল নিয়ে খেলে, সাজগোজ করে। এসবের মাঝখানে ছবিতে রয়েছে উত্তরপ্রদেশের অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াডের অত্যাচার। সারা ছবি জুড়েই দুই বোন ডলি এবং কিটি একটু সুখী হওয়ার জন্য দিশেহারার মতো ছুটে বেরাচ্ছে। কিন্তু জীবনের কাছ থেকে কিছুতেই তারা ‘ফাইভ স্টার’ পাচ্ছে না।
ছবির বেশ কিছু জায়গা মনে দাগ কাটার মতো। পুতুল নিয়ে খেলার মধ্যে দিয়ে একটা ছোট বাচ্চার আশ্চর্য ক্রাইসিস দেখানো হয়েছে। বাড়িতে নতুন এসি লাগিয়ে কঙ্কনার চোখে-মুখে মধ্যবিত্ত সুলভ তৃপ্তির হাসি দর্শককে নির্মল আনন্দ দেয়। সমাজে প্রচলিত নানা ধরনের সংস্কারের মূলে আঘাত করতে চেয়েছেন পরিচালক। লিঙ্গ বৈষম্য, মহিলাদের সমান অধিকারের মতো বিষয় নিয়ে তৈরি ছবিটি দেখতে মন্দ লাগে না। তবে অসংখ্য ঘটনার ঘনঘটায় বারবার খেই হারিয়েছে। নারীদের হাতে ক্ষমতা দেখানোর জন্য বলিউডের অনেক পরিচালক মহিলাদের হাতে পিস্তল এবং উর্দি চাপিয়ে দিয়েই নিশ্চিন্ত থাকেন। সেই দিক থেকে ছাপোষা মধ্যবিত্ত বাড়ির দুই বয়সের দুই মহিলার গল্প অন্যরকম। কঙ্কনা, ভূমি, অমল, বিক্রান্ত, আমির এবং ছোট্ট চরিত্রে কুবরা সইট প্রত্যেকেই ভালো অভিনয় করেছেন। তবে পরিচালকের কাছ থেকে নিঃসন্দেহে আরও ভালো কিছু প্রত্যাশা ছিল।