সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
স্বাভাবিক ওজন কত?
প্রত্যেক বাবা-মা শিশুর ওজন নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন। কারও হয়তো একটু কম ওজন হল, কারও বা আবার একটু বেশি ওজন হল। কিন্তু মজার ব্যাপার কী জানেন, বেশি ওজন হলে বাবা-মায়েদের খুব একটা চিন্তা করতে দেখি না। ডাক্তারবাবু, আমার বাচ্চার ওজন বেশি হয়ে গিয়েছে, এই কথাটা শোনা খুবই অস্বাভাবিক। প্রায় সকলেরই ধারণা ওজন বেশি মানেই ভালো। বাচ্চা যদি স্বাভাবিক থাকে, তার যদি কোনও রোগ না থাকে, গ্রোথ কার্ভ যদি স্বাভাবিক থাকে অর্থাৎ সে যদি নিজের মতো বেড়ে ওঠে তাহলে কোনও চিন্তা নেই। উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। একজন সাধারণ চাকুরিজীবী একরকমভাবে জীবিকা নির্বাহ করেন। বড় ব্যবসায়ীদের জীবনধারণ অন্যরকম। যদি সবাই মনে করে আমার কেন ওরকম লাইফস্টাইল হচ্ছে না, তাহলে মুশকিল! কে কোন রাস্তায় বেড়ে উঠছে, সেটাই গ্রোথের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
ওজনের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। সে বেড়ে ওঠার লাইন অনুসরণ করছে কি না, এটা মা-বাবারা বুঝতে চান না। তখন গ্রোথ চার্ট করে বোঝাতে হয় যে আপনার বাচ্চা ঠিকঠাকই বাড়ছে। হঠাৎ করে সেটা যদি বেশি হয়ে যায়, তাহলে আপনার বাচ্চার পক্ষে ক্ষতিকারকই হবে। ধরুন, আপনার একটা ছোট গাড়ি। তাতে যদি বেশি লোড চাপিয়ে দেন, সমস্যা বাড়বে, কমবে না। দেখা গিয়েছে, যে সব বাচ্চা জন্মের সময় কম ওজন নিয়ে জন্মেছে এবং তারা পরবর্তীকালে যদি বেশি ওজন গেইন করে, ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ সবই হতে পারে। কারণ ওদের জেনেটিক মেকআপ কখনও বেশি ওজন সাপোর্ট করে না। সেইজন্য মোটা করতে হবে বলে ঠেসে অতিরিক্ত খাবার খাওয়াবেন না।
ওজন কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
একটা জিনিস বলুন তো। আমরা যখন আইনজীবীর কাছে যাই বা ডাক্তারের কাছে যাই বা ট্যাক্স কনাসালট্যান্টের কাছে যাই, কখনও তাঁর ওজন কত জিজ্ঞাসা করি কি? চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগেও নিশ্চয়ই খোঁজ নেন না যে ডাক্তারবাবুর ওজন কত? আপনি দেখে নেন ডাক্তারবাবুর ডিগ্রি কী আছে। কারণ ডিগ্রির সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার সম্পর্ক রয়েছে। সেটাই আসল। অর্থাৎ ওজনের থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মস্তিষ্কের বিকাশ হওয়া। এগুলো বাবা-মায়েরা প্রথমে বুঝতে চান না। চিকিৎসকেরই দায়িত্ব তাঁদের বোঝানো। ওজন বেশি হলে অনেকসময় বাচ্চা মানসিক অবসাদেও ভুগতে পারে। বয়ঃসন্ধির সময় কোনও মেয়ের ওজন বেশি হলে সে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হতে পারে। মনে হতে পারে সব ড্রেসে তাকে দেখতে ভালো লাগছে না। ছেলেদেরও এই সমস্যা হতে পারে। এই ওজন বেড়ে যাওয়ার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাবা-মায়েরা দায়ী। জোর করে খাইয়ে ওজন বাড়িয়ে দিয়েছে, তারপর কমাতে পারছে না।
জন্মের সময়ে স্বাভাবিক ওজন
এটার একটা চার্ট আছে। তবে গড়ে বাঙালি বাচ্চার ওজন ২.৯ থেকে ৩ কেজি হয়। কারও ওজন ৩.৪ কেজিও হতে পারে। ২.৫ কেজি আমরা কাট অব পয়েন্ট ধরি লো বার্থ ওয়েটের ক্ষেত্রে। তার নীচে হলে আমরা বলি লো বার্থ ওয়েট। এটা ছেলে, মেয়ে উভয়ক্ষেত্রেই।
ওজনের সঙ্গে উচ্চতার সম্পর্ক
ওজনের পাশাপাশি উচ্চতা নিয়েও মা-বাবারা উদ্বিগ্ন থাকেন। ওজন তো খাবার বেশি খাইয়ে বাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু উচ্চতা তো বাড়াতে পারবেন না। ওজন আর উচ্চতায় সবসময় সামঞ্জস্য থাকা উচিত। এই সামঞ্জস্য গুরুত্বপূর্ণ বলেই শাহরুখ, সলমন বা আমির খান এঁদের সকলের উচ্চতাই কম। কিন্তু প্রোপরশনেট বলে নায়ক হতে অসুবিধা হয়নি। জয়া ভাদুড়ী, রাখী, রানি মুখার্জিরাও উচ্চতা কম হওয়া সত্ত্বেও প্রপোরশনেট বলেই নায়িকা হতে পেরেছেন।
শেষ কথা
বাচ্চার মূল্যায়ন করার সময় আমরা কিছু বিশেষ দিক মাথায় রাখি। তার ল্যাঙ্গুয়েজ ডেভেলপমেন্ট কেমন হচ্ছে, সে ঠিক করে কথাবার্তা বলছে কি না, গ্রস মটর ডেভেলপমেন্ট কেমন অর্থাৎ হাত-পা চালনা সঠিক হচ্ছে কি না, ফাইন মটর ডেভেলপমেন্ট অর্থাৎ হাতের লেখা, আঁকা কেমন? সোশিয়ালাইজেশন কেমন করছে? হয়তো লম্বা, চওড়া কিন্তু মিশতে পারে না। এমনও চিকিৎসকও দেখেছি, খুবই ভালো। কিন্তু ব্যবহার খারাপ। সাফল্যও পায়নি। গ্রোথের সঙ্গে ডেভেলপমেন্টও সমান জরুরি। গ্রোথ হল ওজন ও উচ্চতা। ডেভেলপমেন্ট ব্যবহার, ইন্টালিজেন্স। দুইয়ের সামঞ্জস্যেই জীবন সুন্দর।