উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
আমাদের দেহে কোনও রোগজীবাণু প্রবেশ করলে দেহের শ্বেতকণিকা তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে শুরু করে। রক্তে শ্বেতকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। রোগজীবাণু মাত্রই ক্ষতিকর পদার্থ সবাই জানেন। তবে কোনও কোনও ব্যক্তির শরীরে রোগজীবাণু ছাড়াও আপাতভাবে সাধারণ কিছু বস্তু প্রবেশ করলেও রক্তে শ্বেতকণিকার মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ওই ব্যক্তির শরীর নানাভাবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। এই প্রতিক্রিয়া হতে পারে ডায়ারিয়া দেখা দেওয়া, হাঁপানি বা অ্যাজমা শুরু হওয়া, নাক দিয়ে জল পড়া, হাঁচি, কাশি, ত্বকে র্যাশ বেরনো, একজিমা হওয়ার মতো সমস্যা ইত্যাদি। এইভাবে কোনও নির্দিষ্ট বা একাধিক বস্তুর প্রতি শরীরের এই ধরনের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করাকেই ‘অ্যালার্জি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
অ্যালার্জি হয় এমন বস্তুর তালিকায় রয়েছে—
এক বা একাধিক খাদ্যবস্তু, ওষুধ, ফুলের রেণু, পোষ্যের লোম, ধুলো-ধোঁয়া, ডিটারজেন্ট পাউডার ইত্যাদি। সাধারণত যে বস্তু থেকে অ্যালার্জি বেশি হয়, সেগুলি নিয়েই আলোচনা করা হল।
খাদ্য: দেখা গিয়েছে কোনও কোনও ব্যক্তির ডিম খেলেই পেটে ব্যথা, বমি, ডায়ারিয়ার মতো সমস্যা তৈরি হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে আবার চিংড়ি কিংবা কাঁকড়া খেলে এমন সমস্যা হয়। এমনকী গায়ে আমবাতের মতো বেরতে পারে। কিছু মানুষের ডায়ারিয়া হয় দুধ কিংবা দুগ্ধজাত খাদ্যদ্রব্য খেলে। বেগুন, পোস্ত, সর্ষের মতো খাদ্য থেকেও অ্যালার্জি হতে পেতে পারে। এক্ষেত্রে বুঝতে হবে, ওই ব্যক্তির ওই নির্দিষ্ট খাদ্যবস্তুতে অ্যালার্জি রয়েছে।
ধুলো-ধোঁয়া: ঘর ঝাঁট দেওয়া, লেপ-কম্বল ঝাড়ার মতো কাজ করার সময় বা ধূপ ও উনুনের ধোঁয়ার নাকে ঢোকার পরেই হাঁচি পড়তে শুরু করা, কাশি হওয়া, নাক দিয়ে জল পড়া, হালকা জ্বর আসা, চোখ-মুখ লাল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা শুরু হলে বুঝতে হবে ওই ব্যক্তির ধুলো-ধোঁয়া থেকে অ্যালার্জি আছে।
ড্রাগ অ্যালার্জি: সবচাইতে ক্ষতিকর হল ড্রাগ অ্যালার্জি। সময়ে ড্রাগ অ্যালার্জি না বুঝতে পারলে তা ভয়ঙ্কর আকার নিতে পারে। ড্রাগ অ্যালার্জি থাকলে ত্বকে আমবাতের মতো বেরনো, শ্বাসনালীতে প্রদাহ হওয়া ও শ্বাসনালী ফুলে সরু হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এমনকী শুরু হতে পারে তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যাও। চিকিৎসা পরিভাষায় এই সমস্যাকে বলে অ্যানাফাইলেক্সিস। অ্যানাফাইলেক্সিস অন্যান্য বস্তু থেকেও হতে পারে। তবে ড্রাগ বা ওষুধ থেকে বেশি হয়। এই কারণে এখন চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশনে ওষুধ লেখার আগে রোগীর কাছে জানতে চান যে তাঁর কোনও ওষুধে অ্যালার্জি রয়েছে কি না!
