সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
আখের রস—রাস্তাঘাটে আপনার হামেশাই চোখে পড়বে আখ মাড়াইয়ের কল। খেয়ে সবাই পরিতৃপ্তির ঢেকুর তুলছে। তাছাড়া অনেকের ধারণা আখের রসে জন্ডিস কমে, শরীর ঠান্ডা হয়, রোগ জীবাণু দেহে ঢুকতে বাধা পায়। কাজেই গরম পরলে আখের রস খাওয়া ভালো। আখের রসে কিছু পুষ্টি অবশ্যই থাকে। তবে এনার্জি পাওয়া যায় মাত্র ৩৯ কিলো ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট থাকে মাত্র ৯.১ গ্রাম। সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে জন্ডিসের আদর্শ পথ্য কখনওই আখের রস নয়। তবে খাওয়া যেতেই পারে, কিন্তু রাস্তার আখের রস নয়। বাজার থেকে আখ কিনে এনে টুকরো টুকরো করে কেটে খোসা ছাড়িয়ে তারপর খাবেন। রাস্তায় বিক্রি হওয়া আখের রস বিপদ ডেকে আনতে ছাড়া কিছু নয়। আন্ত্রিক, জন্ডিস-সহ নানা রোগ এর থেকে শরীরে ঢুকে বাসা বাঁধতে পারে।
ডাবের জল—গরমে অনেকেই ৪০-৫০ টাকা দামের ডাব খান। নিঃসন্দেহে ডাবের জল প্রকৃতির বিশুদ্ধতম জল। এতে কোনও দূষণ থাকে না। কিন্তু ডাবের জল কখনওই আদর্শ পানীয় নয়। নানা খনিজ লবণ এতে সুষম পরিমাণে থাকে না। সব ভিটামিনও থাকে না। উপরন্তু পটাশিয়াম বেশি থাকায় হৃদরোগীদের পক্ষে নিরাপদ নয়। পেট খারাপের পথ্য হিসাবে অনেকে ডাবের জলকে নির্বাচন করেন। এর চেয়ে চিনি-নুন-লেবুর শরবত বা ওরাল রিহাইড্রেশন ফ্লুইড পেট খারাপে অনেক উপকারি। পকেটে রেস্ত থাকলে ডাবের জল নিশ্চয়ই খেতে পারেন। কিন্তু ডাবের জল খেয়ে শরীর ঠান্ডা হবে। পেট ঠান্ডা হবে—এইসব আজগুবি ধারণাকে প্রশ্রয় দেবেন না।
বেলের পানা, আমের শরবত, দইয়ের ঘোল—বেলের পানা, আমের শরবত, দইয়ের ঘোল বা লস্যি যে গরমকালে শুধু ক্লান্তি দূর করে, তা-ই নয়, পুষ্টিরও যোগান দেয়। এদের পুষ্টিমূল্য অপরিসীম। শুধু অনুরোধ, রাস্তাঘাটে এগুলো খাবেন না। যে জল দিয়ে এগুলো তৈরি হয়, তা কখনওই ভালো নয়। আান্ত্রিক হতে পারে যে কোনও মুহূর্তে। বাড়িতে ফুটিয়ে ঠান্ডা করা জল মাটির কুজোতে রেখে আরও ঠান্ডা করে নিয়ে এই শরবত তৈরি করে খান, অপরকেও খাওয়ান।
কোল্ড ড্রিংকস—গরমে আমাদের কোল্ড ড্রিংকস ছাড়া চলে না। পকেট গরম থাকলেই ঢক ঢক করে গলায় ঢালি। এতে ৯৫ শতাংশই থাকে জল, ৪ ভাগ থাকে চিনি বা অন্য কোনও মিষ্টি। থাকে সাইট্রিক অ্যাসিড, ফসফরিক অ্যাসিড, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, সোডিয়াম বা পটাশিয়াম ক্লোরাইড। এছাড়া সুগন্ধি এবং রং। টাটকা ফলের রস কখনওই থাকে না, থাকলে পচন দেখা দিত। অবশ্য চিনির দ্রবণের পচন রোধ করতে এতে পচনরোধক প্যারাবেন জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে স্টেরিলাইজড করে তাতে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস মিশিয়ে মেশিনে সিল করা হয়। স্বাদ এবং রঙে আকর্ষণীয় করতে অনেক কোম্পানি কোল্ড ড্রিংকস-এ ফ্লোরিন এবং ব্রোমিন যুক্ত নানা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করছে। এগুলো কিন্তু শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। অল্প খেলে দোষের কিছু নেই। মনে হয় ক্লান্তি দূর হয়ে বেশ একটা তরতাজা ভাব লাগছে। বেশি খেলেই বিপত্তি। অতিরিক্ত সোডিয়াম ও পটাশিয়াম এবং অ্যাসিড শরীরের ক্ষতি করে, বিশেষ করে হৃদরোগী ও গ্যাস্ট্রিকের রোগীদের। রং ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ লিভার এবং কিডনির ক্ষতি করে। কোলেস্টেরল এবং সুগার বাড়তে পারে। প্রেশার বাড়তে পারে। ঘা দেখা দিতে পারে পাকস্থলীতে।
আরেকটা কথা। বিজ্ঞাপনে যেমন দেখায়, ঠিক তেমনিভাবে কোল্ড ড্রিংকস কখনই ঢক ঢক করে সরাসরি গলায় ঢালবেন না। কারণ অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড পাকস্থলীতে হঠাৎ করে গ্যাসের চাপ বাড়িয়ে হার্টের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বয়স্কদের হার্টের অসুখ থাকলে অঘটন ঘটা অসম্ভব নয়। আইসক্রিম—গরমে আরেকটি লোভনীয় খাবার হল আইসক্রিম। কী থাকে আইসক্রিমে? দুগ্ধজাত নানা পদার্থ, কর্ন সিরাপ, সুগন্ধি, জল, বাতাস, কখনও কোকো। শতকরা হিসেবে থাকে ১৫ শতাংশ চিনি, ১২ শতাংশ ফ্যাট, ১১ শতাংশ ফ্যাট নয় এমন দুগ্ধজাত পদার্থ, ভিটামিন এ ও অন্যান্য কয়েকটি উপাদান। শক্তির দিক থেকে এক কাপ আইসক্রিমে থাকে প্রায় ২০০ কিলো ক্যালোরি, প্রোটিন পাওয়া যায় ৪ গ্রাম। এ ছাড়া ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লোহা ইত্যাদি খনিজ লবণ। সস্তার আইসক্রিমের জলে থাকে ই-কোলাইয়ের মত মারাত্মক আন্ত্রিকের জীবাণু। শতকরা ৩৭ ভাগ আইসক্রিমের এই অবস্থা! তাছাড়া আইসক্রিমে যেসব রং মেশানো হয়, যেমন ডায়মন্ড গ্রিন, কঙ্গো রেড, রোডামিন বি, অরেঞ্জ টু, কেশরি রং—সবই কিন্তু বিষাক্ত রং। এগুলো থেকে শরীরের অপূরণীয় ক্ষতি হয়, বিশেষত শিশুদের। কাজেই সস্তার আইসক্রিম কখনওই দেবেন না শিশুদের।