উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
সাধারণ মানুষ কতটা জল পান করবেন?
• মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামে জায়গায় থাকে ‘থার্স্ট সেন্টার’ বা তৃষ্ণা কেন্দ্র। শরীরে জলের অভাবে ডিহাইড্রেশন শুরু হচ্ছে মনে হলেই তৃষ্ণার উদ্রেক ঘটে। আমরা তখন জল পান করি। এভাবেই শরীরে প্রতিদিনের জলের চাহিদা মেটে।
সুতরাং প্রত্যেক সুস্থ মানুষকে রোজ নির্দিষ্ট মাত্রায় প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে হবে, এমন কোনও মানে নেই! যাঁর যেমন দরকার, ততটুকু জল পান করলেই চলে। ভিন্ন ভিন্ন মানুষের জলপানের চাহিদা আলাদা হতেই পারে। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। ধরা যাক এক ব্যক্তি অফিসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে কাজ করেন। আর একজন মাঠে ঘাম ঝরিয়ে ফসল ফলান। সুতরাং অফিসবাবু আর কৃষকবন্ধুর রোজকার জল পানের চাহিদা এক হবে না। অতএব, তেষ্টা পেলেই জল পান করুন।
• তৃষ্ণা থাকা সত্ত্বেও জল পান না করলে ডিহাইড্রেশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এক থেকে দুই শতাংশ পর্যন্ত ডিহাইড্রেশন শরীর সহ্য করতে পারে। তা সীমা অতিক্রম করলেই দুর্বল বোধ হয়। মাথা ঘোরে, শরীরে অস্বস্তিভাব দেখা দেয়। তাই শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করার দরকার পড়লে হাতের কাছে অবশ্যই জল রাখুন।
• অনেকের ধারণা, প্রচুর পরিমাণে জল পান করলে ওজন কমে। এই বক্তব্যের স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ নেই। তবে হ্যাঁ, খাবার খাওয়ার আগে জল পান করলে পেট ভরে যাওয়ার অনুভূতি হয়। ফলে বেশি পরিমাণে খাবার খেতে হয় না। শরীরে ক্যালোরি ঢোকে কম। ওজনও বাড়ে না।
• গ্যাস্ট্রোএনটেরাইটিসের রোগীর শরীরে ডিহাইড্রেশন হয়। তাই এই রোগীরা পর্যাপ্ত জল পান না করলে ধীরে ধীরে তাঁর কিডনিতে রক্তপ্রবাহ কমতে শুরু করে। জানলে অবাক হবেন, অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরির বেশিরভাগ কারণ হল গ্যাস্ট্রোএনটেরাইটিস এবং সেই সম্পর্কিত ডিহাইড্রেশন।
• ডিহাইড্রেশন থেকে প্রাথমিক দিকে রিভার্সেবল কিডনি ইনজুরি হয় (অর্থাৎ চিকিৎসা করালে কিডনি পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে)। কিন্তু এই সমস্যার সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে তা কিডনিতে থাকা ছোট্ট ছোট্ট টিউব বা টিবিউলসগুলির ক্ষতি করতে থাকে। এই টিউবগুলির কাজ হল রক্তকে পরিশুদ্ধ করা। তাই ডিহাইড্রেশন হওয়া সত্ত্বেও জল পান না করলে পরিস্থিতি অ্যাকিউট টিবিউলার নেক্রোসিস-এর দিকেও এগতে পারে। এমনকী রোগীর ডায়ালিসিস করার দরকারও পড়তে পারে। মনে রাখবেন, গ্যাস্ট্রোএনটেরাইটিস ছাড়াও ডায়ারিয়া, হিট স্ট্রোক-এর কারণেও আমাদের ডিহাইড্রেশন হতে পারে। আবার দীর্ঘদিন ধরে ডিহাইড্রেশন-এ ভুগলে সেখান থেকে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। মেক্সিকো এবং ভারতের মধ্যপ্রদেশে এমন ডিহাইড্রেশনজনিত ক্রনিক কিডনির অসুখে ভোগা রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
• প্রয়োজনের তুলনায় বেশি জল পান করার বিপদও কম নয়। ‘ওভারহাইড্রেশন’ থেকে দেখা দিতে পারে হাইপোনেট্রিমিয়া। নেট্রিয়াম-এর অর্থ সোডিয়াম। অর্থাৎ ‘ওভারহাইড্রেশন’ থেকে শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়ার সমস্যা। সেক্ষেত্রে শরীর প্রবল দুর্বল হয়ে যায়। রোগী মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে যেতে পারেন। ম্যারাথনে অংশ নেওয়া বহু বিখ্যাত অ্যাথলিট বহুবার এই সমস্যার কবলে পড়েছেন। বেশি জল পান করে ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে গিয়ে তাঁরা উল্টে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ট্র্যাক ছাড়তে হয়েছে।
• আমাদের দেশে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে গড়ে আড়াই থেকে তিন লিটার জল পান করলেই চলবে।
কিডনি রোগী কতটা জল পান করবেন?
দীর্ঘদিনের কিডনির অসুখ দু’ধরনের হয়—
১. যেক্ষেত্রে দেখা যায় রোগীর পা ফুলে আছে, সেক্ষেত্রে বুঝতে হয় রোগীর শরীরে জল বেশি জমতে শুরু করেছে। তাই এমন রোগীকে বেশি মাত্রায় জল পান করার অনুমতি দিলে পা আরও ফুলতে শুরু করবে, শ্বাসকষ্ট শুরু হবে। মাঝরাতে ফুসফুসে জল জমে গেলে ডায়ালিসিস করাতে হাসপাতাল দৌড়তে হবে।
২. আর এক ধরনের ক্রনিক কিডনি ডিজিজের রোগী আছেন, যাঁদের হাত-পা এভাবে ফুলে যায় না। এই ধরনের রোগীর কিডনির টিবিউলগুলি এমনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে, জল বেরিয়ে যায়। এই ধরনের রোগীর জল পান করার মাত্রা কমিয়ে দিলে বিপদ। সেক্ষেত্রে এমন রোগীর শরীরে ক্রিয়েটিনিন-এর মাত্রা বেড়ে যাবে। তাই চিকিৎসককে দেখতে হবে কিডনি রোগী ঠিক কী ধরনের সমস্যায় ভুগছেন। সেই বুঝে জল পানের মাত্রা ঠিক করতে হবে।
• কিছু ক্রনিক কিডনি ডিজিজ-এ ভোগা রোগীর সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ডায়ালিসিস করাতে হয়। রোগীর সাধারণত ইউরিন খুব কম হয়। এমন রোগীর কিডনির কার্যক্ষমতা খুব কম থাকে। কিডনি শরীর থেকে জল বের করতে পারে না। এই ধরনের রোগী জল বেশি পান করলে বিপদ। রোজই তাঁর ডায়ালিসিস করাতে হবে। তাই রোগীকে সারাদিনে তরল গ্রহণের মাত্রা এক লিটারের মধ্যেই রাখতে বলা হয়।
পরিশেষে
অতিরিক্ত জল পান করবেন না। তৃষ্ণা পেলে তবেই জল পান করুন। কিডনি রোগীরা জল পান নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। চিকিৎসকের বলে দেওয়া পন্থায় জল পান করলে দীর্ঘদিন সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব।