উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
ক্ষণস্থায়ী বসন্তের পর গ্রীষ্মকাল প্রায় আগত। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের মধ্যে পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন দেখা যায়। আমাদের চারপাশের গাছপালা, পশুপাখি এমনকী মানবজীবনেও তার প্রভাব পরে। এই সময়ে তিক্ত, কষায় ও কটূ রসের বৃদ্ধি পায় এবং শরীরকে রুক্ষ ও শুষ্ক করে দেয়। ফলে বল হানিও হয়। বিভিন্ন ঋতুতে শরীর ও মনকে সুস্থ রাখার জন্য প্রকৃতি আমাদের কাছে তার অকৃত্রিম সম্পদও সাজিয়ে রেখেছে। গ্রীষ্মের বিভিন্ন ফলমূল যেমন— আম, তরমুজ, ফুটি, লিচু, তাল শাঁস, জাম, বেল, জামরুল, লেবু, নারকেল, ফলসা, পেয়ারা, পেঁপে, তাল, আঙুর, আনারস ইত্যাদি গ্রাম-বাংলায় সহজেই পাওয়া যায়। এগুলি আমাদের শরীরের বলবৃদ্ধি করে। পাশাপাশি পুষ্টি প্রদানও করে।
গরমকালে খাদ্য ও পানীয় কেমন হবে?
গ্রীষ্মকালে মধুর রস, লঘু ও স্নিগ্ধ, শীত ও দ্রবজাতীয় আহার ও পানীয় গ্রহণ করা উচিত। বিভিন্ন ঘরোয়া দেশীয় শরবত যেমন— পাতিলেবু শরবত, আমের পান্না ও কাঁচা আম পোড়ার শরবত, ধনে ও মৌরীর সরবত, গোলাপের শরবত অত্যন্ত উপাদেয়। এগুলি শরীরে তৎক্ষণাৎ শক্তি ও পুষ্টি প্রদান করে। এছাড়া শরীরে ইলেকট্রোলাইসের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে ও সূর্যের প্রখর তাপ থেকে রক্ষা করে।
পাকা ও কাঁচা আম
আমকে আমরা ফলের রাজা বলে থাকি তার স্বাদ ও পুষ্টিগুণের জন্য। আমের আর একটি পোশাকি নাম আছে—‘রসাল’। আম শরীরে রস প্রদান করে যা গ্রীষ্মকালের প্রখর সূর্যালোকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। গরমে পাকা আম অবশ্যই খাদ্যতালিকায় রাখবেন।
কাঁচা আমেরও গুণের শেষ নেই। আম পান্না ও আম পোড়ার শরবত বানাতে কাঁচা আম লাগে। কাঁচা আমের চাটনি শেষ পাতে অবশ্যই যেন থাকে। আম থেকে তৈরি বিভিন্ন আচার, জ্যাম, জেলি ইত্যাদি অত্যন্ত উপকারী। আমের সরবত বানাতে গেলে কাঁচা আমকে টুকরো টুকরো করে কেটে জলে সিদ্ধ করে নেবেন অথবা গোটা আমকে আগুনে ঝলসে নিয়ে শাঁসকে জলে মিশিয়ে তরল করতে হবে। মিশ্রণটিকে ভালো করে ছাঁকনিতে ছেঁকে পরিমাণমতো আখের গুড় বা চিনি, ভাজা জিরে গুঁড়ো, পুদিনাপাতা এবং লবণ মেশাতে হবে। দুপুরে এক গ্লাস করে পান করলে ‘লু’ লাগা বা সান স্ট্রোক থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
বেল, ছাতু: পাকা বেলের শরবত, ছাতুর শরবত, ফলসার শরবতের কোনও জবাব নেই। ২৫০ গ্রাম পাকা ফলসার ফল পরিষ্কার কাপড়ে রেখে হাত দিয়ে ভালোভাবে রস বার করে অল্প চিনি, সৈন্ধব লবণ মিশিয়ে ফলসার শরবত তৈরি করা যায়। ফলসার বিশেষ উপকার আছে যা প্রদাহ, জ্বর ইত্যাদিতে কাজ দেয়।
কেমন হবে ফলের ডায়েট?
গ্রীষ্মকালে আমাদের খাদ্যতালিকায় অতিঅবশ্যই দেশীয় ফলমূলকে প্রাধান্য দিতে হবে। প্রাতঃরাশ বা বৈকালিক আহারের সঙ্গে আম, তরমুজ, ফুটি, জামরুল, পেয়ারা ইত্যাদি থাকলে ভালো। দিনে কমপক্ষে তিন ধরনের ফল খেলে শরীরের স্নিগ্ধতা রক্ষা করা যায়। মধ্যাহ্নভোজনের সঙ্গে পাতিলেবু খাওয়া যেতে পারে। আর শেষ পাতে টক দই থাকতে অগ্ন্যাশয়ের কার্যকারিতাকে ত্বরান্তিত করে। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন শরবত বা পানীয় বা ফলের রস পান করা যেতে পারে।
কী করবেন না?
ঠান্ডা পানীয় যতটা বর্জন করুন। আমদানিকৃত বিদেশি ফলমূল বেশি দামে না খাওয়াই ভালো। সেগুলি কী অবস্থায় আনা হয়েছে, কীভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে আমরা জানি না। দেশীয় সহজলভ্য ফলমূল গ্রহণ করাই বাঞ্ছনীয়। কাটা ফল বা রাস্তার ধারের শরবত পান করবেন না। এতে জলবাহিত রোগ হতে পারে।
কী করবেন
১. প্রতিদিন কমপক্ষে তিন ধরনের ফল খাবেন।
২. দেশীয় সহজলভ্য ফলমূল খাওয়াই ভালো। এতেই প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান হয়।
৩. প্রতিদিন প্রচুর জলপানের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ফলের শরবত পান করা যেতে পারে। বিশেষত পাতিলেবুর শরবত বিশেষ উপকারী।
৪. যে সময়ে যে ফল পাওয়া যায় বা সহজলভ্য, সেই সময়ে সেটাই গ্রহণ করাই ভালো।