উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
বসন্ত ভারী অদ্ভুত ঋতু! দিনেমানে খর রোদ আর বিকেল হলেই হু হু বাতাস। রাত হলেই শিরশিরে ঠান্ডা। ভোরে শীতল অনুভূতি! মোট কথা, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই ঘনঘন আবহাওয়ার পরিবর্তন! বিষয়টা মজাদার হলেও শরীর কিন্তু মোটেও চট করে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না আবহাওয়ার এমন খামখেয়ালিপনার সঙ্গে! তাছাড়া এমন ‘না গরম-না ঠান্ডা’ পরিবেশে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়াও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ফলে দেখা দেয় নানারকম ব্যারাম। তাই বসন্ত যখন জাগ্রত দ্বারে, তখন অসুখবিসুখ সম্পর্কে জেনে নিলে ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা পাকা করে রাখতে পারলে ঋতুখানি মধুর মতোই গড়িয়ে যাবে!
শ্বাসের অসুখ: খেয়াল করে দেখেছেন কী! রাস্তাঘাটে কেমন ধুলো ধোঁয়া বেড়ে গিয়েছে? আসলে শীত বড় শুকনো খটখটে! এদিকে আবার বসন্তে বৃষ্টি হওয়ার কথাও ছিল না কোনওদিন! তবে হ্যাঁ বসন্ত মিলনের ঋতু। তাই হু হু করে পরাগরেণু ভেসে বেড়ায় এই সময় বাতাসে। মুশকিল হল ধুলো, ধোঁয়া, পরাগরেণু বহু মানুষের কাছেই অ্যালার্জির কারণ! বিশেষ করে অ্যাজমার রোগীর কাছে বসন্ত ঋতু ভারী কষ্টদায়ক। বারবার হাঁপের টান ধরে তাদের। আবার ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ-এ (সিওপিডি) আক্রান্ত রোগীর কাছেও বসন্তের ধুলোবালি আর পরাগরেণু বিষবৎ হয়ে ওঠে। সুতরাং সিওপিডি আর অ্যাজমার রোগীরা সাবধানে থাকুন। চিকিৎসকের পরামর্শমতো নিয়মিত ইনহেলার, নেবুলাইজার ব্যবহার করুন।
ডায়ারিয়া: বসন্তের এই সময়ে ঠান্ডা আটকাতে বহু মানুষ সকাল থেকে মাথায় টুপি, গায়ে সোয়েটার পরে থাকেন। আর রাত হলেই টুক করে ঢুকে পড়েন লেপের তলায়। এমনকী ঘাম হলেও খোলেন না টুপি সোয়েটার। গা থেকে সরান না লেপ। ফলে পেট গরম, ডায়ারিয়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে ষোলোআনা! তাছাড়া আবহাওয়ায় শীতলভাব ক্রমশ কমে যাওয়ার কারণে অনেকে খাবারও সঠিকভাবে সংরক্ষণ করেন না। ফলে দীর্ঘসময় ফেলে রাখা খাবারে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়ে যায় চট করে। সেই খাবার খেয়ে পেট খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। তাই বসন্তকালে বাসি খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার। বিশেষ করে এখন গ্রামে ও শহরে নানা অনুষ্ঠান মেলার মরশুম। মেলায় বেড়াতে গিয়ে বাইরের খাবার খাওয়া ও সেখান থেকে ডায়ারিয়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা একেবারে এড়ানো যায় না। এই প্রসঙ্গেই জানিয়ে রাখি, কারও ডায়ারিয়া হলে তাকে নুন ও চিনি মেশানো জল বা ওআরএস বারবার খাওয়াতে পারেন। সাধারণত এক লিটার জলে এক প্যাকেট ওআরএস মিশিয়ে খাওয়াতে হয়। আর পথ্য হিসেবে সহজপাচ্য আলুসেদ্ধ, ভাত খাওয়ানোই ভালো। একবাটি দই রাখাও যেতে পারে।
চিকেন পক্স: ‘ভ্যারিসেলা ভাইরাস’-এর সংক্রমণের কারণে হতে পারে চিকেন পক্স। চিকেন পক্স খুব ছোঁয়াচে অসুখ। এই অসুখে সারা শরীরে ছোট ছোট লালচে ফোসকার মতো ফুসকুড়ি বা র্যাশ দেখা যায়। সঙ্গে থাকে প্রবল জ্বর আর মাথা ব্যথা। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল, ত্বকে চুলকানির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ, আর ক্যালামাইন লোশন ইত্যাদি ব্যবহার করলেই শারীরিক উপসর্গজনিত কষ্ট কমে আসে সাত দিনেই। তবে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে ১৪ দিন সময় লাগে। তাই পুরোপুরি ভালো না হওয়া পর্যন্ত রোগীকে হাওয়া-বাতাস খেলা করে এমন ঘরে রাখুন। রোগীর ব্যবহার্য জিনিসপত্রও আলাদা করুন। ভ্যারসেলা ভ্যাকসিন নেওয়া নেই বা যার আগে চিকেন পক্স হয়নি এমন ব্যক্তিকে রোগীর ঘরে ঢুকতে না দেওয়াই ভালো। আর হ্যাঁ, রোগীকে সব ধরনের খাবার খাওয়াবেন। বিশেষ করে এই সময়ে শরীর খুব দুর্বল হয়ে যায়। তাই প্রোটিননির্ভর খাবার খাওয়ানো দরকার। আর যত দ্রুত সম্ভব যাঁদের চিকেন পক্সের টিকা নেওয়া নেই, তাঁরা টিকা নিয়ে নিন।
সাধারণ সর্দি-কাশি: আবহাওয়া পরিবর্তন হলে সর্দি-কাশিতে ভোগার আশঙ্কা বাড়বেই। বিশেষ করে বাচ্চা বড় সকলের এই সময় ঠান্ডা জল, আইসক্রিম ইত্যাদি খাওয়ার কারণে গলা ব্যথা, কাশি, সর্দিতে ভুগতে দেখা যায়। কাজকর্ম, পড়াশোনা শিকেয় ওঠে। ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ, সঙ্গে অ্যান্টি হিস্টামিনজাতীয় ওষুধ ও ঈষদুষ্ণ জলে নুন ফেলে গার্গেল করলেই কাজ হয়। তবে অনেকসময় গলায় ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণও হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সাধারণ ওষুধে কাজ না হলে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হতে পারে।
করোনা: একটাই কথা বলা দরকার। করোনা সংক্রমণ এখনও বন্ধ হয়নি। তাই বাড়ির বাইরে বেরলে সর্বক্ষণ মুখে মাস্ক আর হাতে স্যানিটাইজার দিন। বাড়ির বাইরে থেকে ফিরে সাবানজল দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। হালকা জ্বর, গলা ব্যথা, সর্দি কোভিডেরও প্রাথমিক লক্ষণ। তাই এই ধরনের লক্ষণে সতর্ক থাকুন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ওষুধ খান। পরিবারের বাকিদেরও সতর্ক থাকতে বলুন।
ডায়েট
খাবার তালিকায় প্রচুর টাটকা শাকসব্জি রাখুন। খেতে পারেন আপেল, কমলালেবু, ন্যাশপাতি, পেয়ারা। এই ধরনের ফলে পর্যাপ্ত ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।