‘একই ঘরে গাদাগাদি করে থাকতেন অনেকে। চলত একসঙ্গে রান্না, খাওয়া-দাওয়া, ধোয়াধুয়ি। একই বাথরুম ব্যবহার করতেন তাঁরা। ঘুমাতেন একই ছাদের নীচে। সেখানে একবার কলেরা ঢুকলে তা ছড়িয়ে পড়ত দ্রুত। একটি বাড়িতে একসঙ্গে বেশ কয়েকটি পরিবার থাকত বলেই মহামারীর আকার নেয় রোগটি’— লিখেছেন ব্রিটিশ ডাক্তার জন স্নো। এই চিকিৎসকই প্রথম বুঝতে পারেন কলেরার জীবাণু জলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে লন্ডন তখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। ব্যবসার টানে লন্ডনের বাড়ছে জনসংখ্যা। সেই সঙ্গে উত্তোরত্তর বাড়ছে এক রোগ। কলেরা। ইংল্যান্ডে ১৮৩০ থেকে ১৮৫০-এর দশকে ভয়াবহ আকার নেয় এই রোগ। পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বের নানাপ্রান্তে। মনে করা হয় কলেরা থেকে বাঁচতে স্যালাইনের ব্যবহার শুরু হয়। কলেরা সঙ্গে কীভাবে লড়াই করা যায়, তখন সেই পথই খুঁজে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। জানা যায়, সে সময় ৭৬ রকম পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিল কলেরা মোকাবিলায়। কোনওটি কাজে লেগেছে, কোনওটির ফলে আবার আরও সমস্যায় পড়েছেন রোগীরা। এই পদ্ধতিগুলির মধ্যে একটি ছিল স্যালাইন। এডিনবার্গ মেডিক্যাল স্কুল থেকে স্নাতক পাশ করার পর উইলিয়াম ব্রুক ও’শগনেসি নামক এক চিকিৎসক মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’- এ একটি প্রবন্ধ লেখেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ডিহাইড্রেশনের কারণে কলেরার প্রভাবে মৃত্যুর হার অনেক বাড়ছে। শিরার মাধ্যমে স্যালাইন দেওয়ার প্রক্রিয়ার কথা জানান তিনি। একদিনে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হননি চিকিৎসক। প্রথমদিকে কুকুরদের উপর তিনি পরীক্ষা চালাতেন। ফল হতো বিপরীত। অনেক কুকুর মারা যেত। চলতে থাকল পরীক্ষা। সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাশিয়াম, ফসফরাস— একের পর এক উপাদান নিয়ে নিরন্তর পরীক্ষা করেছিলেন তিনি। ফলস্বরূপ তাঁর প্রতিবেদন চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক দিগন্ত খুলে দেয়। পরবর্তীতে চিকিৎসক টমাস লাট্টা কলেরা আক্রান্তদের চিকিৎসায় স্যালাইনের ব্যবহার শুরু করেন। শোনা যায়, প্রথমদিকে নাকি মানুষ স্যালাইন নিতে ভয় পেতেন। স্যালাইনের প্রভাবে মৃত্যুর উদাহরণও রয়েছে। ১৮৮০- এর দশকে চিকিৎসক সিডনি রিঙ্গার স্যালাইনের দ্রবণ আরও উন্নত করেন।  বর্তমানে আমরা সাধারণ স্যালাইন বলতে যা বুঝি, ১৮৮২-’৮৩ সালে ডাচ ফিজিওলজিস্ট হার্টগ জ্যাকব প্রথম তার সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিলেন মানুষের। ধীরে ধীরে আরও উন্নত হয়েছে স্যালাইন ব্যবস্থা। হয়ে উঠেছে বর্তমান চিকিৎসাশাস্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।  
শান্তনু দত্ত