উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
একজনের কাছে সমস্যাই নয়। একেবারে সাধারণ। এমন সমস্যাই যখন অন্যজনের শারীরিক অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাকে চিকিৎসাশাস্ত্রে অ্যালার্জি বলা হয়।
উদাহরণ দেওয়া যাক। মোটামুটি প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে ডিম খাওয়ার চল রয়েছে। বেশিরভাগ মানুষ অনায়াসে এই সুখাদ্য হজম করতে পারেন। কোনও সমস্যাই হয় না। কিন্তু, কিছু কিছু মানুষের আবার ডিম খেলে শারীরিক অস্থিরতা দেখা দেয়। হতে পারে পেট ব্যথা, গায়ে চাকাচাকা দাগ, চুলকানি ইত্যাদি। সবগুলিই অ্যালার্জির লক্ষণ। এক্ষেত্রে অ্যালার্জির কারণ হল ডিম। অর্থাৎ আমার-আপনার সাধের ডিম কারও কাছে হয়ে উঠল ‘ভিলেন’!
অ্যালার্জি আক্রান্তদের নির্দিষ্ট কিছু দ্রব্যে হাইপারসেনসিটিভিটি বা অতিস্পর্শকাতরতা থাকে। নির্দিষ্ট খাদ্যদ্রব্য বা জিনিস শরীরে প্রবেশ করলে বা সংস্পর্শে এলে দেহের অভ্যন্তরীণ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অন্যতম উপাদান ইমিউনোগ্লোবিউলিনের পরিমাণে তারতম্য ঘটে। ফলে শরীরে নানা উপসর্গ দেখা দেয়।
কী থেকে অ্যালার্জি?
মোটামুটি তিন ধরনের অবস্থায় অ্যালার্জি হয়—
এক, কোনও নির্দিষ্ট খাদ্যবস্তু গ্রহণ করলে। দুই, শ্বাসনালীতে কিছু প্রবেশ করলে। তিন, নির্দিষ্ট কিছুর সংস্পর্শ থেকে।
ডিম, চিংড়ি, কাঁকড়া, বিভিন্ন ধরনের মাংস, বেগুন সহ বিভিন্ন খাদ্যে মানুষের অ্যালার্জি থাকতে পারে।
ধুলো, ধোয়া, পোলেন, পোষ্যের লোম, সেন্টের গন্ধ ইত্যাদি নাকে-মুখে ঢুকেও অ্যালার্জি হতে পারে।
সিন্থেটিক জামাকাপড়, মুখে-গায়ে মাখার ক্রিম, স্যানিটাইজার, সূর্যের আলো— প্রায় সব কিছুর সংস্পর্শ থেকেই অ্যালার্জি হতে পারে।
কিছু ওষুধ, ইঞ্জেকশন এবং টিকা থেকেও মানুষের অ্যালার্জি হতে দেখা গিয়েছে।
লক্ষণ
নির্দিষ্ট কিছু খাওয়ার পর পেটে ব্যথা, গায়ে র্যাশ বা চুলকানি হলে
ধুলো, ধোঁয়া, পোষ্যের লোম, কোনও গন্ধের সংর্স্পশে আসার পরই হাঁচি হলে, জ্বর জ্বরভাব দেখা দিলে বা শ্বাসকষ্ট হলে
নির্দিষ্ট কাপড় পরলে, কোনও প্রসাধনী বা অন্য কিছু ত্বকের সংস্পর্শে আসার পর র্যাশ বেরলে, লাল হলে, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি শুরু হলে, তা অ্যালার্জির উপসর্গ।
চিকিৎসা
হোমিওপ্যাথিতে অ্যালার্জির দারুণ চিকিৎসা রয়েছে। এক্ষেত্রে সমস্যাকে একেবারে গোড়া থেকেই তুলে ফেলা সম্ভব। তবে চিকিৎসার প্রাথমিক পর্যায়ে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী জিনিসগুলি এড়িয়ে চলতে হবে। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নির্বাচনের সময় রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিকে লক্ষ রাখতে হয়। হোমিওপ্যাথিতে মূলত দুই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এক, রোগীর তাৎক্ষণিক সমস্যা নিবারক ওষুধ। অর্থাৎ রোগীর এখন হাঁচি-কাশি হচ্ছে, তা কমানোর ওষুধ। দুই, কনস্টিটিউশনাল মেডিসিন। এক্ষেত্রে রোগটিকে নির্মূল করার ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
তাৎক্ষণিকভাবে অ্যালার্জির সমস্যা কয়েকটি ওষুধ হল—
১. হঠাৎ করে হাঁচি-কাশি হচ্ছে, র্যাশ বেরল ইত্যাদি লক্ষণে আর্সেনিক ওষুধটি দারুণ কাজ করে। ২. রোদ লেগে আমবাতের মতো বেরলে ন্যাট্রাম মিউর ওষুধটি ভালো কাজ করে। ৩. নাকে-মুখে ধুলো ঢোকার পর প্রথমে সর্দি, তারপর হাঁপানি শুরু হলে প্রোথোস ওষুধটি কার্যকরী। ৪. অ্যালার্জি থেকে নাক দিয়ে জলের মতো সর্দি গড়ালে, সঙ্গে কাশি এবং জ্বরজ্বরভাব বা জ্বর রয়েছে— এইসব লক্ষণে ডালকামারা ভালো কাজ করে। ৫. অ্যালার্জি থেকে হাঁচি হচ্ছে, সঙ্গে জ্বরজ্বর ভাব, গলা খুসখুস এবং নাক শুষ্ক থাকলে ব্রায়োনিয়া ওষুষটি খেলে উপকার মেলে। ৬. খাবার খেয়ে আমবাত বা অ্যালার্জির সমস্যা হলে আর্টিকা ইউরেন্স ওষুধটি কার্যকরী। এছাড়াও বহু ধরনের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে। সেই সকল সমস্যার জন্য একজন চিকিৎসকের পরামর্শ মতো নির্দিষ্ট ওষুধ খেতে হবে। নিজে থেকে ওষুধ কিনে খেলে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। তাই সমস্যা দেখা দিলেই চটজলদি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লিখেছেন সায়ন নস্কর