সাধারণত দেখা গিয়েছে মেট্রোজিল গ্রুপের ওষুধ, সালফার ড্রাগ বা পেনিসিলিন, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, প্যারাসিটামল ছাড়া অন্যান্য বেদনানাশক ওষুধ, সাইকিয়াট্রিক ড্রাগ যেমন লিথিয়াম, টিবির ওষুধ, এইচআইভি-এর ওষুধ থেকেও অ্যালর্জি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তবে অ্যনান্য ওষুধ থেকেও অ্যালার্জি হতে পারে। তাই কোনও ওষুধ খেয়ে শরীরে অস্বস্তি শুরু হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
রাসায়নিক পদার্থ, ডিটারজেন্ট: কিছু মানুষের ত্বকের যে কোনও জায়গাতেই ডিটারজেন্ট বা রং বা অন্য কোনও রাসায়নিক পদার্থ লাগালে সেখানে একজিমা, চুলকানির মতো সমস্যা দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে ওই ব্যক্তির ডিটারজেন্ট বা রাসায়নিক থেকে অ্যালার্জি রয়েছে।
পোষ্যের লোম, পাখির পালক: বাড়িতে অনেকেই কুকুর, বিড়াল, পাখি পোষেন। এই ধরনের পোষ্যের লোম ও পালকের অংশ থেকে হাঁচি, কাশি, শ্বাস কষ্ট বা অ্যাজমার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কারণ পশুর লোম শরীরে ‘ফরেন বডি’-এর মতো কাজ করে। তাই বাড়িতে কুকুর, বেড়াল, পাখি বা অন্য কোনও পোষ্য থাকলে এবং পরিবারের কারও শ্বাসকষ্ট শুরু হলে সতর্ক হন।
ফুলের রেণু: কিছু নির্দিষ্ট ঋতুতে, বিশেষত বসন্তকালে ফুলের পরাগ রেণু বাতাসে ভেসে শরীরে প্রবেশ করলেও অনেকের হাঁপানি শুরু হতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর উচিত এই ঋতুতে নাকে-মুখে মাস্ক পরে থাকা।
পরীক্ষা
আদৌ অ্যালার্জি থেকেই সমস্যা হচ্ছে কি না জানতে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ইউসিনোফিল কাউন্ট করা হয়। ইউসেনোফিল কাউন্ট বাড়লে বুঝতে হবে রোগীর সত্যিই অ্যালার্জি রয়েছে। এছাড়া ‘আইজিই’ রক্ত পরীক্ষা করিয়ে যদি দেখা যায় রক্তে এর মাত্রা বেশি রয়েছে, তাহলেও বুঝতে হবে রোগীর অ্যালার্জি রয়েছে। এরপর দেখতে হয় রোগীর কোন বস্তুতে অ্যালার্জি রয়েছে।
ড্রাগ অ্যালার্জি থাকলে দেখতে হয় কোন কোন গ্রুপের ড্রাগ থেকে অ্যালার্জি রয়েছে। সেক্ষেত্রে সাধারণত যে সমস্ত ওষুধ থেকে অ্যালার্জি বেশি হতে দেখা গিয়েছে, সেই সব গ্রুপের ড্রাগ খুব সামান্য মাত্রায় রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হয়। কোন গ্রুপের ওষুধে রোগীর শরীরে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে, তা লিপিবদ্ধ করা হয়।
এছাড়া স্কিন প্রিক টেস্টে হাউজ ডাস্ট, পশুপাখির লোম খুব অল্প পরিমাণে ত্বকে প্রবেশ করিয়ে দেখা হয়, রোগীর এই সমস্ত বস্তুতে অ্যালার্জি আছে কি না!
কোন কোন বস্তুতে অ্যালার্জি আছে, তা কিছু রক্ত পরীক্ষাতেও ধরা পড়তে পারে।
চিকিৎসা
১. যে বস্তুতে অ্যালার্জি রয়েছে, তা এড়িয়ে চলা। তবে অনেকসময় অ্যালার্জির উৎস বোঝা যায় না। সেক্ষেত্রে রোগীকে একটানা কয়েকদিন অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ খেয়ে যেতে বলা হয়।
২. হাতের কাছে একটি খাতা কলম ও অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ রাখতে বলা হয়। কোন পরিস্থিতিতে বা কী খাওয়ার পর অ্যালার্জির উপসর্গ দেখা দিচ্ছে, খাতায় তা লিখে রাখতে বলা হয়। হাতের কাছে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ থাকলে হঠাৎ অ্যালার্জি অ্যাটাকে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। ৩. যাঁদের অ্যালার্জি থেকে দম বন্ধ হয়ে আসে, তাঁদের উচিত সঙ্গের ব্যাগে সবসময় অ্যাড্রিনালিন ইঞ্জেকশন রাখা। একবার শিখে নিলে এই ইঞ্জেকশন রোগী নিজেই নিতে পারেন। তাই ভয় পাবেন না। অ্যালার্জি থাকলেও সচেতন হলে সুস্থভাবে জীবন কাটানো সম্ভব হয়।
লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক